আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স
যেমন হবে দুই দলের কৌশল
ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মেসিকে ঠেকানো। একইভাবে আর্জেন্টিনার চ্যালেঞ্জটা এমবাপ্পেকে সামলানো।
কথাটা বলেছিলেন মাইক টাইসন, ‘পরিকল্পনা সবারই থাকে, মুখে ঘুষিটা এসে পড়ার পর সব এলোমেলো হয়ে যায়।’
বক্সিং রিংয়ে কথাটা যেমন সত্যি, তেমনি ফুটবল মাঠেও। বিশ্বকাপের ফাইনালে তো আরও বেশি। সেখানে অবশ্য ঘুষি এসে পড়ে না মুখে, পাল্টা কৌশলের ফাঁদে পড়ে বা গোল খেয়ে এলোমেলো হয়ে যেতে পারে যেকোনো দলের পরিকল্পনা।
তারপরও আজ লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনালে অনেক পরিকল্পনা নিয়েই নামবেন আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের কোচ লিওনেল স্কালোনি ও দিদিয়ের দেশম। ম্যাচের আগে দেশমের কাজটাই একটু সহজ মনে হচ্ছে। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে প্রায় একই ছকে খেলেছে ফ্রান্স। ৪-২-৩-১ ছকের সেই খেলা সাফল্যও এনে দিয়েছে। হ্যাঁ, কিছু ফাঁকফোকরও বেরিয়েছে কৌশলে, বিশেষ করে মরক্কোর বিপক্ষে সেমিফাইনালে।
কিন্তু সেটা এত ভয় পাওয়ার মতো কিছু নয় যে দেশমকে আজ তাঁর একাদশ বদলে ফেলতে হবে। অবশ্য ক্যামেল ভাইরাসের কারণে পছন্দের ১১ জনের কারও যদি মাঠে না নামার মতো অবস্থা হয়, তাহলে অন্য কথা।
স্কালোনি সেই তুলনায় অনেক বেশি অননুমেয়। প্রতিটি ম্যাচেই ছক বদলাচ্ছেন। কখনো ৪-৩-৩, কখনো ৩-৫-২ বা ৫-৩-২, আবার কখনো ৪-৪-২। তাঁর জন্য সুখবর হচ্ছে, সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটার পর থেকে যে কৌশলই নিচ্ছেন তিনি, সব লেগে যাচ্ছে। বলা যায়, বিশ্বকাপে আসলে কোচ হিসেবে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন স্কালোনি।
আজ স্কালোনি নতুন কোনো চমক দেখান কি না, সেটাই এখন দেখার। আপাতত যা মনে হচ্ছে, গোলবারের এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সামনে নাহুয়েল মলিনা, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, নিকোলাস ওতামেন্দি, মার্কোস আকুনিয়া; মাঝমাঠে রদ্রিগো দি পল, এনজো ফার্নান্দেজ ও অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার; সামনে লিওনেল মেসি ও হুলিয়ান আলভারেজ—এই ১০ জন নিশ্চিত। এখন ৫-৩-২ ছকে খেলালে একাদশে আসবেন লিসান্দ্রো মার্তিনেজ। ৪-৩-৩ বা ৪-৪-২ হলে আনহেল দি মারিয়া বা লিয়ান্দ্রো পারেদেস।
ফ্রান্সের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মেসিকে ঠেকানো। একইভাবে আর্জেন্টিনার চ্যালেঞ্জ এমবাপ্পে। যে জায়গাটা দিয়ে মেসি বেশি নড়াচড়া করেন, সেটা থিও এরনান্দেজ-আদ্রিয়াঁ রাবিও-অরেলিয়েঁ চুয়ামেনির এলাকা। এই তিনজনকেই তাই সতর্ক থাকবে হবে। অন্যদিকে এমবাপ্পেকে সামলানোর মূল দায়িত্বটা আর্জেন্টাইন রাইটব্যাক নাহুয়েল মলিনার।
কিন্তু ফরাসি স্ট্রাইকারের গতি এত বেশি, তাঁর সঙ্গে পেরে ওঠা যেকোনো ডিফেন্ডারের জন্যই কঠিন। তারপরও কোয়ার্টার ফাইনালে কাইল ওয়াকার ও সেমিফাইনালে মরক্কোর আশরাফ হাকিমি দেখিয়েছেন, সাময়িকভাবে হলেও এমবাপ্পেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা যায়। সে জন্য ওয়াকার কিছুটা নিচে নেমে এমবাপ্পের রাস্তা বন্ধ করেছিলেন। মরক্কো সাময়িকভাবে সফল হয়েছে এরনান্দেজের সঙ্গে এমবাপ্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে।
তাতেও আসলে আর্জেন্টিনার সমস্যা সমাধান হয় না। কারণ, ফ্রান্স দলে একজন আঁতোয়ান গ্রিজমান খেলেন, যাঁকে বিশ্বকাপে সম্ভবত গোলকিপিং ছাড়া বাকি সব জায়গাতেই দেখা গেছে। গ্রিজমানকে নড়চাড়ার যত কম সুযোগ দেওয়া যাবে, আর্জেন্টিনার ততই মঙ্গল। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এনজো ফার্নান্দেজকে বিশ্বকাপের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে।