বুফন এবং তাঁর মতো আক্ষেপ নিয়ে বিদায় যাঁদের

জিয়ানলুইজি বুফনছবি: এএফপি

৪৫ পেরিয়ে ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন কিংবদন্তি জিয়ানলুইজি বুফন। ২৮ বছরের ক্যারিয়ারে বুফন জিতেছেন ২৯টি শিরোপা। যেখানে লিগ শিরোপা থেকে শুরু করে আছে বিশ্বকাপ ট্রফিও। তবে কখনো দেশের ও ক্লাবের হয়ে ইউরোপ–সেরা শিরোপা জেতা হয়নি তাঁর। ক্লাবের হয়ে ইউরোপ–সেরার ট্রফি জিততে না পারা তারকাদের তালিকায় বুফন অবশ্য একা নন। এ তালিকায় তাঁর সঙ্গে আছেন রোনালদো নাজারিও, ডেনিস বার্গক্যাম্প ও ইব্রাহিমোভিচদের মতো বড় তারকারাও।

আরও পড়ুন
ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো
ছবি: টুইটার

রোনালদো

বলা হয়, সর্বকালের সেরা ১০ নম্বর কে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। যেখানে পেলে, ডিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে আসবে লিওনেল মেসির নামও। কিন্তু সেরা ৯ নম্বর কে, তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। ব্রাজিলিয়ান ফেনোমেনন রোনালদো নাজারিও অনেকের কাছেই সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার। বিশ্বকাপে একসময় সর্বোচ্চ গোলের মালিকেরও অবশ্য আছে অপ্রাপ্তি। দুবার বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলে একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া রোনালদো কখনো জিততে পারেননি চ্যাম্পিয়নস লিগ। ক্যারিয়ারজুড়ে পিএসভি, ইন্টার মিলান, বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ ও এসি মিলানের মতো বিশ্বসেরা ক্লাবে খেলেছেন রোনালদো। কিন্তু ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফিটি কখনো জেতা হয়নি তাঁর।

আর্সেনাল কিংবদন্তি ডেনিস বার্গক্যাম্প
ছবি: এএফপি

ডেনিস বার্গক্যাম্প
দুঃখটা কি বার্গক্যাম্প কখনো ভুলতে পারবেন! ২০০৬ সালে তাঁর শেষ ম্যাচটি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। সেই ম্যাচে বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয় তাঁকে। ম্যাচটাও শেষ পর্যন্ত হেরে যায় আর্সেনাল। নিজের সময়ের অন্যতম সেরা এই তারকাকে ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হয় ক্লাবের হয়ে ইউরোপ–শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব ছাড়াই। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা না হলেও বর্তমান ইউরোপা লিগ, অর্থাৎ আগের উয়েফা কাপ শিরোপা দুবার জিতেছেন বার্গক্যাম্প। ১৯৯১-৯২ সালে জিতেছেন আয়াক্সের হয়ে, ১৯৯৩-৯৪ সালে জিতেছেন ইন্টার মিলানের হয়ে।

২৮ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে ৩টি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন জিয়ানলুইজি বুফন
ছবি: বুফনের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

জিয়ানলুইজি বুফন
২০০১ সালের রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে পার্মা থেকে জুভেন্টাসে এসেছিলেন জিয়ানলুইজি বুফন। সব মিলিয়ে তাঁর ক্যারিয়ারের দৈর্ঘ্য ২৮ বছরের। এ সময়ে জিতেছেন অসংখ্য শিরোপা। শুধু ইতালিয়ান লিগ সিরি ‘আ’র শিরোপাই জিতেছেন সর্বোচ্চ ১০ বার। ২০০৬ সালে জিতেছেন বিশ্বকাপ শিরোপাও। কিন্তু জেতা হয়নি চ্যাম্পিয়নস লিগ। গতকাল ফুটবলকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানিয়েছেন তর্কযোগ্যভাবে সর্বকালের সেরা এই গোলরক্ষক। কিন্তু ১২৪ ম্যাচ ও ৩ বার ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারার চিরদুঃখটাও সঙ্গী তাঁর।

এসি মিলানের স্ট্রাইকার ইব্রাহিমোভিচ
ছবি: রয়টার্স

ইব্রাহিমোভিচ
চ্যাম্পিয়নস লিগের বিব্রতকর এক রেকর্ডে বুফনের সঙ্গী ইব্রাহিমোভিচও। কখনো শিরোপা না জেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২৪ ম্যাচ খেলেছেন এই দুজন। ক্যারিয়ারে আয়াক্স, জুভেন্টাস, এসি মিলান, বার্সেলোনা ও পিএসজির মতো ক্লাবে খেলেছেন ইব্রা। কিন্তু নিজের সময়ের অন্যতম সেরা তারকার ইউরোপ–সেরা হওয়ার ভাগ্য খোলেনি কোথাও।

প্যাট্রিক ভিয়েরা
ছবি: এএফপি

প্যাট্রিক ভিয়েরা
সর্বকালের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারদের একজন প্যাট্রিক ভিয়েরা। অজেয় আর্সেনালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন এই ফরাসি তারকা। দেশের হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপও। কিন্তু এত অর্জনের ভিড়ে কোথাও যেন একটু শূন্যতা আছে। সেই শূন্যতাটুকু মূলত কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারার। ২০০৬ সালে আর্সেনাল চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠার আগেই ক্লাবকে বিদায় বলে দেন ভিয়েরা। আর ২০১০ সালে ইন্টার মিলান শিরোপা জেতার কিছুদিন আগে ক্লাব ছাড়েন এই ফরাসি তারকা।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা
ছবি: এএফপি

এরিক ক্যান্টোনা
প্রিমিয়ার লিগের কৌশল বদলের কারিগর বলা হয় তাঁকে। ১৯৯০–এর দশকে ইংলিশ ফুটবলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রাজত্ব প্রতিষ্ঠাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জিতেছেন ক্লাবের হয়ে চারটি লিগ শিরোপাও। কিন্তু ফরাসি এই তারকার কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা হয়নি। স্যার আলেক্স ফার্গুসন চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা হাতে তোলেন ১৯৯৯ সালে। তার আগেই ক্লাবকে বিদায় বলে দিয়ে ভিন্ন পথে চলে যান বৈচিত্র্যময় এই ফুটবল তারকা।

ব্যালন ডি'অর হাতে ক্যানাভারো।
ছবি : টুইটার

ফাবিও ক্যানাভারো
ইতালির ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ক্যানাভারো। সেবার দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছে হাতে নেন ব্যালন ডি’অর ট্রফিও। এর মধ্যে আদায় করে নেন ইতালির সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন হওয়ার স্বীকৃতিও। কিন্তু সাফল্যের চূড়া স্পর্শ করা ক্যানাভারোর আক্ষেপের নামও চ্যাম্পিয়নস লিগ। ক্যারিয়ারে ইন্টার মিলান, জুভেন্টাস ও রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবে খেলেছেন, কিন্তু কখনো জেতা হয়নি ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের স্মারকটি।

ইতালির সাবেক ফুটবলার ফ্রান্সেসকো টট্টি
ছবি: টুইটার

ফ্রান্সিসকো টট্টি
এক ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ার শেষ করার অনন্য এক কীর্তি নিয়ে ফুটবলকে বিদায় জানান কিংবদন্তি ফ্রান্সিসকো টট্রি। এএস রোমার হয়েই নিজেকে উজাড় করেছেন টট্টি। রোমার প্রতি এই ভালোবাসা তাঁকে এনে দিয়েছে ‘রোমের রাজা’র স্বীকৃতিও। কিন্তু ১৯৯৩ সালে ক্যারিয়ার শুরু করা টট্টির ক্লাব ফুটবলের অর্জনের খাতাটা খুব একটা সমৃদ্ধ নয়। মাত্র একবার জিতেছেন লিগ শিরোপা। জেতা হয়নি কোনো ইউরোপিয়ান শিরোপা। তবে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ দলে থাকাটা কিছুটা হলে দুঃখ ঘোচাবে তাঁর।

বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি তারকা লিলিয়ান তারকা
ছবি: এএফপি

লিলিয়ান থুরাম
খুব কাছাকাছি গিয়েও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা হয়নি থুরামের। ২০০৩ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে খেলে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাঁকে। অথচ সিরি ‘আ’তে থুরাম লিগ শিরোপা জিতেছেন দুবার। জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ ও ইউরো। কিন্তু ক্লাবের হয়ে ইউরোপ–সেরা না হওয়ার আক্ষেপটা থেকেই গেছে তাঁর।

জুভেন্টাস ও লাৎসিও তারকা পাভেল নেদভেদ
ছবি: এএফপি

পাভেল নেদভেদ
জুভেন্টাসের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলেছেন পাভেল নেদভেদ। কিন্তু ২০০৩ সালের সেই ফাইনালে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় জুভদের। জুভদের হয়ে ক্যারিয়ারে দুটি লিগ শিরোপা জিতেছেন নেদভেদ। ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ স্মারক ব্যালন ডি’অরও জিতেছেন এই চেক তারকা। কিন্তু এই কিংবদন্তিকেও শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার শেষ করতে হয় ইউরোপ-সেরা ক্লাবের খেলোয়াড় হতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে।