ক্লিন্সমানকে ছাঁটাই করল দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার কোচ পদ থেকে ছাঁটাই হয়েছেন ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান। এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে জর্ডানের কাছে দক্ষিণ কোরিয়ার হারের পর তাঁকে ছাঁটাইয়ের সুপারিশ করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (কেএফএ) জাতীয় দল পরিচালনা কমিটি। জর্ডানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে দক্ষিণ কোরিয়া দলের তারকা খেলোয়াড়দের মধ্যে মারামারির ঘটনার জন্যও সমালোচিত হয়েছিলেন ক্লিন্সমান।
জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী সাবেক স্ট্রাইকার দক্ষিণ কোরিয়া কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আরেক ফেব্রুয়ারিতে ৫৯ বছর বয়সী কোচকে ছাঁটাই করা নিয়ে কেএফএ সভাপতি চুং মং-গাইয়ু বিবৃতিতে বলেন, ‘বিশদ পর্যালোচনার পর জাতীয় দলের কোচ পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেএফএ। দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা ও কৌশলগত জায়গায় জাতীয় দলের কোচ হিসেবে যেমনটা প্রত্যাশা ছিল, ক্লিন্সমান তা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রধান কোচ হিসেবে ক্লিন্সমানের আচরণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মানসিকতা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও তা পূরণ হবে না বলে সবাই মনে করছেন। এ কারণে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগে আমরা নেতৃত্ব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ছাঁটাইয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগেই সম্ভবত ব্যাপারটা টের পেয়েছিলেন ক্লিন্সমান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দক্ষিণ কোরিয়ার খেলোয়াড় ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি, ‘সব খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ এবং কোরিয়ার সব ফুটবল সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইল। আপনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ, আমরা এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে উঠেছি। গত ১২ মাসের অভিযাত্রাও অবিশ্বাস্য ছিল। টানা ১২ ম্যাচে হারিনি। লড়াই চলুক।’
এশিয়ান কাপের সেমিফাইনাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিদায়ের পর দেশটির সংবাদমাধ্যম ও সমর্থকেরা ক্লিন্সমানের ছাঁটাইয়ের পক্ষে আওয়াজ তোলেন। কেএফএ–এর জাতীয় দল পরিচালনা কমিটিও গতকাল বলেছে, ‘নেতৃত্বে পরিবর্তন প্রয়োজন।’
দক্ষিণ কোরিয়া জাতীয় দলও এখন বিতর্কের মধ্যে আছে। জর্ডানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিজেদের মধ্যে মারামারিতে আঙুল ভাঙেন কোরিয়ান তারকা সন হিউন-মিন। পিএসজির লিং ক্যাং-ইন টটেনহাম তারকা সনের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছেন—ইয়োনহাপ নিউজ এই খবর প্রকাশের পর দুঃখপ্রকাশ করেন লি ক্যাং-ইন। ক্লিন্সমানের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম ও সমর্থকেরা।
ক্লিন্সমান কোচ হিসেবে কখনোই দক্ষিণ কোরিয়ার সমর্থক ও সংবাদমাধ্যমের মন জয় করতে পারেননি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোচ হয়ে আসার পর দক্ষিণ কোরিয়াকে ৬৪ বছর পর এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এনে দিতে চেয়েছিলেন বায়ার্ন মিউনিখ ও যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক কোচ।
স্ট্রাইকার হিসেবে নিজের প্রজন্মের অন্যতম সেরা হলেও কোচ হিসেবে নিজেকে তেমন উচ্চতায় তুলতে পারেননি ক্লিন্সমান। যুক্তরাষ্ট্রের কোচ হিসেবে ২০১৩ সালে শুধু গোল্ড কাপ জিততে পেরেছেন। জার্মানির হয়ে ১০৮ ম্যাচে ৪৭ গোল করা সাবেক এই স্ট্রাইকার ১৯৯০ বিশ্বকাপের পাশাপাশি ১৯৯৬ সালে ইউরোও জিতেছেন। ২০০৪ সালে খেলা ছাড়ার পরপরই নিজ দেশের জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান। কিন্তু ২০০৬ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় জার্মানি। এরপর ২০০৮ সালে বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নিয়ে এক মৌসুমও টিকতে পারেননি ক্লাবটির সাবেক এই খেলোয়াড়। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়ে গোল্ড কাপ জেতানোর পাশাপাশি দেশটিকে ২০১৪ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় তুলেছিলেন ক্লিন্সমান। এরপর হার্থা বার্লিন ঘুরে গত বছর দায়িত্ব নিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার।