ভারত ম্যাচের আগে দেখে নিন আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাবিনারা কেমন করেছেন

২০১০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলছে বাংলাদেশ মেয়েদের ফুটবল দলশামসুল হক

২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারি। বাংলাদেশের নারী ফুটবলে স্মরণীয় একটি দিন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে আনুষ্ঠানিক যাত্রা বলে কথা। অভিষেকটা আনন্দের হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে প্রথম ম্যাচে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নেপালের কাছে হারতে হয় ১-০ গোলে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচেই আসে জয়। শ্রীলঙ্কাকে ১-০ ও পাকিস্তানকে ২-০ গোলে হারিয়ে জয়ের পতাকা ওড়ান বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ভারতের কাছে ৭-০ গোলে হেরে ব্রোঞ্জ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল সাবিনা খাতুনদের।

সেই থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশের জাতীয় নারী দল আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ৬০টি। জিতেছে ২৩টি। ড্র ৮টি। হার ২৯টি। ছয়টি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ২৪ ম্যাচে ১৩ জয় বাংলাদেশের। ২ ড্র। ৯টি হার।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশ নারী দল

ভুটানের সঙ্গে ৬ ম্যাচ খেলে সব কটিতেই জয় সাবিনা খাতুনদের। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটিই কোনো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি জয়। ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানের বিপক্ষে জয়ের ব্যবধান ছিল ৯-০। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। ভুটানের সঙ্গে আছে ৮-০ গোলের জয়ও। সেটি গত সাফের সেমিফাইনালে এই কাঠমান্ডুতেই। চলতি বছর থিম্পুতে দুটি প্রীতি ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জয় ৫-১ ও ৪-২। ২০১২ সাফে ভুটানের বিপক্ষে জয় ১-০। ২০১৯ সাফে ২-০।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে নেপালের সঙ্গে। ১২ ম্যাচে জয় মাত্র একটি, সেটি ২০২২ সালে সাফের ফাইনালে। নেপালকে তাদেরই মাঠে বাংলাদেশ হারিয়ে দেয় ৩-১ গোলে।  সেই ম্যাচটি ব্যতিক্রমই হয়ে আছে। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের হার ৭টি, ড্র ৪টি।

ভারত ম্যাচের আগে কাঠমান্ডুতে অনুশীলনে বাংলাদেশ নারী দল
বাফুফে

বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছে পরাক্রমশালী ভারতের বিপক্ষে ১১টি। ৯ হার, ১ ড্র। একমাত্র জয় গত সাফে কাঠমান্ডুতে গ্রুপ পর্বে ৩-০ ব্যবধানে। ভারতের সঙ্গে ১১ ম্যাচে ৭ গোল করে বাংলাদেশ হজম করেছে ৪৩ গোল। আজ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ১২তম ম্যাচ খেলতে চলেছে। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়। আজ ড্র করলে সাফের সেমিফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। এমনকি ২-০ গোলে হারলেও সেমিফাইনালে উঠবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ যে ১১টি ম্যাচ খেলেছে, সব কটিই খেলেছে কোচ গোলাম রব্বানীর অধীনে। কাছ থেকে তিনি দেখেছেন দুই দলের পার্থক্য। ভারত নারী ফুটবল শুরু করেছে বাংলাদেশের অনেক আগেই। ফলে তাদের নারী ফুটবলের ভিত্তিটা অনেক মজবুত। আর এটাকেই দুই দলের মধ্যে মূল পার্থক্য মনে করেন গোলাম রব্বানী।

আরও পড়ুন

কাঠমান্ডু থেকে গোলাম রব্বানীকে ফোনে ধরা হলে বললেন, ‘আমাদের নারী ফুটবলের বয়স তো বেশি নয়। মেয়েরা শুরুর দিকে ছোট ছিল। ফলে তেমন লড়াই করতে পারত না আগে। ওদের বয়স ১৮-২০ বছর হওয়ার পর মেয়েরা পরিণত হয়েছে এবং ব্যবধান কমে এসেছে ভারতের সঙ্গে। তবে এখনো প্রস্তুতি, শক্তি, খেলোয়াড়ের সংখ্যায় ভারত এগিয়ে। ফলে ভারতের সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিনই। তারপরও গত সাফে মেয়েরা ভারতকে হারিয়েছে। আমি মনে করি নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে আজও ভারতের সঙ্গে জেতা অসম্ভব নয়।’

ভারতের সঙ্গে ১১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছাড়াও ২০১৩ সালে বাংলাদেশ তিনটি টায়ার–টু ম্যাচ খেলেছে কলকাতা একাদশের বিপক্ষে। যার দুটিতে জয়, একটি ড্র। ৬-১ ও ৪-০ গোলে। একটি ম্যাচ ড্র হয়েছিল।

মেয়েদের সাফ ফুটবলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
বাফুফে

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে তিনটি। প্রথম দুটিতেই জয়। ২০১০ সালে ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ১-০। ২০২২ সালে কাঠমান্ডুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ৬-০। এবার সাফে পাকিস্তানের কাছে হারতে হারতে শেষ মুহূর্তে শামসুন্নাহার জুনিয়রের গোলে ১-১।  

এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলা বাংলাদেশের ৬০ ম্যাচের মধ্যে ৪৫টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন গোলাম রব্বানী। একেবারে শুরুর টুর্নামেন্ট, ২০১০ এসএ গেমসে মূল কোচ ছিলেন শহিদুর হমান সান্টু, গোলাম রব্বানী সহকারী। সেবার বাংলাদেশ ৪ ম্যাচ খেলে দুটি করে জেতে ও হারে। ২০১৪ সালে পাকিস্তান সাফেও গোলাম রব্বানী সহকারী কোচ। মূল কোচ ছিলেন জাপানের সুকি তাতো নরিও। সেবার দুটি করে জয় ও হার।

আরও পড়ুন

২০১৩ সালে এএফসি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ে ঢাকায় গোলাম জিলানীর অধীনে ৩টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ নারী দল। সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ৯-০ গোলে হারে থাইল্যান্ডের কাছে। এখন পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশ নারী দলের সর্বোচ্চ ব্যবধানে হার। ওই টুর্নামেন্টে ইরান ও ফিলিপাইনের কাছে হার ২-০ ও ৪-০ গোলে।

২০২২ সালে সাফ জয়ের পর ছাদখোলা বাসে বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনের দিকে উচ্ছসিত সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দল
প্রথম আলো

গত বছর গোলাম রব্বানী বাফুফের চাকরি ছাড়ার পর সাবিনাদের সহকারী কোচ মাহবুর রহমানের অধীনে ঢাকায় ২টি প্রীতি ম্যাচ খেলে দুটিই ড্র করে বাংলাদেশ। সাইফুল বারীকে দায়িত্ব দেওয়ার পর সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ঢাকায় দুটি প্রীতি ম্যাচেই জয়। তাঁর অধীনে চীনে এশিয়ান গেমসে তিন ম্যাচে ১ ড্র, ২ হার। সাইফুল বারীর পর দায়িত্ব নেওয়া পিটার বাটলারের অধীনেও ৫টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জয় ২টি, ড্র ১, হার ২।

সাইফুল বারী ও বাটলারের অধীনে বাংলাদেশের দুটি করে জয় একপাশে রাখলে বাকিটা আসলে গোলাম রব্বানীময়। তাঁর সময়ে ৪৫ ম্যাচের ১৯টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। আর এতেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সাফল্যের পেছনে বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোচ গোলাম রব্বানীর বিরাট অবদান রয়েছে। অন্য সবার মতো আজ তিনিও তাকিয়ে থাকবেন সাবিনা খাতুনদের দিকে।

আরও পড়ুন