কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন আন্দ্রে ক্রামারিচ, লুকা সুচিচসহ বদলি ও বেঞ্চের খেলোয়াড়েরা। রেফারির বাঁশি বাজবে, আর শেষ ষোলোয় ওঠার আনন্দে সবাই ছুটে যাবেন মাঠের ভেতরে। ওদিকে গ্যালারি থেকে ক্রোয়াট সমর্থকদের আওয়াজ ততক্ষণে পারলে আকাশ ছোঁয়।
কিন্তু হঠাৎই কী যেন হয়ে গেল! নিস্তব্ধতা নেমে এল চারপাশে। ম্যাচের শেষ কিক থেকে ইতালির গোল! বদলি নামা মাতিয়া জাকাগনি স্রেফ জালই কাঁপালেন না, যেন ক্রোয়াটদের হৃদয়টাই ফুড়ে দিলেন ওই গোলকটি দিয়ে।
লাইপজিগ স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৯৮তম মিনিটের এই গোলেই ম্যাচ ১-১ ড্র করে ‘বি’ গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠেছে ইতালি। গ্রুপের অন্য ম্যাচে আলবেনিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে নকআউটে জায়গা করেছে স্পেনও। আর তিন ম্যাচই জয়হীন থাকা ক্রোয়েশিয়ার শেষ ষোলোর সম্ভাবনা কার্যত শেষ। দুই পয়েন্ট আর গোলের ব্যবধান নিয়ে তৃতীয়দের মধ্যে সেরার তালিকায় থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ।
অথচ লুকা মদরিচের দারুণ নৈপূণ্যে ম্যাচটা মুঠোতেই ছিল ক্রোয়েশিয়ার। প্রথমার্ধে যে দল ইতালির বক্সে থেকে একটি শটও নিতে পারেনি, সেই দলই দ্বিতীয়ার্ধের বেশির ভাগ সময় দাপট দেখিয়েছে। যার শুরুটা হয়েছে আবার ব্যর্থতা দিয়েই। ম্যাচের ৫৫তম মিনিটে পেনাল্টিতে দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল মদরিচের। কিন্তু ডান দিকে মারা তাঁর নিচু শট ঝাঁপিয়ে সহজেই রুখে দেন জিয়ানলুইজি ধন্নারুম্মা। এর কয়েক সেকেন্ড পরই ক্রোয়াট-গ্যালারিতে আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে আসেন মদরিচ। আন্তে বুদিমিরের শট ইতালি গোলকিপার প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। কাছেই থাকা মদরিচ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি।
ক্রোয়েশিয়ার শেষ ষোলোয় ওঠার সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলা এই গোলে ইউরোর নতুন রেকর্ড গড়েন মদরিচ। ৩৮ বছর ২৮৯ দিন বয়সে গোল করে মদরিচই এখন ইউরোর সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতা। পেছনে ফেলেছেন ২০০৮ ইউরোয় পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে গড়া অস্ট্রিয়ার ইভিকা ভাসতিচের রেকর্ড।
মদরিচের রেকর্ডগড়া গোলের পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ উঠে আসে ক্রোয়েশিয়ার কাছে। ক্রমাগত ইতালি রক্ষণে চাপও বাড়তে থাকে। ইতালি কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি অবশ্য একটা গোল পেতে আক্রমণাত্মক ফরমেশনই ধরে রাখেন। যার অংশ হিসেবে ৮২ মিনিটে সেন্টার ব্যাক মাতেও ডারমেইনের বদলে নামান ফরোয়ার্ড জাকাগনিকে। ২৯ বছর বয়সী এই লাৎসিও উইঙ্গারই ম্যাচের শেষ বাঁশির কয়েক সেকেন্ড আগে বক্সের বাইরে বল পেয়ে কোনাকুনি জোরালো শটে বল জালে পাঠিয়ে ইতালিকে এনে দেন শেষ ষোলোর টিকিট।
‘বি’ গ্রুপে ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ইতালি আছে দ্বিতীয় স্থানে। ফেরান তোরেসের গোলে আলবেনিয়াকে হারানো স্পেন তিন ম্যাচের সবকটিতে জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। ক্রোয়েশিয়ার পয়েন্ট ২, আলবেনিয়ার ১।