মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের মুখোমুখি বসুন্ধরা কিংস। আগামীকাল সন্ধ্যা ছয়টায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় শুরু হবে এএফসি কাপের এই ম্যাচ। পরের রাউন্ডে যেতে এই ম্যাচের তিন পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ কিংসের কাছে। পয়েন্ট হারালে পরের রাউন্ডে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
এমন সমীকরণের ম্যাচের আগে চোট সমস্যায় ভুগছে কিংস। দলের প্লেমেকার রবসন দা সিলভা সম্ভবত এই ম্যাচ খেলতে পারছেন না। ৭ নভেম্বর ঢাকায় মোহনবাগান ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। চোট আছে আইভরি কোস্টের মিডফিল্ডার দিদিয়ের চার্লসেরও। তবে চার্লসের চেয়ে দলে রবসনের গুরুত্ব অনেক বেশি। গোল যেমন করেন, গোল করাতেও ভালোবাসেন তিনি।
আজ গোটা দল কিংস অ্যারেনায় একদিকে যখন অনুশীলনে ব্যস্ত, অন্য পাশে একাকী হালকা দৌড়ে গা গরম করছিলেন রবসন। অনুশীলনের আগে কিংস অ্যারেনাতেই সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক রবসন যাননি। কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোনের সঙ্গী হয়েছেন মিডফিল্ডার সোহেল রানা। আর সংবাদ সম্মেলনে সোহেল বললেন, ‘কোচের হাতে বিকল্প আছে। আমরা আশা করি, ওরা দুজন না খেললেও কোনো সমস্যা হবে না। কোচ আমাদের নিয়ে কাজ করছেন। পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। কোচের পরিকল্পনামতো খেলতে পারলে ম্যাচ থেকে আমরা ৩ পয়েন্ট নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’
আমরা দলের কোনো তথ্য বাইরে বলব না। রবসন আমাদের অধিনায়ক, খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ম্যাচ শুরুর আগপর্যন্ত সময় আছে, দেখা যাক। আমরা তো ঘরের মাঠে খেলব। অনেক কিছু আমাদের পক্ষে থাকবে।
তবে প্রতিপক্ষ মালদ্বীপের মাজিয়া যেন কিংসের চোট সমস্যার কথা জেনে না যায়, সেদিকে সতর্ক ব্রুজোন। সংবাদ সম্মেলনে রবসনকে নিয়ে প্রশ্নে তাঁর কৌশলী উত্তর, ‘আমরা দলের কোনো তথ্য বাইরে বলব না। রবসন আমাদের অধিনায়ক, খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ম্যাচ শুরুর আগপর্যন্ত সময় আছে, দেখা যাক। আমরা তো ঘরের মাঠে খেলব। অনেক কিছু আমাদের পক্ষে থাকবে।’
২১ নভেম্বর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ দল লেবাননের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে এই মাঠেই। বাংলাদেশ দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই কিংসের। দলটির বড় শক্তি ঘরের মাঠ, যেখানে ঘরোয়া বা আন্তর্জাতিক সব স্তরেই তারা অপরাজিত। আর সেই কিংসের অপরাজিত থাকার ধারাটা কি ভেঙে দিতে পারবে মাজিয়া? সংবাদ সম্মেলনে মাজিয়ার কোচ মিলোমির সেসলিয়া সোজা ব্যাটে খেললেন প্রশ্নটা। যুগোস্লাভিয়ার সাবেক পেশাদার ফুটবলার বলে দেন, ‘ঘরের মাঠে কিংসের অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিশ্চয়ই ভাঙতে পারে। সেটা যে কাল হবে না, আপনি বলতে পারেন না।’
মাজিয়া কোচের কথা ফলে গেলে বড় ধাক্কাই লাগবে কিংসের স্বপ্নে। এবারের আগে এএফসি কাপের প্রথম দুই আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল দলটি। এবার কিংসের অবস্থান ভালো। ৪ ম্যাচে কিংস ও মোহনবাগানের সমান ৭ পয়েন্ট। মুখোমুখি লড়াইয়ে মোহনবাগানকে হারানোয় শীর্ষে কিংস। বাকি দুটি ম্যাচ জিতলে কিংস চলে যাবে আঞ্চলিক সেমিফাইনালে। গ্রুপের বাকি দুই দল ওডিশা এফসির পয়েন্ট ৬ ও মাজিয়ার ৩। কিংসকে হারিয়ে দারুণ শুরু করেও টানা তিন হারে মাজিয়া এখন তলানিতে। দলটির জন্য কাল টিকে থাকার লড়াই।
এই মাজিয়ার কাছেই মালেতে ১৯ সেপ্টেম্বর ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে এবারের টুর্নামেন্ট শুরু করে কিংস। ফলে কাল ঘরের মাঠে কিংসের প্রতিশোধের ম্যাচও। দুই মাস আগের সেই বাজে হারের পর ঘরের মাঠে কিংস হারিয়েছে মোহনবাগান ও ওডিশাকে। মোহনবাগানের সঙ্গে অ্যাওয়ে ম্যাচ ড্র করেছে। ঘরের মাঠে ব্রুজোন চোখ রাখছেন তিন পয়েন্টেই, ‘দুই মাস আগে মাজিয়া আমাদের চেয়ে ভালো খেলে জিতেছে। কিন্তু আমরা নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিতে পেরেছি এই সময়ে। এটাই আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে।’
মাজিয়া কোচও জয়ের কথাই বলেছেন। তাঁর চোখে, ৪ দলের গ্রুপে বসুন্ধরা কিংস অন্যতম সেরা দল। ভালো দলের সঙ্গে ভালো খেলা চেষ্টা থাকবে জানিয়ে তাঁর কথা, ‘এটি নতুন ম্যাচ, নতুন চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এসেছি। একই সঙ্গে আমরা তাদের হারাতেই এসেছি।’
মালদ্বীপ জাতীয় দলের ৮০ ভাগ খেলোয়াড়ই মাজিয়ার। যেমনটা কিংসের বেশির ভাগই খেলেন জাতীয় দলে। ফলে কালকের ম্যাচটাকে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ লড়াই বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। মাজিয়ার ফুটবলাররা দূরপাল্লার শট নিতে অভ্যস্ত। প্রতি আক্রমণে দ্রুত উঠতে পারেন। এটাই বড় ভয়ের কারণ কিংসের জন্য। মাজিয়ার অন্যতম ফুটবলার মোহাম্মদ ইরফান আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা গত তিনটি ম্যাচে ভালো করতে পারিনি। তবে কিংসকে হারিয়ে আবার ফিরতে চাই জয়ের ধারায়।’