‘অপারেশন হলান্ড’ নিয়ে মাঠে নামছে রিয়াল
ইউরোপীয় মঞ্চে কোনো ফুটবলার দাপট দেখিয়ে বেড়াবেন আর রিয়াল মাদ্রিদ তাঁর দিকে হাত বাড়াবে না, তা-ও আবার হয় নাকি! রিয়াল মানেই যে তারার মেলা। সময়ের সেরা তারকাদের নিয়ে আসতে নিজেদের সর্বোচ্চই উজাড় করে দেয় তারা। এবার তাদের চোখ আর্লিং হলান্ডের ওপর।
অবিশ্বাস্য এক মৌসুম কাটাচ্ছেন হলান্ড। ম্যানচেস্টার সিটির জার্সিতে ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করে রেকর্ড বইয়ে রীতিমতো ঝড় তুলে বেড়াচ্ছেন ২২ বছর বয়সী নরওয়েজিয়ান তারকা। মৌসুম শেষ হতে হতে হলান্ডের দাপটে ভেঙে যেতে পারে আরও বেশ কিছু রেকর্ড। তাই ২০২৪ সালে ম্যান সিটির চুক্তি থেকে হলান্ড মুক্ত হয়ে যাওয়ার পর তাঁকে দলে টানতে চায় রিয়াল। হলান্ডকে নিয়ে রিয়ালের নতুন করে তৎপর হওয়ার খবরটি দিয়েছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএস।
গত দুই মৌসুমে রিয়ালের চোখ ছিল মূলত কিলিয়ান এমবাপ্পের ওপর। সর্বশেষ গ্রীষ্মের দলবদলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও এমবাপ্পেকে দলে ভেড়াতে পারেনি রিয়াল। আগামী গ্রীষ্মেও তাঁকে পেতে মাঠে নামবে তারা। তবে সেটিকে বিবেচনায় না নিয়ে স্বতন্ত্র একটি প্রচেষ্টা হিসেবে হলান্ডের জন্য মাঠে নামবে রিয়াল। হলান্ডকে পেতে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টাই নাকি করবে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, হলান্ডকে পেতে রিয়ালের খরচ হতে পারে রেকর্ড ২২ থেকে ২৪ কোটি ইউরো।
এর আগে ২০২২ সালে হলান্ড যখন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে ছিলেন, তাঁর রিয়ালে যাওয়ার প্রসঙ্গটি সামনে এসেছিল। তবে সে সময় হলান্ড এবং তাঁর পরিবারের ইচ্ছা সত্ত্বেও চুক্তিটা আলোর মুখ দেখেনি। পরে সিটিতে যোগ দেন হলান্ড। চুক্তির অঙ্কই শুধু নয়, হলান্ডকে পাওয়ার ব্যাপারে রিয়ালের আরও কিছু জটিলতা ছিল। সে সময় হলান্ডের একই পজিশনে খেলা করিম বেনজেমা দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন। তাই হলান্ডকে পেতে অতটা মরিয়াও ছিল না তারা। রিয়াল বেনজেমাকে এখন ২০২৪ সাল পর্যন্ত দলে রাখতে চায়। আর এরপর তাঁর বিকল্প হিসেবে হলান্ডকে নিয়ে আসতে চায় তারা।
হলান্ডের সঙ্গে সিটির চুক্তি অবশ্য ২০২৭ সাল পর্যন্ত। রিয়ালের ইচ্ছাটা তাই অনেক ‘যদি’ আর ‘কিন্তু’র ওপর নির্ভর করছে। এর আগে ইউরোপের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, সিটির সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালেই চাইলে ক্লাব ছাড়তে পারবেন হলান্ড। এখন হলান্ড আদৌ ক্লাব বদলাতে রাজি হবেন কি না এবং সিটিতে তাঁর পারফরম্যান্স কেমন থাকবে, তার ওপরও নির্ভর করবে অনেক কিছু।
হলান্ডের চুক্তির পরিস্থিতিটা কেমন, তা রিয়ালের ভালোই জানা আছে। আর তারা জানে যে হলান্ডকে পাওয়া অসম্ভব নয়। এই মুহূর্তে শান্তভাবে পরিস্থিতির ওপর চোখ রাখছে তারা।
এর আগে গত অক্টোবরে বড় বোমা ফাটিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদেরই সাবেক সেন্টারব্যাক ও মালাগার সাবেক সভাপতি ফার্নান্দো সাঞ্জ। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘২০২৪ সালে (ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে) রিয়ালে যাওয়ার শর্ত (চুক্তিপত্রে) আছে হলান্ডের।’ যদিও এ খবর পরে অস্বীকার করেন সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা সত্য নয়। তার চুক্তিতে রিয়াল মাদ্রিদ বা অন্য কোনো দলের কথা নেই।’
মূলত গার্দিওলার ব্যাপক চাহিদার কারণে হলান্ডের সিটিতে আসা। তাই হলান্ডের সিটিতে থাকা না থাকাও গার্দিওলার ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে বলেই মনে করেন অনেকে। সিটিতে গার্দিওলার চুক্তি আছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এরপর পুরো বিষয়টি কোন দিকে যায়, সেটি দেখার অপেক্ষায় থাকবে রিয়াল।
রিয়ালের চাওয়া মূলত এমবাপ্পে, হলান্ড ও ভিনিসিয়ুসের মতো তিনজন তারকাকে দিয়ে নতুন গ্যালাকটিকো বা তারকাপুঞ্জ তৈরি করা। পিএসজির সঙ্গে দ্বন্দ্বে এমবাপ্পের রিয়ালে আসার পথ আরও প্রশস্ত হয়েছে। হলান্ডকেও দলে নিয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তারা। এই মিশনে সফল হলে ফুটবলের নতুন গ্যালাকটিকোস বানাতে পারবে তারা। তবে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলে কি না, তা জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।