অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার বীর দুই মার্তিনেজ
আর্জেন্টিনার সমর্থকদের হৃৎস্পন্দন ওই সময় থেমে যাওয়ারই কথা। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে গোলের সামনে থেকে শট নেওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার গ্যারাং কুয়োল। শট নিলেই গোল। সমতা ফিরিয়ে খেলাটা অতিরিক্ত সময়ে গেলেই চাপে পড়ে যেত আর্জেন্টিনা। কিন্তু ওই সময় আর্জেন্টিনার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। কুয়োলের শট ফিরিয়ে তিনি দলের কোয়ার্টার ফাইনাল-যাত্রার পথে হয়ে ওঠলেন ‘বীর’।
লিওনেল মেসি আর হুলিয়ান আলভারেজের দুই গোলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিছুটা ঢিলেঢালা হওয়ার সুযোগটাই অস্ট্রেলিয়া নিয়েছিল আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরে। ৭৭ মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজের শরীরে লেগে দিক বদল করে বল যখন মার্তিনেজকে বোকা বানাল, তখন আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মনে কু-ডাক দেওয়ারই কথা। দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার সময় মেসিদের যতটা আত্মবিশ্বাসী লাগছিল, ফার্নান্দেজের আত্মঘাতী গোলের পর গোটা দলকেই কেন যেন কিছুটা নার্ভাস মনে হয়েছে।
কুয়োলের শটটি মার্তিনেজ শেষ মুহূর্তে যেভাবে ঠেকালেন, আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারদের শরীরী ভাষাই বলে দিচ্ছিল সবকিছু। কয়েকজন তো তাঁকে মাটিতে পড়া অবস্থাতেই জড়িয়ে ধরলেন। তাঁদের আবেগটা ছিল এমন যেন মার্তিনেজ মহাবিপদের হাত থেকে তাঁদের বাঁচিয়েছেন।
মেসি-আলভারেজের গোল ছাপিয়েও ম্যাচের পর আলোচনায় ছিল মার্তিনেজের সেই সেভ। বিবিসির বিশ্বকাপ সম্প্রচার কার্যক্রমে বিশেষজ্ঞ তারকাদের আলোচনাতেও ছিলেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার। সাবেক ইংলিশ তারকা গ্যারি লিনেকার, অ্যালান শিয়েরার, রিও ফার্ডিনান্ড আর আর্জেন্টিনার সাবেক তারকা পাবলো জাবালেতারা পঞ্চমুখ ছিলেন মার্তিনেজের প্রশংসায়।
লিনেকারের মতে, মার্তিনেজের সেভ ‘দুর্দান্ত’। অ্যালান শিয়ারার মনে করেন,‘আর্জেন্টিনার গোলকিপারের জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে সে যেভাবে দ্রুত শটটি ঠেকাল! অবিশ্বাস্য। ওটাকে ম্যাচের শেষ শটই বলা যায়।’
ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আর্জেন্টিনাকে বিশেষ উপহার দিয়েছেন আরেক মার্তিনেজ—লিসান্দ্রো মার্তিনেজ। ৮২ মিনিটে অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড আজিজ বেহিচের সামনে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েই তাঁকে আর্জেন্টিনার গোলে শট নিতে দেননি লিসান্দ্রো। ফার্ডিনান্ডের মতে, ‘ম্যাচে দুই মার্তিনেজ উপহার দিয়েছেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।’
আর্জেন্টিনার সাবেক তারকা পাবলো জাবালেতা মনে করেন, এমন কিপিং না হলে বিশ্বকাপে ভালো করা খুব কঠিন। মার্তিনেজ আজ যে ধরনের বল সেভ করে দেখিয়েছেন, সেটিই প্রয়োজন। এ ধরনের গোলকিপিংই দলকে ভালো কিছুর পথে নিয়ে যেতে পারে।