ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শেষ দিনের হিসাব–নিকাশ
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে মৌসুমের শেষ দিনে সব দল একই সময়ে খেলতে নামার রীতি অনেক দিন ধরেই। কারণ একটাই—কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে কোন দলকে কখন কী করতে হবে, সেই সমীকরণ আগেই জেনে না যাওয়া। ব্যাপারটিকে লিগ কর্তৃপক্ষের সব দলকে সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার উদাহরণ হিসেবেও দেখা হয়।
বছর ঘুরে আজ আবার এসেছে সেই দিন। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায় একসঙ্গে মাঠে নামছে প্রিমিয়ার লিগের ২০ দল। মৌসুমের শেষভাগে এসে আর্সেনালের অবিশ্বাস্য ছন্দপতনে ম্যানচেস্টার সিটি টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দিনটি আগের মৌসুমের মতো বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে না ঠিকই। তবে অবনমন এড়ানো আর কনফারেন্স লিগে জায়গা করে নিতে ছয় দলের লড়াইয়ে চোখ থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের।
জটিল হিসাব-নিকাশের মধ্য দিয়ে মৌসুমের শেষ দিনে প্রিমিয়ার লিগ যেভাবে রোমাঞ্চ ছড়াবে, তা দেখে নেওয়া যাক—
চ্যাম্পিয়নস লিগে যারা
ম্যানচেস্টার সিটি, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও নিউক্যাসল শীর্ষ চারে থেকে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের মূল পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে। ইউনাইটেড এক মৌসুম পর চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরতে চললেও আর্সেনালের প্রত্যাবর্তন হচ্ছে ছয় বছর পর। নিউক্যাসলের অপেক্ষাটা আরও বেশি—২০ বছর!
শীর্ষ চার নিশ্চিত হলেও এখানে ছোটখাটো একটা লড়াই আছে। সেটা তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান নির্ধারণের। সিটি ও আর্সেনাল অনেক আগেই শীর্ষ দুইয়ে থাকা নিশ্চিত করেছে। ৮৯ ও ৮২ পয়েন্ট নিয়ে পেপ গার্দিওলা ও মিকেল আরতেতার দল বাকিদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ৭২ পয়েন্ট নিয়ে ইউনাইটেড আছে তিনে, ৭০ পয়েন্ট নিয়ে নিউক্যাসল চারে।
আজ শেষ দিনে ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষ ফুলহাম। আর স্টামফোর্ড ব্রিজে নিউক্যাসল খেলবে চেলসির বিপক্ষে। জিতলে কোনো হিসাব-নিকাশ ছাড়াই তৃতীয় হবে ইউনাইটেড। তবে নিজেরা হারলে ও নিউক্যাসল জিতলে চতুর্থ হবে এরিক টেন হাগের দল। নিউক্যাসল জিতলে, এমনকি ড্র করলেও চারে থেকে লিগ শেষ করতে হবে রেড ডেভিলদের। কারণ, প্রিমিয়ার লিগে দলগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করা হয় গোল ব্যবধান দেখে। ইউনাইটেড ড্র করলে ও নিউক্যাসল জিতলে দুই দলেরই পয়েন্ট হবে সমান ৭৩। তবে নিউক্যাসল গোল পার্থক্যে এগিয়ে আছে।
শীর্ষ তিন আর চারের মধ্যে ফারাক সামান্য হলেও ব্যাপারটা একেবারে ফেলনা নয়। অবস্থানের দিক থেকে মর্যাদার ব্যাপার যেমন আছে, তেমনি আছে বাড়তি আর্থিক পুরস্কারের হাতছানি। তিনে থাকা দল যে চারে থাকা দলের চেয়ে ১১ লাখ ইউরো বা ১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা বেশি পায়!
ইউরোপা লিগে যারা
চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো ইউরোপা লিগেরও রফাদফা হয়ে গেছে। ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে থাকা লিভারপুল ও ৬২ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে থাকা ব্রাইটন আগামী মৌসুমে ইউরোপা লিগ খেলবে।
ছয় মৌসুম পর চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ইউরোপা লিগে নেমে যাওয়ার ঘটনা লিভারপুলের জন্য সুখকর না হলেও ব্রাইটনের জন্য এ এক অনন্য অর্জন। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উয়েফা আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিয়েছে ক্লাবটি। অথচ এক যুগ আগেও তারা ছিল ইংলিশ ফুটবলের তৃতীয় স্তরের দল!
ইংল্যান্ড থেকে আগামী মৌসুমে ইউরোপা লিগের মূল পর্বে জায়গা করে নিতে পারে ওয়েস্ট হামও। লিগের পয়েন্ট তালিকায় এই মুহূর্তে ১৪ নম্বরে থাকলেও ইউরোপে মহাদেশীয় ক্লাব ফুটবলের তৃতীয় মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা কনফারেন্স লিগের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ওয়েস্ট হাম। আগামী ৭ জুন শিরোপার লড়াইয়ে ইতালির ফিওরেন্তিনাকে হারাতে পারলেই পরের মৌসুমে ইউরোপা লিগ খেলবে লন্ডনের ক্লাবটি।
কনফারেন্স লিগে খেলতে পারে যে দল
উয়েফার সর্বশেষ সংযোজন কনফারেন্স লিগে ইংল্যান্ড থেকে দুটি ক্লাবকে সুযোগ দেওয়া হয়। একটি লিগ কাপের চ্যাম্পিয়ন, অন্যটি প্রিমিয়ার লিগ পয়েন্ট তালিকার সাতে থাকা দল। এ মৌসুমে লিগ কাপ জিতেছে ইউনাইটেড। তবে তারা শীর্ষ চারে থেকে লিগ শেষ করতে চলায় চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলবে। তাই আগামী মৌসুমে ইংল্যান্ড থেকে কনফারেন্স লিগে খেলবে একটিমাত্র দল। এখানেই চলছে জমজমাট ত্রিমুখী লড়াই।
এ মুহূর্তে ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগ পয়েন্ট তালিকার সাতে আছে অ্যাস্টন ভিলা। ৫৭ ও ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে ভিলাকে তাড়া করছে টটেনহাম ও ব্রেন্টফোর্ড। আজ শেষ দিনে ভিলা খেলবে ইউরোপা নিশ্চিত করা ব্রাইটনের বিপক্ষে, ব্রেন্টফোর্ডের প্রতিপক্ষ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। সে তুলনায় অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছে টটেনহাম। হ্যারি কেইন-রিচার্লিসনরা খেলবেন অবনমন অঞ্চলে থাকা লিডসের বিপক্ষে।
ভিলা জিতলে কোনো সমীকরণ ছাড়াই কনফারেন্স লিগে জায়গা করে নেবে। তবে ভিলা হারলে, ব্রেন্টফোর্ড পয়েন্ট হারালে আর টটেনহাম ড্র করলে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে কনফারেন্স লিগের টিকিট পাবে টটেনহাম।
ভিলা ও টটেনহাম পয়েন্ট হারালে এবং নিজেরা জিতলেই কেবল কনফারেন্স লিগে খেলতে পারবে ব্রেন্টফোর্ড। ভিলা ড্র করলে ও ব্রেন্টফোর্ড জিতলে দুই দলেরই পয়েন্ট হবে সমান ৫৯। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে আছে ব্রেন্টফোর্ড।
অবনমন এড়ানোর লড়াইয়ে যারা
শেষ দিনে ইংল্যান্ডের বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমীর চোখ থাকবে তলানির দলগুলোর দিকে। প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয় তিনটি দল। এরই মধ্যে ২০তম স্থান নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে গেছে সাউদাম্পটন। অবনমনের বাকি দুটি স্থান ১৮ ও ১৯তম স্থানে আছে যথাক্রমে লেস্টার সিটি ও লিডস ইউনাইটেড। দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ৩১ করে।
পয়েন্ট তালিকার ১৭তম স্থান নিরাপদ হলেও সেখানে খুব একটা স্বস্তিতে নেই এভারটন। কারণ, লেস্টার ও লিডসের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র ২। মানে আজ বোর্নমাউথের কাছে হেরে গেলে সমীকরণ পাল্টে অবনমন হয়ে যেতে পারে এভারটনেরও। এমনকি এভারটন ড্র করলেও গোল পার্থক্যে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্তরে নেমে যেতে পারে, যদি লেস্টার আজ ঘরের মাঠ কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট হামকে হারিয়ে দেয়।
অথচ লেস্টার, লিডস, এভারটন—তিন ক্লাবই ইংল্যান্ডের শীর্ষ স্তরের লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়ন! মৌসুমে শেষ ম্যাচের পর লিগ শিরোপা জয়ের রঙিন উৎসব হয়েছে তাদের শহরে। কিন্তু সময়ের চাকা ঘুরে রঙিন দিনগুলো এখন ধূসর। শিরোপা দূরে থাক, দেশটির শীর্ষ লিগে টিকে থাকাই দল তিনটির জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বড় সংগ্রাম।