পুরো পৃথিবী গাইছে মেসির নাম!
দিদিয়ের দেশমের বাংলা ভাষাটা বোঝার প্রয়োজন নেই, হয়তো তিনি বোঝেনও না। তাহলে কালিকাপ্রসাদের একটি গানের অন্তরার দুটি লাইন তাঁর হয়তো মনে পড়ে যেত—‘আমি তোমারই তোমারই তোমারই নাম গাই।’
ফ্রান্সের কোচ দেশমের এটা কেন মনে পড়ত? দোহা থেকে বুয়েনস এইরেস, বার্লিন থেকে রিও ডি জেনিরো, ঢাকা থেকে কলকাতা—সব জায়গাতেই যে ধ্বনিত হচ্ছে মেসি, মেসি, মেসি! আজ লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ফাইনাল শেষে তাঁর হাতেই শিরোপা দেখতে চান সবাই! বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমীই যে এটা চাইছেন, সেটা বুঝতে অবশ্য দেশে দেশে ঘোরা বা দেশ-বিদেশের ভাষা বোঝার দরকার নেই দেশমের।
কাল ফাইনালের আগে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে এসে তো তিনি বলেই গেলেন, তাঁর দেশ খোদ ফ্রান্সের অনেক মানুষও চাইছে—মেসিই বিশ্বকাপটা জিতুন!
ফুটবল বিশ্বের এই চাওয়া দেখে কবি শহীদ কাদরী আর সংগীতকার কবীর সুমনের কথা হয়তো অনেকেরই মনে পড়ছে। শহীদ কাদরীর একটা কবিতা আছে—তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা। সে কবিতাটা একটু বদল করে কবীর সুমন গান গড়েছেন। সেই গানের একটা জায়গায় তিনি লিখেছেন—ভয় নেই এমন দিন এনে দেব, দেখো সেনাবাহিনীর বন্দুক নয়, শুধু গোলাপের তোড়া হাতে, কুচকাওয়াজ করবে তোমার সামনে, শুধু তোমাকেই তোমাকেই স্যালুট করবে তারা দিনরাত।
গতকাল জার্মানির ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান যেমন বললেন, তিনি মেসির হাতেই এবারের বিশ্বকাপের ট্রফি দেখতে চান। এর আগে আর্জেন্টিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের সাবেক বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাফুও একই চাওয়ার কথা বলেছেন। এর আগে কিংবদন্তি স্ট্রাইকার রোনালদো নাজারিও মেসির হাতে শিরোপা দেখার চাহিদাপত্র দিয়ে রেখেছেন। এর সঙ্গে বিশ্বজোড়া মেসির হাজারো ভক্ত আর আর্জেন্টিনার সমর্থকদের প্রার্থনা তো আছেই।
কিন্তু এই চাওয়া আর প্রার্থনা পূরণ হতে আজ মাঠে জ্বলে উঠতে হবে মেসিকে। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামের সবুজ ক্যানভাসে তাঁকে হয়তো আঁকতে হবে ক্যারিয়ারের সেরা ছবিটা! মেসি কি সেটা পারবেন? বিশ্বজোড়া ভক্তদের অনেক কথাই হয়তো কানে যায় না মেসির অথবা ফাইনালের আগে বাইরের কথা শুনে মনোযোগটা নাড়াতে চান না তিনি! কিন্তু মেসি বাইরের কারও কথা শুনলেন কি শুনলেন না, সেটাতে তাঁর ভক্তদের বয়েই গেছে! মেসিকে নানাভাবে শান্ত বা চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁরা।
কেউ বলছেন—মেসি, মাঠে যাও, খেলাটা উপভোগ করো, এতেই হবে। কেউ আবার সরাসরিই বলছেন, মেসি চাপ নেওয়ার কিছু নেই। এবার শিরোপাটা তোমার হাতেই দেখতে পাচ্ছি। কেউ আবার তাঁকে দিচ্ছেন টেনশন না করার পরামর্শ। মেসিকে পরামর্শ দিতে গিয়েও কিন্তু শহীদ কাদরীর কবিতা টেনে আনতে পারেন তাঁর ভক্তরা। শহীদ কাদরীর আদলে বলতে পারেন—ভয় নেই এমন দিন এনে দেব/ বনবাদাড় ডিঙিয়ে, কাঁটাতার পেরিয়ে,/ ব্যারিকেড পেরিয়ে, সাঁজোয়া গাড়ির ঝাঁক আসবে,/ বেহালা, গিটার, বাঁশি, হারমোনিকা নিয়ে/ শুধু তোমারই তোমারই দোরগোড়ায়, প্রিয়তমা।
সত্যিই কি সব বাধা পেরিয়ে এবার বিশ্বকাপ ট্রফিটা আসবে মেসির দোরগোড়ায়!