ম্যাচ শেষে আরেকটা গোলের আক্ষেপে পুড়তেই পারেন নাবিব নেওয়াজ, দানিয়েল কলিনদ্রেসরা। আরেকটা গোল হলেই যে এই মৌসুমে কুমিল্লা ধীরেন্দ্রনাথ স্টেডিয়াম ফিরে যেত কমলাপুরে! গত জানুয়ারিতে কমলাপুর স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে শেখ জামাল ধানমন্ডিকে ৬-০ গোলে হারিয়েছিল আবাহনী। যে ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন নাবিব নেওয়াজ। আজ আবার শেখ জামালকে বিধ্বস্ত করেছে আকাশি-নীল জার্সির দলটা। এবার কুমিল্লায় প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী ৫-০ গোলে হারিয়েছে শেখ জামালকে। আবার শেখ জামালকে পেয়ে জ্বলে উঠলেন নাবিব। আজও জোড়া গোল করেছেন তিনি। ১টি করে গোল করেছেন ইমন মাহমুদ, রাফায়েল আগুস্তো ও দানিয়েল কলিনদ্রেস।
গতকাল মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। আর আজ শেখ জামালকে হারিয়ে রানার্সআপ নিশ্চিত আবাহনীর। গত মৌসুমে তৃতীয় হয়ে লিগ শেষ করা আবাহনীর লক্ষ্য স্বাভাবিকভাবেই ছিল শিরোপা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে পেরে না উঠে দ্বিতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। তবে এর ফলে আগামী বছর এএফসি কাপে খেলার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল করেছে আবাহনী।
বর্তমানে ২০ ম্যাচে ৫১ পয়েন্ট বসুন্ধরা কিংসের। সমান ম্যাচে ৪৪ পয়েন্ট আবাহনীর। দুই দলেরই বাকি দুটি করে ম্যাচ। ২০ ম্যাচে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে সাইফ স্পোর্টিং। তবে সমান পয়েন্ট পেয়েও গোল গড়ে পিছিয়ে থাকায় চারে শেখ জামাল।
তিন হলুদ কার্ডের নিষেধাজ্ঞায় আজ একাদশে ছিলেন না আবাহনীর অন্যতম বড় ভরসা দরিয়েলতন গোমেজ। লিগে ১২ গোল করা দরিয়েলতন অবশ্য দর্শক হয়েই দেখলেন দলের বড় জয়। এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড না থাকলেও রাফায়েল আগুস্তোর সঙ্গে দানিয়েল কলিনদ্রেসের রসায়নটা মাঠে বেশ জমে উঠেছিল। দরিয়েলতনের অভাবটা যেন বুঝতেই দেননি কেউ!
শেখ জামালের রক্ষণ বলে আসলে কিছুই ছিল না এই ম্যাচে। বলতে গেলে একরকম অসহায় আত্মসমর্পণই করেছে। স্রোতের বিপরীতে যা একটু লড়াই করেছেন তাদের উজবেক ফরোয়ার্ড ভালিজানভ ওতাবেক। অবশ্য শেষ দিকে যেন শেখ জামালের ফুটবলারদের লড়াই করার মানসিকতাও দেখা যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল ম্যাচটা কোনোরকম শেষ হলেই বাঁচেন তারা!
শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা আবাহনীর গোল উৎসবের শুরুটা করেন মিডফিল্ডার ইমন মাহমুদ। ম্যাচের ছয় মিনিটে সুশান্ত ত্রিপুরার দুর্দান্ত ক্রস থেকে পাওয়া বলটা শেখ জামালের এক ডিফেন্ডার প্রথমে ক্লিয়ার করেন। কিন্তু ফিরতি বলে সুযোগসন্ধানী ইমন বাঁ পায়ের জোরালো শটে করেছেন গোল। ম্যাচের ৩৮ মিনিটে আরেকটি গোল পেতেই পারতেন ইমন। বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার জোরালো শট অবশ্য সে যাত্রায় ফিস্ট করে ফেরান শেখ জামালের গোলকিপার মোহাম্মদ নাঈম। আক্রমণে জেরবার শেখ জামালের জালে ৩৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি করেছেন রাফায়েল। কর্নার থেকে কলিনদ্রেসের উড়ে আসা বলে হেডে দারুণভাবে মাথা ছুঁয়ে ২-০ করেছেন রাফায়েল। পুরো ম্যাচেই আসলে দুর্দান্ত খেলেছেন রাফায়েল। নিজে ১টি গোল করলেও ২টি গোল করিয়েছেন। ৪২ মিনিটে আবাহনীর তৃতীয় গোলটি করেন কলিনদ্রেস। এই গোলের জোগানদাতা রাফায়েল। ডান প্রান্ত থেকে আক্রমণে ওঠা রাফায়েলের ক্রসে আলতো করে প্লেসিং করেন কলিনদ্রেস।
জয় নিশ্চিত জেনেও যেন এই ম্যাচে দুর্বার ছিল আবাহনী। দ্বিতীয়ার্ধে আরও গোলের নেশায় মেতে ওঠেন আবাহনীর ফরোয়ার্ডরা। এবার রাফায়েলের ক্রস থেকে নাবিব নেওয়াজ ৭৭ মিনিটে করেন স্কোর ৪-০। আর ৮২ মিনিটে শেখ জামালের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেছেন নাবিব। কর্নার থেকে কলিনদ্রেসের উড়ে আসা বলে দারুণ দক্ষতায় হেডে নাবিব করেছেন ম্যাচের পঞ্চম গোল। সব মিলিয়ে এবারের লিগেও নাবিবের পঞ্চম গোল ছিল এটি। বাকি সময় অবশ্য চেষ্টা করেও কোনো গোল শোধ করতে পারেনি শেখ জামাল।