বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুমকি মারুফুলের

সাফ অনূর্ধ্ব–২০ টুর্নামেন্টের ট্রফি হাতে কোচ মারুফুল হকবাফুফে

এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ বাছাইপর্বের জন্য বাংলাদেশ দলে খেলোয়াড় ছাড়ার বিষয়ে এ মুহূর্তে মুখোমুখি অবস্থানে বসুন্ধরা কিংস ও অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচ মারুফুল হক। কোচ ভিয়েতনামগামী দলে কিংসের ৬ ফুটবলারকে ডাকলেও সেখানে ক্লাব চোট ও নিজেদের অনুশীলনের কারণ দেখিয়ে ২ জনকে ছেড়েছিল ক্লাবটি। কিন্তু মারুফুল হক সেই ২ জনকে অনুশীলনে যোগ দেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ কিংস আজ বাফুফেকে একটি কড়া চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, মারুফুল কোচ থাকলে তাঁরা নিজেদের কোনো খেলোয়াড়কেই সেই দলের জন্য ছাড়বে না। কোচের আচরণকে ‘অসৌজন্যমূলক’ বলেও চিঠিতে উল্লেখ আছে।

এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন মারুফুল হক। তিনি সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন, ‘একটি বয়সভিত্তিক জাতীয় দল সাফ অঞ্চলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পর যেখানে মোহামেডান, আবাহনী, বাংলাদেশ পুলিশ নিজেদের খেলোয়াড়দের বিষয়ে কোনো আপত্তি না জানিয়ে তাদের খেলোয়াড়দের দেশের পক্ষে জান উজাড় করে খেলার জন্য উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে, সেখানে বসুন্ধরা কিংস কীভাবে নিজেদের খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে খেলার বিষয়ে মিথ্যা অজুহাত দিয়ে দূরে রাখে?’

একজন বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের কোচের আচরণবিধি কেমন হবে, তিনি সেটি লঙ্ঘন বা অমান্য করেছেন কি না, সেটি কি কোনো ক্লাব বলার এখতিয়ার রাখে?
মারুফুল হক, কোচ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ দল

বসুন্ধরার অভিযোগ ও বাফুফেকে লেখা তাদের চিঠিকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে মারুফুলের ভাষ্য, ‘একটি জাতীয় দলে কারা খেলবে, কারা অন্তর্ভুক্ত হবে, সেটি নির্ধারণ করবেন হেড কোচ। মূল স্কোয়াড থেকে কোনো খেলোয়াড়কে বাদ দিলে সেটা অসৌজন্যমূলক আচরণ হয়, এমন নজির আমার কর্মজীবনে কোথাও দেখি নাই।’

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ দলের কোচ মারুফুল হক
প্রথম আলো

বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন দেশকে কিছুদিন আগেই অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানো এই কোচ, ‘একজন বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের কোচের আচরণবিধি কেমন হবে, তিনি সেটি লঙ্ঘন বা অমান্য করেছেন কি না, সেটি কি কোনো ক্লাব বলার এখতিয়ার রাখে? বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমাকে সবার সামনে হেয় করার যে প্রয়াস, আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ধরনের বক্তব্য যদি বসুন্ধরা কিংস কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহার না করে, তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’

৪ সেপ্টেম্বর থেকে অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ দল। মারুফুল হকের প্রাথমিক স্কোয়াডে কিংসের যে ৬ জন খেলোয়াড় ছিলেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ২ জন যোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ কোচ, তাঁদের অনুশীলন করতে দেননি। ব্যাপারটি ভালোভাবে নেয়নি কিংস কর্তৃপক্ষ। মারুফুল হক আজ তাঁর প্রতিবাদপত্রে জানিয়েছেন, এএফসির কাছ থেকে দল ঘোষণার ডেডলাইন ঘনিয়ে আসাতেই অনুশীলনে যোগ দেওয়া কিংসের দুই খেলোয়াড় মহসিন ও আসিফকে বাদ দিতে হয়েছে। তিনি ২৩ জনের স্কোয়াডে অপেক্ষাকৃত ম্যাচ ফিট খেলোয়াড়দেরই রেখেছেন বলে দাবি করেছেন।

আরও পড়ুন
আমি অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচের পদ থেকে সরে গেলে, বসুন্ধরা কিংস যদি তাদের খেলোয়াড়দের ছাড় দেয়, তবে আমার দেশের ফুটবলের স্বার্থে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে কোয়ালিফাই করার স্বার্থে, আমি অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচের পদ ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।
মারুফুল হক, কোচ, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ দল

এর আগে আজ বাফুফেকে পাঠানো এক চিঠিতে মারুফুল কোচের দায়িত্বে থাকলে নিজেদের কোনো খেলোয়াড়কে ক্যাম্পে না পাঠানোর হুমকি দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। তাদের কথা, কয়েকজন খেলোয়াড় চোটে আক্রান্ত, সেই সঙ্গে নতুন রোমানিয়ান কোচ ভ্যালেরি তিতার অধীনে চলছে দলটির প্রাক্‌-মৌসুম অনুশীলন ও প্রস্তুতি। সে কারণেই ধাপে ধাপে খেলোয়াড় ছাড়তে চেয়েছিল তারা।

মারুফুলের কোচিংয়েই সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে বাংলাদেশের যুবারা
বাফুফে

মারুফুল তাঁর প্রতিবাদপত্রের এক জায়গায় বলেছেন, ‘আমি কখনো কোনো ক্লাব বা জাতীয় দলের কোচের পদের জন্য লালায়িত নই। আমি অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচের পদ থেকে সরে গেলে, বসুন্ধরা কিংস যদি তাদের খেলোয়াড়দের ছাড় দেয়, তবে আমার দেশের ফুটবলের স্বার্থে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে কোয়ালিফাই করার স্বার্থে, আমি অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচের পদ ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

আরও পড়ুন