রোনালদো জানালেন, মেসির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মানুষের ভাবনার বিপরীত

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মধ্যে এ শব্দই সবার আগে উঠে আসে ফুটবলপ্রেমীদের মনে। কিন্তু তাঁদের নিজেদের কী ভাবনা? সম্পর্ক কি আসলেই এতটা বৈরী? স্পেনের সাংবাদিক এদু আগুইয়েকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন রোনালদো।

এ সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্ত ক্লিপ প্রকাশ করা হয়েছে স্পেনের ‘এল চিরিনগুইতো টিভি’র হ্যান্ডল থেকে। আগামী সোমবার স্পেনের ফ্রি-টু-এয়ার টিভি চ্যানেল ‘লা সেক্সতা’য় সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হবে। সেই ছোট ক্লিপেই মেসির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে দেখা যায় আল নাসর তারকাকে।

আরও পড়ুন

মেসি ও রোনালদোর দুই দশকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটবল ইতিহাসেই অন্য মাত্রা যোগ করেছে। রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে এবং মেসি বার্সায় থাকতে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিভক্তও হয়ে পড়েছিল ফুটবল–বিশ্ব। সময়ের পালাবদলে তাঁরা এখন অন্য ক্লাবে। রোনালদো সৌদি প্রো লিগের দল আল নাসরে, মেসি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল ইন্টার মায়ামিতে। ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মেসি আটবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন, রোনালদো জিতেছেন পাঁচবার। স্প্যানিশ ফুটবলে থাকতে এল ক্লাসিকোয় তাঁদের দ্বৈরথ এখনো ফুটবল–সমর্থকদের রোমান্টিক করে তোলে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, মহাকাব্যিক এই দ্বৈরথের কেন্দ্র আসলেই বৈরী সম্পর্ক, নাকি প্রতিযোগিতাটা শুধুই ফুটবলীয়? এমনিতে প্রচলিত গুঞ্জন হলো, দুই কিংবদন্তির মধ্যে সম্পর্কটা তেমন একটা উষ্ণ নয়। বেশ ফাটলও আছে। রোনালদো এ নিয়ে যা বলেছেন, তাতে ভুলটা ভাঙতে পারে সমর্থকদের, ‘(মেসির সঙ্গে) আমার কখনো খারাপ সম্পর্ক ছিল না। যা ভাবা হয়, আসলে তার বিপরীত।’

লা লিগায় তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন মেসি ও রোনালদো
রয়টার্স

ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে মেসি ও রোনালদোর অর্জন বিস্ময়কর। জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকা জেতা মেসি ক্লাব ক্যারিয়ারেও এমন কোনো শিরোপা নেই যে জেতেননি। রোনালদো বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও পর্তুগালের হয়ে জিতেছেন ইউরো। আর ক্লাব ফুটবলেও প্রায় সব রকম শিরোপাই জিতেছেন। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে তাঁর গোলসংখ্যা ৯২১। প্রশ্ন করা হয়েছিল, ৩৭ বছর বয়সী মেসি ও ৩৯ বয়সী রোনালদোর এত সব অর্জন পরবর্তী প্রজন্ম ছুঁতে কিংবা টপকে যেতে পারবে কি না।

আরও পড়ুন

পর্তুগিজ কিংবদন্তির উত্তর, ‘সেটাই আশা করি। ফুটবলের জন্য সেটা দারুণ হবে, কিন্তু কাজটা কঠিন হবে।’ রোনালদোর পুরো সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পর নিশ্চয়ই মেসির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তাঁর মুখ থেকে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। আপাতত সাক্ষাৎকারের ছোট ক্লিপে এটুকুই জানা গেছে।

মেসির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এর আগেও জানতে চাওয়া হয়েছিল রোনালদোর কাছে। ২০২৩ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয়, মেসির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে ‘ঘৃণা’র অস্তিত্ব আছে কি না। রোনালদো বলেছিলেন, ‘আমি ব্যাপারটি এভাবে দেখি না। দ্বৈরথের ইতি ঘটেছে। এটা ভালো ছিল, সমর্থকেরা পছন্দ করেছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে যারা ভালোবাসে, তাদের মেসিকে ঘৃণা করতে হবে না। আমরা দুজনেই খুব ভালো, ফুটবলের ইতিহাস পাল্টে দিয়েছি।’

অষ্টম ব্যালন ডি’অর জয়ের পর ‘ফ্রান্স ফুটবল’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসিও কথা বলেছিলেন রোনালদোর সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ নিয়ে, ‘ব্যাপারটা সব সময় যুদ্ধ ছিল। মাঠে আমরা একে অপরের ভালো করার চেষ্টার উপলক্ষ হয়েছি। কারণ, আমরা দুজনেই খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। সে সবকিছু ও সবাইকে জিততে চেয়েছে। ফুটবল যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এবং আমাদের জন্যও সময়টা দারুণ ছিল। আমি মনে করি, আমরা যেটা করেছি, সেটা প্রশংসার দাবিদার। শীর্ষে ওঠা সহজ, কিন্তু কঠিন কাজটা হলো সেখানে টিকে থাকা। আমরা ১০-১৫ বছর শীর্ষে ছিলাম। অসাধারণ ছিল সেই সময়টা, ফুটবল যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের জন্যও।’

২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে যোগ দেন রোনালদো। সেখান থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরলেও বেশি দিন থাকেননি। ২০২৩ সালে ইউনাইটেড ছেড়ে যোগ দেন আল নাসরে। মেসি ২০২১ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে যোগ দেন পিএসজিতে। দুই বছর সেখানে থাকার পর ২০২৩ সালে যোগ দেন মায়ামিতে।