ভারতের সুনীল ছেত্রী কি মেসি–রোনালদোকেও পেছনে ফেলেছেন
ছোট দলের বড় তারকা তিনি।
দেশ হিসেবে ভারত বিশাল হলেও বিশ্ব ফুটবল মানচিত্রে নিচের দিকেই অবস্থান। সাম্প্রতিককালে যদিও ভারতীয় ফুটবল দল ভালো করছে, এশিয়ার বড় শক্তিগুলোর বিপক্ষে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছে, জায়গা করে নিয়েছে এশিয়ান কাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে; কিন্তু তারপরেও ফুটবল দুনিয়ায় ভারত পিছিয়ে থাকা দেশ। কিন্তু সুনীল ছেত্রী এই ভারতীয় দলেরই কিংবদন্তিতুল্য এক নাম। ২০০৭ সাল থেকে তিনি ভারতীয় ফুটবলের মুখ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোলদাতাদের তালিকায় বসেছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর আশপাশে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ গোল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। ২০০ ম্যাচে ১২৩ গোল। দ্বিতীয় ইরানের সাবেক তারকা আলী দাইয়ি। ১৪৮ ম্যাচে ১০৯ গোল তাঁর। তৃতীয় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লিওনেল মেসি—১৭৫ ম্যাচে ১০৩ গোল। সুনীল ছেত্রীর অবস্থান রোনালদো, আলী দাইয়ি ও মেসির পরই—ভারতের হয়ে ১৪২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ৯২ গোল।
ভারতীয় ফুটবলের জন্য ব্যাপারটি দারুণ গর্বের। ৩৮ বছর বয়সী এই তারকা ১৭ বছর ধরে ভারতীয় ফুটবলের পতাকা একাই বয়ে নিয়ে চলেছেন। সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় মেসি–রোনালদোর কাছাকাছি অনুভূতিটা ছেত্রীর কাছে অদ্ভুত এক ব্যাপার। ছেত্রীর বিশ্বাস, ভারতীয় ফুটবল দলের বিশ্ব ফুটবলে অবস্থান ও জাতীয় দলে তাঁর পারফরম্যান্সের প্রভাব বিচারে মেসি–রোনালদোকে পেছনেই ফেলেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ছেত্রী বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় শীর্ষ দশে আমি আছি। অন্য ৯ জনের সঙ্গে আমার কোনো তুলনাই হয় না। আমি অন্যদের মতোই মেসি ও রোনালদোর বড় ভক্ত। তাদের সঙ্গে আমার কোনো তুলনাই হয় না। আমি এই তালিকাকেও খুব গুরুত্ব কখনো দিই না। তবে হ্যাঁ, জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়ে আমি মেসি–রোনালদোদের চেয়ে হয়তো কিছুটা এগিয়ে আছি।’
ছেত্রী গত ১৭ বছর ধরে ভারতীয় ফুটবল দলের জার্সিতে খেলে যাচ্ছেন। ভারতকে একাধিকবার এশিয়ান কাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে নিয়েছেন। ভারতীয় ফুটবলের অবস্থান বিচারে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলাটা বড় অর্জন। এশিয়ার বেশ কয়েকটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ভারত জয় পেয়েছে। জাতীয় দলের জার্সিতে সুনীল ছেত্রী গোল করেছেন সিরিয়া, লেবানন, ভিয়েতনাম, বাহরাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, ক্যামেরুন, ফিলিস্তিন, ওমান, পুয়ের্তো রিকো, কেনিয়া, নিউজিল্যান্ড, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, উত্তর কোরিয়া, কুরাসাও, কিরগিজস্তান, ফিলিপাইন, তাজিকিস্তান, হংকং, ভানুয়াতু, কুয়েতের মতো দেশগুলোর বিপক্ষে। সাফ অঞ্চলের বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটানের মতো দেশগুলোর বিপক্ষে তো গোল করেছেনই। ভারতের জার্সিতে হ্যাটট্রিক করেছেন ৪টি—তাজিকিস্তান, ভিয়েতনাম, চীনা তাইপে ও পাকিস্তানের বিপক্ষে।
মেসি, রোনালদো অন্য উচ্চতার তারকা। প্রথমজন দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন, জিতিয়েছেন কোপা আমেরিকাও। রোনালদো দেশকে ইউরো জিতিয়েছেন ও নেশনস লিগ। ফুটবল ইতিহাসেই অন্যতম দুই সেরা তারকা। তাঁদের সঙ্গে ভারতীয় তারকার কোনো তুলনা হয়তো হয় না। কিন্তু ছেত্রীর পরিসংখ্যানে চোখ বুলিয়ে একটু থমকে যেতেই হয়। মেসি আর রোনালদো খেলেছেন যথাক্রমে আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালের জার্সিতে। ছেত্রী ভারতীয় ফুটবল দলের। বিশ্ব ফুটবলে পেছনের সারির একটি দেশের ফুটবলারের জাতীয় দলের জার্সিতে পরিসংখ্যান যদি মেসি–রোনালদোর কাছাকাছি হয়, তাহলে গর্ব লাগাও তো অস্বাভাবিক কিছু না!
ছেত্রী আবারও ভারতীয় দলের সাফল্যের নায়ক হয়েছেন সদ্য সমাপ্ত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। লেবানন, কুয়েতের মতো শক্তিশালী দলগুলোকে পেছনে ফেলে ভারত জিতেছে এই টুর্নামেন্ট। ভারতের প্রতিটি ম্যাচেই তিনি ছিলেন শক্তির উৎস। হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। এ নিয়ে ভারতের বেশ ক’টি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে ছেত্রী রাখলেন মুখ্য ভূমিকা।