ফাইনালে মেসি-জাদু দেখার আশায় ক্লিন্সমান

আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসিছবি: রয়টার্স

খেলোয়াড় ও কোচ—দুই ভূমিকাতেই জার্মানিতে ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান কিংবদন্তি। ১৯৯০ বিশ্বকাপ জিতেছেন খেলোয়াড় হিসেবে। কোচ হিসেবেও ২০০৪-০৬ সময়ে জার্মানির চোখজুড়ানো ফুটবলারের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দলের কোচ হওয়ার পর যদিও খুব একটা ভালো করতে পারেননি। এবার কাতার বিশ্বকাপে তাঁকে কোনো দলের কোচের ভূমিকায় দেখা যায়নি। কাজ করছেন ফিফার টেকনিক্যাল স্টাডি গ্রুপে।

আগামীকালের ফাইনাল নিয়ে ক্লিন্সমানের বাজি আর্জেন্টিনার পক্ষে। আরও স্পষ্ট করে বললে, তিনি লিওনেল মেসিকেই এগিয়ে রাখছেন। ফাইনালে ক্লিন্সমান দেখতে চান মেসি-জাদু।

ফুটবলে অনেক অর্জন রয়েছে মেসির নামের পাশে। শোকেসে ভর্তি ক্লাব ফুটবলের সম্ভাব্য সব ট্রফি। আর্জেন্টিনার হয়ে জিতেছেন মহাদেশীয় ট্রফি এবং অলিম্পিক পদকও। শুধু বিশ্বকাপটাই এখনো হাতে তুলে নিতে পারেননি।

ব্রাজিলে ২০১৪ বিশ্বকাপে খুব কাছে গিয়েও আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। ফাইনালে হেরেছিল জার্মানির কাছে। সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় এবার হয়তো পুড়তে হবে না মেসিকে—এমনটাই মনে করছেন ক্লিন্সমান, ‘সে এই বিশ্বকাপে অসাধারণ সময় পার করছে। আমরা সবাই মেসির ভক্ত। আমরা চাই তার হাতেই বিশ্বকাপ উঠুক। সে এগিয়ে যাক আরেক ধাপ এবং ম্যারাডোনাকে ছুঁয়ে ফেলুক।’

আরও পড়ুন

কোচ হিসেবে পছন্দের কোনো ফুটবলারকে বেছে নিতে বললে মেসিকেই সবার আগে নিজের দলে নিতেন বলে মন্তব্য ক্লিন্সমানের, ‘আমি কোচ থাকলে সেই দলে অবশ্যই মেসিকে নিতাম। আমার মনে হয়, আমাদের সবার একই পছন্দ, নিঃসন্দেহে মেসি। এই বিশ্বকাপে এমবাপ্পে, এমনকি নেইমারও অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে। কিন্তু আমি মেসির সঙ্গেই থাকব।’

আর্জেন্টিনা নাকি ফ্রান্স—কে এগিয়ে থাকবে ফাইনালে? ক্লিন্সমান অবশ্য মাঠের শক্তিমত্তা, লড়াইয়ে দুই দলকেই দেখছেন সমান চোখে। একটা রোমাঞ্চকর ফাইনাল দেখতে মুখিয়ে রয়েছেন ক্লিন্সমান, ‘আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্স এই বিশ্বকাপে একই ছন্দে খেলছে। তারা প্রতিপক্ষকে বল দখলের সুযোগ দেয় না। দল দুটির শক্তি হচ্ছে দুর্দান্ত গতি। তাদের প্রতিটিরই ব্যক্তিগত ঝলক দেখানোর মতো খেলোয়াড় আছে। দেম্বেলে, এমবাপ্পে, মেসি, আলভারেজ—সবাই অসাধারণ খেলছে। আলভারেজ তো এরই মধ্যে ৪ গোল করে ফেলেছে। আমরা অনেকে এটা ভাবছি না যে আর্জেন্টিনা দলের বেঞ্চে বসে আছে লাওতারো মার্তিনেজ ও দি মারিয়া। আসলে এটা একটা আকর্ষণীয় ফাইনালই হবে।’

সাবেক জার্মান কোচ ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান।
ফাইল ছবি: এএফপি।

গ্রুপ পর্বে সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার। কিন্তু মেক্সিকোর বিপক্ষে দারুণ এক জয়ে বিশ্বকাপ–স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখেন মেসিরা। এরপর প্রতিটি ম্যাচেই দেখা গেছে মেসি-ঝলক। নিজে তো গোল করছেনই, সতীর্থদের দিয়েও গোল করিয়েছেন। ফাইনালেও মেসি-জাদু দেখার অপেক্ষায় ক্লিন্সমান, ‘কৌশলগত জায়গায় আর্জেন্টিনা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। কিন্তু তাদের লক্ষ্য বদলায়নি। আর্জেন্টিনা মেসিকে স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। তা ছাড়া আলভারেজকে দেখুন। সে কিন্তু ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলছে এবং মেসির ওপর থেকে চাপ কমিয়ে দিচ্ছে। আমরা ফাইনালে মেসির জাদু দেখার আশায় আছি। কারণ, এটা একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।’

মেসি আর্জেন্টিনা দলের প্রাণভোমরা। আর এমন দলের পরিকল্পনা যে মেসিকে ঘিরেই সাজানো হবে, সেটাই স্বাভাবিক বললেন ক্লিন্সমান, ‘আপনার যদি এমন একটা পরিকল্পনা থাকে এবং সেই পরিকল্পনার সবকিছু যাকে ঘিরে হবে, সেই খেলোয়াড় যদি হয় মেসি, তাহলে তো সেটা দুর্দান্তই হবে।’

আরও পড়ুন

আগামীকাল লুসাইল স্টেডিয়ামের গ্যালারি যে আকাশি-নীলে ছেয়ে যাবে, তা যেন না বললেও চলছে। ক্লিন্সমান আগে থেকেই দেখতে পাচ্ছেন গ্যালারির সেই উন্মাদনা, ‘মেসিকে নিয়ে ভক্তদের উন্মাদনা প্রচুর। তারা আবেগ নিয়েই বেঁচে থাকে এবং স্টেডিয়ামের ৭৫ ভাগ জায়গা ভরা থাকবে আর্জেন্টিনার সমর্থকে। মেক্সিকোর বিপক্ষে একটা কঠিন সময় পার করার পর মেসির গোলে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল তারা। আসলে এখানে দুটো যোগ্য দলই ফাইনালে উঠেছে, যেখানে তাদের থাকার কথা।’