এবার ‘রিয়াল-বান্ধব’ রেফারিদের তালিকা প্রকাশ
রেফারিকে অনৈতিকভাবে টাকা দেওয়ার অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকেও টেনেছেন বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা। পরশু সংবাদ সম্মেলনে লাপোর্তা ‘বার্সা কোনো অপরাধ করেনি’—এ দাবির পাশাপাশি রিয়ালকে ‘ক্ষমতাসীনদের দল’ বলেও মন্তব্য করেন।
খেলাধুলায় কেউ সুবিধা পেয়ে থাকলে সেটা রিয়ালই পেয়ে আসছে এবং ‘৭০ বছর ধরে’ এভাবে চলে আসার অভিযোগও করেন লাপোর্তা। রিয়ালও তেতে উঠেছে। ক্লাবের অফিশিয়াল চ্যানেল রিয়াল মাদ্রিদ টিভির এক ভিডিওতে ঠিকই এর উত্তর দেওয়া হয়েছে। একটি ভিডিও চিত্র দেখিয়ে চ্যানেলটির পক্ষ থেকে বার্সাকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ‘ক্ষমতাসীনদের দল আসলে কারা?’
এ লড়াইয়ের মধ্যেই স্পেনের দুটি সংবাদমাধ্যম লাপোর্তার অভিযোগের সত্যতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। ‘লা ভ্যানগার্দিয়া’ ও ‘মুন্দো দেপোর্তিভো’ স্পেনের রেফারিং কমিটির প্রধান পদটির সঙ্গে রিয়ালের যোগসূত্র খুঁজে বের করেছে। তারা একটি তালিকা করেছে, যেখানে রেফারি কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ১০ জন কোনো না কোনোভাবে রিয়ালের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
আসলে দ্বন্দ্বটা এখন শুধু লা লিগা বনাম বার্সার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। তা বার্সা বনাম রিয়ালও হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সে জন্য পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে রিয়ালের পক্ষ থেকে। বার্সেলোনা সভাপতি বলেছিলেন, ‘আমি একটি ক্লাবের কথা বলতে চাই। ক্লাবটি রিয়াল মাদ্রিদ। এ ক্লাব ঐতিহাসিকভাবে সব সময় সুবিধা পেয়ে এসেছে এবং এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ক্লাব। আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ৭০ বছর ধরে রেফারিদের যাঁরা নিয়োগ দিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগ হয় রিয়ালের পরিচালক, সদস্য কিংবা খেলোয়াড় ছিলেন। সেই রিয়াল মাদ্রিদ এ মামলায় নিজেদের উপস্থাপন করেছে এভাবে যে খেলাধুলায় দুর্নীতির শিকার হচ্ছে। এটা আসলে চিন্তার দৈন্যের সর্বোচ্চ প্রকাশ।’
বার্সার বিরুদ্ধে রেফারিকে অনৈতিকভাবে টাকা দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে গত মাসে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছিল রিয়াল। ক্লাবটির বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, এ ঘটনায় রিয়ালও ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হবে। তারপর কাল এ বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে রিয়ালকে ধুয়ে দেন লাপোর্তা। আর মাদ্রিদের ক্লাবটির টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওতেও বার্সাকে পাল্টা অভিযোগ দিয়ে বলা হয়, ‘ক্যাম্প ন্যুর উদ্বোধন করেন ফ্রাঙ্কোর মন্ত্রী জোসে সলিস রুইজ। বার্সেলোনা ফ্রাঙ্কোকে ১৯৬৫ সালে সম্মানসূচক সদস্য পদ দেয় এবং তিনটি অনুষ্ঠানে তাঁকে পুরস্কার প্রদান করে।’ ক্যাম্প ন্যুর ক্লাবটিকে ফ্রাঙ্কো তিনবার দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছে রিয়াল টিভি। অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের দল যে আসলে বার্সা—পাল্টা অভিযোগে প্রকাশ করা ভিডিওতে সেটা দাবি করা হয় রিয়ালের পক্ষ থেকে।
এর মধ্যে স্পেনের দুটি সংবাদমাধ্যমের প্রকাশ করা তালিকা বিতর্ককে নতুন করে যে উসকে দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রিয়ালের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত রেফারিং কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করা সেই ১০ জনের নাম একবার জেনে নেওয়া যাক—
১. আলফানসো আলবেনিজ জোর্দানা—বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদে খেলেছেন। পরে রিয়ালের পরিচালক হন।
২. কার্লোস ভিয়েস্তা ভেগা—রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক খেলোয়াড় ও পরিচালক।
৩. লুইজ কলিনা আলভারেজ—রিয়াল মাদ্রিদের সদস্য ও পরিচালক। রিয়ালের স্টেডিয়ামের পরিচালক পদেও ছিলেন।
৪.আন্তনিও দে কারসের—রিয়াল মাদ্রিদের সদস্য ও পরিচালক ছিলেন।
৫. জুলিয়ান রুয়েতে মিনুয়েসা—রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়, সদস্য ও পরিচালক ছিলেন।
৬. ইউলোজিও আরানগুরেন—রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক খেলোয়াড়।
৭. এমিলিও সুয়ারেজ মার্সেলো—রিয়াল মাদ্রিদের সদস্য ছিলেন।
৮. লুইস সাউরা দেল পান—রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় ও সদস্য ছিলেন।
৯. আরতুরো লোপেজ এসপিনোসা—রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমি থেকে উঠে এসে পেশাদার খেলোয়াড় হন।
১০. হোসে প্লাজা—১৯৬৭ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত রেফারিং কমিটির প্রধান ছিলেন।রিয়ালের সাবসিডিয়ারি দল প্লাস আল্ট্রায় খেলেছেন। হোসে প্লাজা ঘোষণা করেছিলেন, রেফারিং কমিটির প্রধান হিসেবে তাঁর মেয়াদে বার্সেলোনা কখনো লিগ জিততে পারবে না। বার্সেলোনা তাঁর মেয়াদে দুবার লিগ জিতেছে।
বার্সার বিরুদ্ধে যে রেফারিকে টাকা দেওয়ার অভিযোগ গঠন করেছেন স্পেনের আইনজীবিরা, তাঁর নাম হোসে মারিয়া এনরিক নেগ্রেইরা। তিনি স্প্যানিশ রেফারিং কমিটির সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানকে বেআইনিভাবে ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭৩ লাখ ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৪ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা) দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্পেনের আইনজীবীরা এ নিয়ে বার্সার বিরুদ্ধে খেলাধুলায় দুর্নীতি ও ব্যবসায়িক কাগজপত্র জালিয়াতির অভিযোগ তুলে মামলা করেছেন। উয়েফাও এ অভিযোগের তদন্ত করছে।
বার্সা বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, রেফারিকে দিয়ে দুর্নীতি করাতে এ টাকা দেওয়া হয়নি। খেলোয়াড় ও রেফারিং নিয়ে কৌশলগত পরামর্শের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছিল কাতালান ক্লাবটি। আর কাল ক্লাবটির সভাপতি তো বলেই দিলেন, ‘খেলায় অন্যায় সুবিধা পাওয়া যাবে, এমন কোনো কাজ কখনো করেনি বার্সা।’