সৌদি আরবকে আর চমক দেখাতে দিল না পোল্যান্ড
জিতলেই শেষ ষোলো নিশ্চিত-এমন সমীকরণ নিয়ে খেলতে নেমে পোল্যান্ড শিবিরে কাঁপনই শুধু ধরাতে পেরেছে সৌদি আরব. কাজের কাজটি আর করতে পারেনি তারা। পোল্যান্ডের কাছে তারা হেরে গেছে ২-০ গোলে। ১৯৯৪ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো শেষ ষোলোতে যেতে হলে এখন তাদের মেক্সিকোর বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটি জয়ের সঙ্গে তাকিয়ে থাকতে হবে গ্রুপের অন্য ম্যাচগুলোর দিকে।
এর আগে বিশ্বকাপে ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ১০টি ম্যাচ খেলেছে। একমাত্র জয়টি তারা পেয়েছে ১৯৯৪ সালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে। এবার ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাদের চেয়ে ২৫ ধাপ এগিয়ে থাকা পোল্যান্ডের বিপক্ষে খুব কাছে গিয়েও বিশ্বকাপে ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দ্বিতীয় জয় তুলে নিতে পারেনি সৌদি আরব। ম্যাচ জিততে না পারলেও দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মন ঠিকই জয় করে নিয়েছে তারা।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বসে ফরাসি কোচ হার্ভি রেনারের দল। প্রথমার্ধের ১৪ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত সৌদি আরব। এক সতীর্থের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েন মোহাম্মদ কান্নো। গোলে শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু আটকা পড়ে যান পোলিশ গোলরক্ষক ভয়চেক সেজনির দক্ষ গ্লাভসে। প্রথমার্ধে আরও কয়েকবার দারুণ দক্ষতায় দলকে বাাঁচান সেজনি।
খেলার ধারার বিপরীতেই ৩৯ মিনিটে এগিয়ে যায় পোল্যান্ড। গোলের নেশায় অতি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা সৌদি আরবের রক্ষণে হঠাৎই এক প্রতি-আক্রমণ নিয়ে আছড়ে পড়ে পোলিশরা। সেই প্রতি আক্রমণ থেকে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান রবার্ট লেভানডফস্কি। গোলকিপারকে একা পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি বার্সেলোনার স্ট্রাইকার। তবে বলের নিয়ন্ত্রণও হারাননি। গোললাইনের কাছাকাছি এলাকা থেকে তিনি বল পাঠান বক্সের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা মিডফিল্ডার পিওতর জিয়েলিনস্কিকে। সহজেই বল জালে জড়ান তিনি।
৮১ মিনিটে স্কোরশিটে নাম লেখান লেভা নিজেই। সৌদি রক্ষণের ভুলে বল পেয়ে যান লেভানডফস্কি। অসাধারণ দক্ষতায় বল জালে পাঠান লেভা। বিশ্বকাপে প্রথম গোল পেয়ে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা আনন্দাশ্রুও ঝরে লেভার। পোল্যান্ডের হয়ে এটি তাঁর ৭৭তম গোল। বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ও আর পোল্যান্ডের হয়ে ৭৮তম গোলটিও লেভা পেয়ে যেতে পারতেন ৮৯ মিনিটে। কিন্তু গোলকিপারকে একা পেয়ে করা তাঁর চিপটি জালে যায়নি।
পুরো ম্যাচের চিত্রটা কল্পনা করলে সৌদি আরবকে দুর্ভাগাই বলতে হবে। প্রথমার্ধেই এগিয়ে যাওয়ার একাধিক সুযোগ পেয়েছিল দলটি। কিন্তু কান্নো-আল শেহরিদের নিখুঁত ফিনিশিংয়ের অভাব আর সেজনির দক্ষতায় গোল পাওয়া হয়নি তাদের। দ্বিতীয়ার্ধে যখন সৌদি আরব একের পর আক্রমণের ঢেউ নিয়ে পোল্যান্ডের রক্ষণে আছড়ে পড়ে, ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হন জুভেন্টাসের গোলকিপার। সেজনি ম্যাচের সবচেয়ে বড় সেভটি করেন ৪৫ মিনিটে।
ম্যাচের ৪২ মিনিটে নিজেদের বক্সের মধ্যে আল শেহরিকে আটকাতে তাঁকে ফাউল করেন ক্রিস্তিয়ান বিয়ালিক। রেফারি ভিএআর দেখে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নেন। ৪৫ মিনিটে সৌদি আরবের পেনাল্টিটি নেন সালেম আল দাউসারি। দুর্বল কিকটি ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন সেজনি। ফিরতি বলটিও জালে পাঠাতে পারেননি মোহাম্মদ আল ব্রেইক। এটি গোল হলে ম্যাচের ফলটা অন্যরকম হলেও হতে পারত।
এই হারের পর ২ ম্যাচ থেকে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে আছে সৌদি আরব। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে পোল্যান্ড। এক ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে মেক্সিকো। আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম ম্যাচটি হেরে যাওয়ায় এখনো কোনো পয়েন্ট পায়নি।