মরুর বুকে যে ফুল ফুটিয়েছেন রিচার্লিসন

রিচার্লিসনের জাদুকরী সেই মুহূর্তছবি: টুইটার

এমন একটি মুহূর্তের জন্যই ফুটবল সুন্দর! এমন মুহূর্ত অবশ্য সব সময় আসে না। কখনো কখনো আসে, যখন একজন খেলোয়াড়ের পায়ে ভর করে পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য। এমন মুহূর্তেরা ফুল হয়ে ফোটে। আজ মরুর বুকে তেমনই এক ফুল ফুটিয়েছেন রিচার্লিসন। অবশ্য এমন গোল এবং জাদুকরী মুহূর্তের জন্যই তো বিশ্বকাপ। যাকে ঘিরে রাজ্যের উন্মাদনা।

বাইসাইকেল কিকে সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৭৩ মিনিটে যে গোলটি এই ব্রাজিলিয়ান করেছেন, তা সময়কেও যেন স্তব্ধ করে দেয়। কয়েক মুহূর্তের জন্য আপনার মনে হবে এও সম্ভব!

হ্যাঁ সম্ভব তো বটেই। সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে তা করে দেখিয়েছেন রিচার্লিসন। তবে রিচার্লিসনের গোলের কৃতিত্ব কিছুটা ভিনিসিয়ুসের ভাগেও দিতে হয়। রিচার্লিসনের জোড়া গোল বাদ দিলে ম্যাচে যতটা সময় মাঠে ছিলেন দুর্দান্ত খেলেছেন ভিনি। বাঁ প্রান্ত দিয়ে একের পর এক হুমকি তৈরি করে গেছেন।

প্রথম গোলের পর রিচার্লিসন ও নেইমার
ছবি : রয়টার্স

ব্রাজিলের প্রথম গোলটিতেও ছিল তার দারুণ অবদান। তবে রিচার্লিসনকে দ্বিতীয় গোলে তাঁর অ্যাসিস্টটা অনবদ্য। অনেক দিন চোখে লেগে থাকার মতো। একেবারে মাপা এক নিচু করে দেওয়া পাস, যা রিচার্লিসনের জন্য মঞ্চটা তৈরি করে দিয়েছিল।

ভিনির পাসের পর আসল সেই জাদুকরী মুহূর্ত। হয়তো বিশ্বকাপের সেরা মুহূর্তগুলোর একটিও। বলটিকে হালকা স্পর্শে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একটু ওপরে তুলে নিলেন। এরপর শরীর বাঁকিয়ে শূন্যে ওঠে বাইসাইকেলের ভঙ্গিতে বলকে দেখিয়ে দিলেন যাওয়ার ঠিকানা।

আরও পড়ুন

ভাগ্যিস সার্বিয়ান ডিফেন্ডার মিলোস ভিলোকোভিচ আচমকা শটে মাথা সরিয়ে নিয়েছিলেন, নয়তো বলের সঙ্গে মাথাটা উড়েও যেতে পারত। সার্ব গোলরক্ষক ঝাঁপিয়েছিলেন ঠিকই। তবে তা টটেনহাম তারকার বুলেটটিকে থামানোর জন্য একেবারেই যথেষ্ট ছিল না।

অবশ্য একেবারে আকস্মিকভাবে রিচার্লিসন এই শটটি নেননি। সাম্প্রতিক সময়ে এই শটটি অনুশীলন করতে দেখা গেছে তাঁকে। সেই অনুশীলনের ফলেই যেন জাদুকরী এই গোলটি পেলেন এ ব্রাজিল নাম্বার নাইন।

ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে যেসব খেলোয়াড় সবচেয়ে বেশি চাপে আছেন তার মধ্যে রিচার্লিসন অন্যতম। একে তো ব্রাজিলের বিখ্যাত নয় নম্বর জার্সির চাপ। তারওপর সমর্থকদেরও তেমন পছন্দের নাম নন। তাঁকে একাদশে দেখে খোদ ব্রাজিল সমর্থকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরক্তি দেখিয়ে পোস্ট দিতে দেখা যায়। সে সব বিরক্তি ও সমালোচনার জবাব এর চেয়ে ভালো আর কীভাবে দিতে পারতেন রিচার্লিসন।

আরও পড়ুন

এই গোলের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন এক শ বছরের বেশি সময় পুরোনো গল্পও। সেই ১৯১৪ সালের একটি গল্প, যখন চিলির বন্দর তালকাহুয়ানার মাঠে এই বাইসাইকেল কিকটি প্রথম আবিস্কৃত হয়। যা আবিস্কার করেছিলেন রেমন উনজাগা নামের স্পেনে জন্ম নেওয়া এক চিলিয়ান ফুটবলার।

শরীরকে ‍শূন্যে তুলে পিঠ মাটির দিকে রেখে আকস্মিক লাফিয়ে কাচির ফলার মতো তিনি এই শটটি প্রথম নিয়েছিলেন। কিছুদিন পর এর নাম হয়ে গেল ‘চিলেনা’। আর কালের বিবর্তনে এখন আমরা এই শটকে বাইসাইকেল বলেই জানি। এরপর ফুটবল মঞ্চে অনেকবার এই শটে মুগ্ধতা ছড়াতে দেখা গেছে ফুটবলারদের।

ফুটবলের আরও অনেক কিছু মতো লাতিন দেশে জন্ম নেওয়া এই শটটিকে কাতার বিশ্বকাপে আরেকবার ফিরিয়ে আনলেন একজন লাতিন তারকা। যার গোলটি বিশ্বকাপের সৌন্দর্যকেও যেন আরেকটু বাড়িয়ে দিল। সে সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া ব্রাজিলীয় ফুটলের ‘জোগো বনিতো’ তথা সুন্দর ফুটবলের ঝলক যেন আরেকবার পাওয়া গেল।

রিচার্লিসনের প্রথম গোলের পর
রয়টার্স

এই গোলটির পর এখন প্রশংসায় ভাসছেন রিচার্লিসন। টকস্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার জো শ্যানন বলছেন, ‘এটি বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা গোলগুলোর একটি।’ অন্য দিকে গোলের পর ইংলিশ কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকার টুইটে লিখেছেন, ‘রিচার্লিসনের চোখ ধাঁধানো গোল। সুন্দর!’ সুন্দর তো বটেই। ফুটবল এমনিতেই তো সুন্দর! এই সব গোল খেলাটির সেই সৌন্দর্যের পাল্লাকে আরেকটু ভারি করে দেয়, এই যা!