ছুটি কাটাতে নয়, মায়ামিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই মেসি–বুসকেতসের লক্ষ্য
২৫ জুন বুয়েনস এইরেসের লা বোমবোনেরা স্টেডিয়ামে হুয়ান রোমান রিকেলমের বিদায়ী ম্যাচ শেষে কথাটা বলেছিলেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন এই তারকা ইন্টার মায়ামি নিয়ে ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন, মায়ামিতে, ‘খেলতে মুখিয়ে আছি। পরিবারের সঙ্গে সময়গুলো এবং ছুটির দিন উপভোগ করতে চাই।’
মেসির এই কথা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলেন সবাই। ক্লাব ফুটবলে তাঁর আর কিছুই জেতার বাকি নেই। জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ ও মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কোপা আমেরিকাও। বয়সও হয়েছে ৩৬—পরিপূর্ণ ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে এখন তো মেসির ফুরফুরে মেজাজে থাকার সময়, কোনো চাপ নেবেন না, ক্যারিয়ারের শেষ দিনগুলো স্রেফ উপভোগ করবেন। ভুল!
অন্তত জেরার্দো ‘টাটা’ মার্তিনো তা ভাবছেন না। পরশু যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাবটির কোচের দায়িত্ব নেন এই আর্জেন্টাইন কোচ। কাল আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের কোচ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় মায়ামি। সে সংবাদ সম্মেলনেই মার্তিনো জানিয়ে দিয়েছেন, মেসি কিন্তু ছুটিতে কাটাতে মায়ামিতে আসছেন না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই তাঁর এবং সের্হিও বুসকেতসের মূল লক্ষ্য হবে।
৮ জুন ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন মেসি। এরপর মৌসুম শেষে বার্সেলোনাকে বিদায় বলে মেসির সাবেক কাতালান ক্লাব সতীর্থ বুসকেতসও যোগ দেন মায়ামিতে। দুজনকেই বার্সেলোনায় কোচিং করিয়েছেন মার্তিনো। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলেও মেসির কোচ ছিলেন তিনি। দুই কিংবদন্তিকে তাই ভালোই জানা আছে মার্তিনোর।
সংবাদ সম্মেলনে দুজনকে নিয়ে মায়ামির এই নতুন কোচ বলেছেন,‘লিওর সঙ্গে কথা বলেছি আর গতকাল কথা হয়েছে বুসকেতসের সঙ্গে, আমরা সাফল্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে কথা বলেছি। হ্যাঁ, ব্যক্তিগতভাবে এটা মনে হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র, মায়ামি, ছুটির দিন—কিন্তু বিষয়টি তা নয়। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই...আর তারা এখানে এসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার মতো ফুটবলারও নয়।’
মার্তিনো যেমন ঠিক বলেছেন, তেমনি মেসির কথাও ঠিক। সাতবার ব্যালন ডি’অর জয়ী আর্জেন্টাইন তারকা পেশাদার ফুটবলার। কোনো ক্লাবে যোগ দিয়ে সেই ক্লাবের প্রতি দায়িত্ব পালনে ঢিলেমি করার মতো তারকা তিনি নন। নইলে প্রায় সবাইকে পেছনে ফেলে এতটা উঁচুতে উঠতে পারতেন না। আর মার্তিনোও পেশাদার কোচ হিসেবে মেসি ও বুসকেতসের কাছ থেকে যে সেরাটা নিংড়ে নেবেন, তা বলাই বাহুল্য। তবে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া ফুটবলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ কম। এই কম চাপের ব্যাপারটিই সম্ভবত মেসি বুঝিয়েছিলেন ‘পরিবারের সঙ্গে সময়গুলো এবং ছুটির দিন উপভোগ করতে চাই’ বলার মধ্য দিয়ে। তাই বলে মাঠে নামলে যে ঢিলেঢালা খেলবেন, তা ভেবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মেসি এখনো মায়ামির সঙ্গে চুক্তি করে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাবটিতে যোগ দেননি। ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই চুক্তি সই করবেন। আর ১৬ জুলাই তাঁকে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে মায়ামি। মেসি আসায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া ফুটবল অনেকটা এগিয়ে যাবে বলেই মনে করেন মার্তিনো, ‘এনএফএল এবং এনবিএর খেলোয়াড়েরা তাকে নিয়ে কথা বলছে...বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় এখন এই লিগে (এমএলএস) খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে...আমার মনে হয় না, যুক্তরাষ্ট্র এমন সুযোগ নষ্ট করার মতো কোনো দেশ।’
মেসি-বুসকেতস ও মার্তিনো মিলে মায়ামিকে টেনে ওপরে তোলার চেষ্টা করবেন। টানা ৭ ম্যাচ হেরে এমএলএসের পূর্বাঞ্চলীয় কনফারেন্স টেবিলের তলানিতে মায়ামি। যুক্তরাষ্ট্রে মার্তিনোর ভিসা প্রক্রিয়া শেষ করতে আর ‘চার-পাঁচ দিন লাগবে’ বলে জানিয়েছেন মায়ামির প্রধান ফুটবল কর্মকর্তা ক্রিস হেনডারসন।
মেসির অভিষেক কবে হবে—এই প্রশ্নে হেনডারসন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘লিও চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। আমরা এমএলএসের সঙ্গে কাগজপত্র ঠিক করার প্রক্রিয়ায় আছি। কাজটা শেষ করতে একটু সময় লাগবে। আশা করি জুলাইয়ের মাঝামাঝি কিংবা শেষ দিকে সে মাঠে নামতে পারবে।