আলভারেজের পেনাল্টি কেন বাতিল হলো, আইন কী বলে
হুলিয়ান আলভারেজ এক শটেই ফুটবল–বিশ্ব নাড়িয়ে দিয়েছেন।
সেই বিশ্বে যাঁরা নড়েচড়ে বসেছেন, তাঁদের বেশির ভাগের প্রশ্ন বলটি কি নড়েছে? তবে এই প্রশ্নের মোড়কে ভেতরের আসল প্রশ্ন হলো, আলভারেজের পেনাল্টি শট বাতিল হলো কেন?
সবার আগে এই প্রশ্নের পটভূমিটা বলতে হবে। চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলো ফিরতি লেগে গতকাল রাতে মেত্রোপলিতানো স্টেডিয়ামে আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু প্রথম লেগ রিয়াল ২-১ গোলে জেতায় দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ ব্যবধানে সমতায় ছিল দুই দল। অতিরিক্ত সময়েও জয়-পরাজয় নির্ধারণ না হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। স্নায়ুচাপের এ পরীক্ষায় ৪-২ গোলে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে রিয়াল।
টাইব্রেকারে আতলেতিকোর হয়ে দ্বিতীয় শটে লক্ষ্যভেদ করেছিলেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার আলভারেজ। কিন্তু ভিএআরের হস্তক্ষেপে রেফারি জানান শটটি নিতে নিয়ম লঙ্ঘন করায় আলভারেজের গোল বাতিল করা হয়েছে। শটটি নেওয়ার সময় আলভারেজের বাঁ পা একটু পিছলে গিয়েছিল। ডান পায়ে শট নেওয়ার আগে আলভারেজের বাঁ পা লেগেছে বলে, যেটা নিয়মের পরিপন্থী। টাইব্রেকার শট নেওয়ার সময় বল একবারই টাচ করা যাবে।
তবে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের বাঁ পা বলে লেগেছিল কি না, তা ভিডিও রিপ্লে দেখে পরিষ্কার বোঝা কঠিন। বল নড়েছিল কি না, সেটা স্পষ্টভাবে বোঝাও কষ্টকর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, আলভারেজের ডান পা বলে আঘাত হানার প্রায় সামান্য আগে তাঁর বাঁ পায়ের স্পর্শে বলটা একদমই হালকাভাবে একটু নড়েছে। স্লো–মোশন ভিডিওতেও নড়ার মুহূর্তটি পরিষ্কার করে বোঝাও কঠিন।
স্বাভাবিকভাবেই আতলেতিকো কোচ দিয়েগো সিমিওনে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। ওদিকে রিয়ালের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বল দ্বিতীয় স্পর্শ করেছিলেন আলভারেজ, ফুটবলের আইনে যা নিয়মের পরিপন্থী। আইন বলছে, বলে প্রথম স্পর্শের পর পেনাল্টি যিনি নিয়েছেন, তিনি ‘অবশ্যই আবারও বলটি স্পর্শ করতে পারবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তা আরেকজন খেলোয়াড় স্পর্শ করছেন’।
তবে বিষয়টি আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। আলভারেজ পেনাল্টি শট নেওয়ার এক মিনিটের বেশি সময় পর সেটা বাতিল করা হয়। ফুটবলের আইনপ্রণেতা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ডের (আইএফএবি) ২০২৪/২৫–এর হালনাগাদ আইনে পেনাল্টি শুটআউটের প্রক্রিয়া নিয়ে বলা হয়েছে, ‘(পেনাল্টি) কিকের প্রক্রিয়া তখনই শেষ ধরা হবে, যখন বলটি পুরোপুরি থেমে যাবে, মাঠের বাইরে চলে যাবে কিংবা রেফারি নিয়ম ভাঙার জন্য খেলা থামাবেন। যিনি শট নিয়েছেন, তিনি দ্বিতীয়বার বল স্পর্শ করতে পারবেন না।’
আলভারেজের শটের পর রিয়ালের হয়ে শট নিতে আসেন ফেদে ভালভার্দে। কিন্তু তাঁকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। রেফারি সিমন মার্সিনিয়াক তখন ভিএআরের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন। রিভিউ শেষে তিনি জানান আলভারেজের পেনাল্টি শট বাতিল করা হয়েছে। কারণটা ভিএআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মার্সিনিয়াককে, ‘আতলেতিকোর ১৯ নম্বর খেলোয়াড় পেনাল্টি কিক নেওয়ার সময় বলটি দুবার স্পর্শ করেছেন।’ আইএফএবির পেনাল্টি–সম্পর্কিত ১৪.১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ‘যিনি শট নিয়েছেন, আরেকজন বলটি স্পর্শ না করা পর্যন্ত তিনি বলটি স্পর্শ করতে পারবেন না।’
সিবিএস স্পোর্টসে ফিফার আইনবিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা উনকেল তাঁর ব্যাখ্যায় বলেছেন, বলের ভেতরকার প্রযুক্তি ভিএআরকে এই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে, ‘এটাই নিয়ম। ব্যাপারটা সহজ। বল স্পর্শ করা হয়েছে। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ভিএআর প্রযুক্তিতেও সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি আছে। যেটার মাধ্যমে তারা শট নেওয়ার মুহূর্তটাও দেখতে পারেন এবং এই অতিরিক্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁরা বলতে পারেন, কখন বলটি স্পর্শ করা হয়েছে।’
উনকেল আরও ব্যাখ্যা করেন, ‘ভিএআরের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, তাঁরা শুধু ভিডিও দেখেননি, বলে টাচ-পয়েন্টগুলোও দেখেছেন; কারণ, সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তিতে ২৬টি আলাদা ক্যামেরা আছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবস্থান নিশ্চিতের জন্য। আরেকটি ক্যামেরা থাকে বলকে অনুসরণ করার জন্য, যেটার মাধ্যমে ভিএআর নিশ্চিত হতে পারে কখন বলকে স্পর্শ করা হয়েছে।’
উনকেল বলের ভেতরে যে প্রযুক্তির কথা বলেছেন, সেটা কোনো বিল্ট-ইন চিপ নয়। ভেতরে চিপ বসানো বল ইউরোয় উয়েফা ও বিশ্বকাপে ব্যবহার করে ফিফা। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগে সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যেখানে স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রায় ৩০টি ক্যামেরা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে অফসাইডের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ‘কিক পয়েন্ট’ নিশ্চিত হওয়া যায়। ভিডিও রিপ্লে নয়, ভিএআর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্ভবত সিদ্ধান্ত দিয়েছে আলভারেজ বলে দ্বিতীয়বার স্পর্শ করেছেন। আর তাই পেনাল্টি শটটি বাতিল করা হয়।