ছেলে ‘চুমু–কাণ্ডে’ নিষিদ্ধ, প্রতিবাদে মায়ের অনশন
‘চুমু–কাণ্ডে’ স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) সভাপতিকে ৯০ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। কিন্তু রুবিয়ালেসের মা বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। ছেলের সমর্থনে আজ থেকে অনশনে নেমেছেন আনহেলেস বেহার।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মত্রিলের দিভাইনা পাস্তোরা গির্জায় নিজেকে আটকে রেখে অনশনের মাধ্যমে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন। গির্জার বাইরে রুবিয়ালেসের পরিবারের এক সদস্য সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন, নারী বিশ্বকাপ ফাইনালে বিজয়মঞ্চে আসলে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে হেনি হেরমোসো ‘সত্যি’ না বলা পর্যন্ত আনহেলেস বেহার এই প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন।
ঘটনার শুরু ২০ আগস্ট, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। সেদিন ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফিফা নারী বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে স্পেন। এরপর পুরস্কার মঞ্চে স্পেনের মিডফিল্ডার হেরমোসো পদক নেওয়ার সময় দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান রুবিয়ালেসের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে তিনি তাঁর ঠোঁটে চুমু দেন।
সেই মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সমালোচনা হয় সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে। পরে ক্ষমাও চেয়েছিলেন রুবিয়ালেস। কিন্তু কাজ হয়নি। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী থেকে ফিফার দরবার পর্যন্ত গড়ায় ব্যাপারটি। আর ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রুবিয়ালেস বলেছিলেন, চুমুর বিষয়টি ছিল পারস্পরিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।
যদিও হেরমোসো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রুবিয়ালেসের এই দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, লুইস রুবিয়ালেস তাঁর বক্তব্যে যা যা দাবি করেছেন, বিশেষ করে সম্মতিসূচক চুমুর ব্যাপারটি—তাঁর সঙ্গে এমন কোনো কথাবার্তাই হয়নি। এগুলো মিথ্যা এবং নিজের সুবিধার জন্য কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার যে সংস্কৃতি তিনি গড়ে তুলেছেন, সেটারই অংশ।’
স্পেন ফুটবল ফেডারেশন ভুক্তভোগী হেনি হেরমোসোর বক্তব্য মিথ্যা দাবি করে আইনি ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি এরপরই রুবিয়ালেসকে নিষিদ্ধ করে। ছেলের এই শাস্তি মেনে নিতে পারেননি আনহেলেস বেহার।
সংবাদ সংস্থা এএফপিকে রুবিয়ালেসের কাজিন ভ্যানেসা রুইজ বেহার বলেছেন, ‘যে ভোগান্তিটা হয়েছে, সেটি অন্যায্য। তার (রুবিয়ালেস) মা ধর্মপরায়ণ, তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। তিনি অনশন শুরু করেছেন, গির্জা ছাড়তে চাচ্ছেন না। আসলে যা ঘটেছে, তা ন্যায্য বলে মনে হচ্ছে না। তাকে আগেভাগেই দোষী বানানো হয়েছে। এটা মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না...আমরা চাই হেনি সত্যিটা বলুক। কারণ, সে তিনবার নিজের বক্তব্য পাল্টেছে। তার (রুবিয়ালেস) পরিবার খুব ভোগান্তির মধ্যে আছে।’ ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেস মত্রিল শহরেই বেড়ে উঠেছেন এবং তাঁর বাবা এই পর্যটন শহরের সাবেক মেয়র।
চুমুর বিষয়টি নিয়ে মঞ্চে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় হেরমোসো বলেছিলেন, এ নিয়ে তাঁর কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ড্রেসিংরুমে গিয়ে সংবাদমাধ্যমকে নিজের অস্বস্তির কথা বলেন। এরপর রুবিয়ালেসের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ চেয়ে বিবৃতিও দেন।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, স্পেনের সরকার কৌঁসুলিরা আদালতে আজ থেকে রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তপ্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ‘যৌন নিপীড়ন’–এর অভিযোগে এই তদন্ত চলছে।
আদালতের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কৌঁসুলিরা ঘটনার সত্য অনুসন্ধানে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছেন, যৌন নিপীড়নের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটা নিশ্চিত হতে।’ স্পেনে খেলাধুলা নিয়ে শীর্ষ আদালতেও (টিএডি) এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। রুবিয়ালেস দোষী প্রমাণিত হলে আরও শাস্তি পেতে পারেন।