এক ডিফেন্ডারের জোড়া গোলে ১৬ বছর পর কোয়ার্টার ফাইনালে তুরস্ক

সেন্টার–ব্যাক মেরিহ দেমিরাল জোড়া গোল করে তুরস্ককে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছেনফেসবুক

অস্ট্রিয়া ১–২ তুরস্ক

মেরিহ দেমিরাল। এক সময় জুভেন্টাসে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সতীর্থ ছিলেন। খেলেছেন আতালান্তার মতো পরিচিত ক্লাবেও। বর্তমানে খেলেন সৌদি ক্লাব আল আহলিতে। তবে বিশেষ কিছু করে কখনো সুনাম কুড়াতে পারেননি। তাই কোনো ক্লাবে দীর্ঘ সময় থিতুও হতে পারেননি।

সেই দেমিরাল জাতীয় দলের হয়ে আজ যা করলেন, শুধু তুরস্ক কেন; ফুটবল বিশ্ব তাঁকে অনেক দিন মনে রাখতে বাধ্য। লাইপজিগের রেড বুল অ্যারেনায় অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করলেন ২৬ বছর বয়সী এই সেন্টার–ব্যাক। এর মধ্যে প্রথমটি আবার ইউরোর নকআউট পর্বের ইতিহাসে দ্রুততম। অস্ট্রিয়া এক গোল করলেও তা শুধু ব্যবধানই কমাতে পারল।

২–১ গোলের জয়ে তুরস্ক পৌঁছে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে। দলটি সর্বশেষ ইউরোর শেষ আটে খেলেছিল ১৬ বছর আগে। আগামী শনিবার রাতে বার্লিনে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে তুরস্ক।

ইউরোর শেষ ষোলো পর্বের শেষ ম্যাচে আজ কাগজে–কলমে অস্ট্রিয়াই ছিল এগিয়ে। ‘গেগেনপ্রেসিংয়ের গদফাদার’ খ্যাত রাল্‌ফ রাংনিংকের দল ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়েও তুরস্কের চেয়ে ১৭ ধাপ এগিয়ে। গত মার্চে দুই দলের সর্বশেষ দেখাতেও তুরস্ককে ৬–১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল অস্ট্রিয়া। নিষেধাজ্ঞার কারণে নিয়মিত অধিনায়ক হাকান চালহানোয়লুর অনুপস্থিতি তুরস্কের শক্তি আরও কমিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে সব ভুল প্রমাণ করলেন দেমিরাল।

তুরস্কের দুটি গোলই এসেছে আর্দা গুলেরের নেওয়া কর্নার কিক থেকে
এক্স

আজ চালহানোয়লুর অভাব বুঝতে দেননি আর্দা গুলের। ‘তুর্কি মেসি’ খ্যাত রিয়াল মাদ্রিদের এই তরুণ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার দেমিরালের দুই গোলেরই কারিগর। দেমিরাল গোল দুটি করেছেন গুলেরের নেওয়া কর্নার কিক থেকে।

রেড বুল অ্যারেনায় খেলা দেখতে যাওয়া ৩৯ হাজারের মতো দর্শক তখনো ঠিকমতো নড়েচড়ে বসেননি। এমন সময় গোল! ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ৫৭ সেকেন্ড। কর্নার থেকে গুলেরের নেওয়া শট বক্সের জটলায় পড়লে বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন অস্ট্রিয়ার গোলকিপার প্যাট্রিক পেনৎস ও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ক্রিস্টফ বমগার্টনার। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা দেমিরাল উঁচু করে নেওয়া শটে অস্ট্রিয়ার জাল কাঁপান।

আরও পড়ুন

ইউরোর নকআউট পর্বের ইতিহাসে এটিই এখন দ্রুততম গোল, সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম। মাত্র ২৩ সেকেন্ডে গোল করে এবারের আসরেই দ্রুততম গোলের রেকর্ড গড়েছিলেন আলবেনিয়ার নেদিম বাইরামি। আর নকআউট পর্বে আগের দ্রুততম গোলের রেকর্ড ছিল পোল্যান্ড অধিনায়ক রবার্ট লেভানডফস্কির। ২০১৬ আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে রোনালদোর পর্তুগালের বিপক্ষে ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন লেভা।

শুরুতেই পিছিয়ে পড়ার পর গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে অস্ট্রিয়া। কিন্তু তুরস্কের জমাট রক্ষণ অস্ট্রিয়ানদের আক্রমণগুলো নষ্ট করে দেয়।

জোরালো হেডে দ্বিতীয় গোল করেন দেমিরাল
ফেসবুক

বিরতির পর তুর্কি সমর্থকদের আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন দেমিরাল। ৫৯ মিনিটে সেই গুলেরের নেওয়া কর্নার থেকেই জোরালো হেডে ব্যবধান ২–০ করেন এই ডিফেন্ডার।

গোলটির মধ্য দিয়ে দেমিরাল গড়েন আরেক কীর্তি। একবিংশ শতাব্দীতে কোনো ডিফেন্ডারের বড় টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বের ম্যাচে দুই গোলের নজির এটাই প্রথম। সর্বশেষ এমন কীর্তি গড়ছিলেন লিলিয়ান থুরাম। ফ্রান্সের সাবেক এই সেন্টার–ব্যাক ১৯৯৮ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন।

দুই গোল খেয়ে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে অস্ট্রিয়া। ৬৬ মিনিটে বদলি মাইকেল গ্রেগরিটশের গোলে ম্যাচে ফেরার আভাসও দেয়। শেষ দিকে আরও কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে তারা। সুবর্ণ সুযোগটা এসেছিল একদম ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে, যোগ করার সময়ের চতুর্থ মিনিটে।

ম্যাচের যোগ করা সময়ে গোলকিপার মের্ত গুনোকের এই সেভ তুরস্ককে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে গেছে
এক্স

গোলমুখের কাছাকাছি দূরত্ব থেকে দারুণ এক হেড করেছিলেন বমগার্টনার। সমতাসূচক গোলটা প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু তুর্কি গোলকিপার মের্ত গুনোক বল জালে আশ্রয় নেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন। গুনোকের এই বীরত্বপূর্ণ সেভের কিছুক্ষণ পরেই রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আনন্দে ভাসে তুরস্ক। বিদায়ের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রিয়া।