ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে সহিংসতার তদন্ত করবে ফিফা
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মারাকানায় ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচ শুরুর আগে সংঘাতের ঘটনা তদন্ত করবে ফিফা। এতে ব্রাজিলের দায় প্রমাণিত হলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দলটির পয়েন্ট কর্তন, আর্থিক জরিমানা অথবা ফাঁকা গ্যালারির সামনে খেলার শাস্তি হতে পারে। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’র খবরে এ কথা জানানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সংঘাতের ঘটনায় ব্রাজিলের পুলিশ ও স্থানীয় ফুটবল কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করে বিবৃতি দিয়েছে। আর ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ‘ফুটবলে সহিংসতার স্থান নেই’ উল্লেখ করে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে) মারাকানায় ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচ শুরুর আগে গ্যালারির দক্ষিণ অংশে দুই দলের সমর্থকেরা বিবাদে জড়ান। পরে পুলিশ এসে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জ করলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, যা থামাতে আর্জেন্টিনা–ব্রাজিল দুই দলের খেলোয়াড়েরাই গ্যালারির দিকে ছুটে যান। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হন। ম্যাচও শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধা ঘণ্টা পর। ম্যাচে নিকোলাস ওতামেন্দির গোলে ১–০ ব্যবধানে জেতে আর্জেন্টিনা।
গ্লোবোর খবরে বলা হয়, ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটি মারাকানার ঘটনা তদন্ত করবে। ফিফা ডিসিপ্লিনারি কোডের ধারা–১৭ অনুসারে, ম্যাচের পূর্বে, ম্যাচের সময় এবং ম্যাচের পরে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব একান্তই আয়োজক ক্লাব বা ফেডারেশনের। এ ক্ষেত্রে ম্যাচে নিরাপত্তা নিশ্চিতের সম্পূর্ণ দায়–দায়িত্ব ছিল সিবিএফের (কনফেডারেশন অব ব্রাজিল ফুটবল)।
ফিফা ডিসিপ্লিনারি কোড ভঙ্গের শাস্তি হতে পারে আর্থিক জরিমানা, একটি বা দুটি ম্যাচ ফাঁকা মাঠে খেলা (অথবা সীমিতসংখ্যক দর্শক নিয়ে), সংশ্লিষ্ট স্টেডিয়ামে ম্যাচ আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা, নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ম্যাচ খেলায় বাধ্যবাধকতা, পয়েন্ট কাটা যাওয়া অথবা প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কারের মধ্যে যেকোনোটি।
ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্ত জানানোর নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। ব্রাজিল ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে পরবর্তী ম্যাচ খেলবে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। সামনের মার্চ ও জুনে যে ফিফা উইন্ডো আছে, সেটিতে প্রীতি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল।
এদিকে ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচের মারামারির ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো। এক ইনস্টাগ্রাম বার্তায় ফিফাপ্রধান লিখেছেন, ‘ফুটবলে মাঠে বা মাঠের বাইরে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। মারাকানা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ব্রাজিল–আর্জেন্টিনা ম্যাচে যা দেখা গেছে, আমাদের খেলা বা সমাজে এর জায়গা নেই।’ দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল কর্তৃপক্ষ কনমেবলও মারাকানার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। তবে বিশ্বকাপ বাছাই ফিফার ইভেন্ট বলে মারাকানার ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও উল্লেখ করেছে কনমেবল।
এদিকে সংঘাতের ঘটনায় একে অপরকে দোষারাপ করেছে ব্রাজিলের পুলিশ ও ফুটবল কর্তৃপক্ষ। রিওর পুলিশ এক বিবৃতিতে মারাকানার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যায়িত করে জানিয়েছে, ব্রাজিলের ফুটবল কর্তৃপক্ষ মিক্সড সিটিং (উভয় দলের সমর্থকদের নিয়ে আসনবিন্যাস) পরিকল্পনা করে বাজারে টিকিট ছেড়েছিল। আর টিকিট বিক্রি শেষ হওয়ার পরই তারা পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে।
তবে সিবিএফ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এক বিবৃতিতে ব্রাজিলের ফুটবল কর্তৃপক্ষ লিখেছে, ‘মিক্সড সিটিং বিষয়ে রাজ্য পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই জানত, যেটা ফিফা আয়োজিত ম্যাচের মান অনুসরণেই নিশ্চিত করা হয়েছে। সিবিএফ অন্যান্য কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে পুলিশের সঙ্গে মিলেই ম্যাচের পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছিল।’