এশিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু আজ
১৩ মাসও হয়নি লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ জয়ের। সেই স্মৃতি টাটকা থাকতে থাকতেই আজ থেকে আবার ফুটবল উৎসবে মেতে উঠছে মেসিদের বিশ্বজয়ের মঞ্চ কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এবার এশিয়ার মহাদেশীয় ফুটবল–শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। যে লড়াইয়ে নামছে ২৪টি দল। ২০২২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা, স্পেন ও জার্মানিকে হারিয়ে হইচই ফেলে দেওয়া সৌদি আরব-জাপান যেমন আছে, তেমনি এশীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে আছে ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্ষতবিক্ষত ফিলিস্তিনও। আছে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি ভারতও।
মেসিরা যে স্টেডিয়ামে মহাকাব্যিক এক ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্ব জয় করেছেন, সেই লুসাইল স্টেডিয়ামে আজ কাতার-লেবানন ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে ৩০ দিনের ফুটবল উৎসবের।
ক্যালেন্ডারের পাতায় ২০২৪ সালটা আসার পরই মাঠে গড়াচ্ছে এশিয়ান কাপের ১৮তম আসর। তবে কাগজে-কলমে এবারের টুর্নামেন্টের নাম ২০২৩ এএফসি এশিয়ান কাপ। কারণ, টুর্নামেন্টটি ২০২৩ সালে চীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ নিয়ে চীনের কঠোর বিধিনিষেধের কারণেই তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কাতারে।
বিশ্বকাপের মঞ্চে এশীয় শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান ধরে রাখার লড়াই স্বাগতিক কাতারের। ২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ এশিয়ান কাপটা জিতেছে কাতার। তবে নিজ দেশে এবার ফেবারিট নয় কাতারিরা। ফেবারিট হিসেবে নাম আসছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, ইরান ও অস্ট্রেলিয়ার।
হট ফেবারিট অবশ্য জাপান। এশিয়ান কাপের সবচেয়ে সফল দলটি ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও এশিয়ার সেরা দল। টানা ১০টি ম্যাচ জিতে কাতারে যাওয়া দলটির পঞ্চম এশিয়া কাপ জয় নিয়েই বাজির দরটা সবচেয়ে বেশি।
জাপানের পথে যারা বাধা হতে পারে, তাদের এক দল সৌদি আরব কোচ হিসেবে নিয়ে এসেছে রবার্তো মানচিনিকে। সেই মানচিনি, যাঁর কোচিংয়েই চার বছর আগে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইতালি। ইউরোপের পর ইতালিয়ান কোচের ওপর এখন এশিয়া জয়েরও গুরুদায়িত্ব। চাপটাও অনেক বেশি। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, করিম বেনজেমাদের মতো তারকাদের সৌদি প্রো লিগে নিয়ে এসে ফুটবল–বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে সৌদিরা। ঘরোয়া ফুটবলকে তারার হাট বানানোর সুফল জাতীয় দলেও পড়েছে, সেটি প্রমাণের দায়িত্ব সৌদি আরবের। চাপটা কমাতে মানচিনি আগেই বলে দিয়েছেন, ‘সৌদি জাতীয় দল ফেবারিট নয়। কাগজে-কলমে আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দলের অভাব নেই। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া ইউরোপে রপ্তানি করা ফুটবলারদের নিয়েই নামছে। জাপানের কোচ হাজিমে মোরিয়াসু তো এশিয়া কাপ ছাড়িয়ে চোখ রেখেছেন আরও উঁচুতে, ‘আমি তো বলে আসছি, এশিয়ান কাপ জয়েই চোখ আমাদের। তবে এটা আমাদের ছোট ও মাঝারি মানের লক্ষ্য। সবচেয়ে বড় লক্ষ্যটা ২০২৬ বিশ্বকাপ।’
এবারের এশিয়ান কাপে সবচেয়ে বড় তারকা সন হিউং-মিনের কাঁধে জাপানিদের চেয়েও বড় ভার। টটেনহাম তারকার দক্ষিণ কোরিয়া যে ১৯৬০ সালের পর আর এশিয়ান কাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১২ গোল করা সন কি কোরীয়দের ৬৪ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারবেন? সেই অভিযানে জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী স্ট্রাইকার ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানকে কোচ হিসেবে পেয়েছে কোরিয়া। ২০১৩ সালে কোচ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে কনক্যাকাফ গোল্ডকাপ জেতানো ক্লিন্সমান মনে করছেন, এবারই সময়, ‘৬৪ বছর—কোরিয়ার জন্য ৬৪ বছর অনেক লম্বা সময়। এখন সময় হয়েছে সেটি (অপেক্ষার) অবসানের।’
দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধি ভারত টানা দ্বিতীয়বার খেলছে এশিয়ান কাপে। গতবার অবশ্য গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল দলটি।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিন টানা তৃতীয়বারের মতো অংশ নিচ্ছে এশিয়ান কাপে। ইরান, আরব আমিরাত ও হংকংয়ের গ্রুপে পড়া ফিলিস্তিনিরা খেলার মাঠে কতটা মন দিতে পারবে, প্রশ্ন আছে এ নিয়েও। দলটির কোচ মাকরাম দাবুবও স্বীকার করেছেন, খেলোয়াড়দের মন পড়ে আছে দেশে, ‘সবাই অনুশীলনের আগে-পরে খবর দেখতে বসে যায়, সেটি টিম বাসে যেমন, তেমনি হোটেলে ফিরেও।’