দ্রগবার অচেনা এই চেলসি আগামী মৌসুমে ইউরোপে থাকবে তো
চেলসিকে সেরা সময়ে দেখেছেন দিদিয়ের দ্রগবা। ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সেই সময়ে ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ও একাধিক লিগ শিরোপা। সেই দ্রগবা এখন চেলসিকে চিনতে পারছেন না!
চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে চেলসি। রিয়ালের মাঠে ২–০ গোলে হেরেছিল, একই ব্যবধানে হেরেছে নিজেদের মাঠেও। এই ম্যাচের বিশ্লেষক হিসেবে ফরাসি টিভি চ্যানেল ক্যানাল প্লাসে ছিলেন দ্রগবা। সেখানে বলেছেন, ‘আব্রামোভিচের সময় এই ক্লাবের একটা মান ছিল। কিন্তু এখন তাতে ঘাটতি আছে। তারা যেভাবে কিছু লোককে বিদায় করে দিয়েছে, তা দেখা আমার জন্য খুব কষ্টের ছিল। তাদের উচিত, নিজেদের আদর্শ ও মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনা। এই ক্লাবকে এখন আর আমি চিনতে পারি না।’
আইভরি কোস্ট কিংবদন্তি দ্রগবা যখন চেলসিতে ছিলেন, তখন ইউরোপে ভালোই দাপট ছিল চেলসির। ২০১২ সালে চেলসির প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে অবিস্মরণীয় অবদান তাঁর। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ৮৮ মিনিটে সমতাসূচক গোলের পর টাইব্রেকারে তাঁর শেষ শটে করা গোলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চেলসি।
সেই দ্রগবা এখন চেলসিকে যেভাবে দেখছেন, তাঁর কথার সঙ্গে সুর মেলানোর মতো লোকের অভাব নেই। অন্তত চলতি মৌসুমে চেলসির পারফরম্যান্সের দিকে তাকালে যে কারোরই এমন মনে হতে পারে। ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড চেলসির অন্তবর্তীকালীন কোচ হিসেবে ফেরার পর এ নিয়ে টানা চার ম্যাচ হারলেন। চেলসির ১১৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোচ হিসেবে নিজের প্রথম চার ম্যাচেই হারলেন ল্যাম্পার্ড। চেলসি কিংবদন্তি কোচ হয়ে আসার আগের বাজে সময়টাও স্মরণ করা যায়।
ল্যাম্পার্ডের পূর্বসুরি গ্রাহাম পটারও চেলসির কোচ হিসেবে ৭ মাসের বেশি টিকতে পারেননি। এপ্রিলের শুরুতে চেলসির কোচ হিসেবে নিজের ৩১তম ম্যাচে ১১তম হারের পর ছাঁটাই হন পটার।
ইউরোপ থেকে বিদায়ই, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ টেবিলেও চেলসির অবস্থা তথৈবচ। ৩১ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে ১১তম। চেলসি আগামী মৌসুমে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় থাকতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে এখনই। এবার সব রকম কাপ প্রতিযোগিতা থেকেও ছিটকে পড়েছে স্টামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটি। অর্থাৎ, কোনো শিরোপা জয়েরই আশা নেই।
রোমান আব্রামোভিচের পর গত বছর চেলসির মালিকানা কিনে নেন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের টড বোয়েলি। ৬০ কোটি পাউন্ড ঢেলেও এই মৌসুমে কোনো শিরোপা তুলে নিতে পারছেন না বোয়েলি। এত টাকা খরচ করার পরও চেলসিতে স্কোরারের বড় অভাব। তাই চেলসির দলবদল নীতি নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের আগামী মৌসুমে খেলতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন ওঠার কারণও আছে।
লিগ টেবিলের চারে থাকা নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সংগ্রহ ৩০ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট। চেলসিকে শীর্ষ চারে থেকে মৌসুম শেষ করতে হলে হাতে থাকা ৭ ম্যাচের সবগুলোই জিততে হবে এবং সেই সঙ্গে নিউক্যাসলকে তাদের বাকি ৮ ম্যাচের ৭টিতে হারতে হবে। চলতি মৌসুমে চেলসির পারফরম্যান্স দেখে পাঁড় ভক্তও হয়তো এমন আশা করবেন না!
গত ৩০ বছরের মধ্যে এই প্রথম সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা চার ম্যাচ হারা চেলসির পক্ষে যে এখন কোনো কিছুই নেই—তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না। লিগ টেবিলের পাঁচে থেকে মৌসুম শেষ করতে পারলে ইউরোপা লিগে খেলার সুযোগ পাবে চেলসি। ৩১ ম্যাচে ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে এখন লিগ টেবিলের পাঁচে টটেনহাম হটস্পারস। চেলসির সঙ্গে এখনই টটেনহামের ব্যবধান ১৪ পয়েন্টের। বাকি ৭ ম্যাচে ল্যাম্পার্ডের দল এই ব্যবধান ঘুচিয়ে ফেলবে, সে আশা করাও খুব কঠিন।
বাকি থাকল ইউরোপা কনফারেন্স লিগ। ইংল্যান্ড থেকে একটি দল ইউরোপে তৃতীয় স্তরের এ টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পায়। লিগ কাপজয়ী দল এই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে থাকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবার লিগ কাপ জিতলেও লিগ টেবিলে এখন তিনে থাকায় চ্যাম্পিয়নস লিগের আগামী মৌসুমে খেলার সুযোগ আছে। ইউনাইটেড সুযোগটা নিতে পারলে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের ষষ্ঠ অথবা সপ্তম দল জায়গা পাবে কনফারেন্স লিগে। ২৯ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে এখন লিগ টেবিলের সাতে ব্রাইটন। ৩১ ম্যাচে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে অ্যাস্টন ভিলা।
অর্থাৎ, কনফারেন্স লিগে খেলার শর্ত পূরণ করা থেকেও অন্তত ১০ পয়েন্ট দূরে চেলসি। হাতে আছে আর ৭ ম্যাচ। চেলসির জন্য তাই কনফারেন্স লিগে জায়গা করে নেওয়াও খুব কঠিন হবে। অর্থাৎ, আগামী মৌসুমে ইউরোপের মঞ্চে চেলসিকে না–ও দেখা যেতে পারে!
চেলসিকে সর্বশেষ ২০১৬–১৭ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কোনো প্রতিযোগিতায় দেখা যায়নি। তার আগের মৌসুমে লিগ টেবিলে দশম হয়েছিল চেলসি। আর তার খেসারত গুনেই দ্বিতীয়বারের মতো চেলসি থেকে ছাঁটাই হয়েছিলেন জোসে মরিনিও। ল্যাম্পার্ডের সামনে আপাতত এমন কোনো ঝুঁকি সম্ভবত নেই। কারণ, চেলসি সম্ভবত মৌসুম শেষেই স্থায়ী কোচ নিয়োগ দেবে।
দলবদল নিয়ে নির্ভরযোগ্য ইতালিয়ান সাংবাদিক ফ্যাব্রিজিও রোমানো টুইটে জানিয়েছেন, ‘...মৌসুম শেষে চেলসি নিশ্চিতভাবেই নতুন কোচ নিয়োগ দেবে।’ সেটা সময় হলেই জানা যাবে। আপাতত দ্রগবার মতো চেলসিকে অনেকেই চিনতে পারছেন না, ‘আমি আমার ক্লাবকে চিনতে পারছি না। আগের সেই চেলসি আর নেই। নতুন মালিক এসেছেন, লক্ষ্যও নতুন। তবে ড্রেসিংরুমে ৩০ জনের বেশি খেলোয়াড় সামাল দেওয়া একজন ম্যানেজারের জন্য কঠিন।’
যাক, কেউ অন্তত ল্যাম্পার্ডের পাশে দাঁড়ালেন।