সিটির বিরুদ্ধে খেলাধুলায় ‘শতাব্দীর আলোচিত বিচার’ শুরু সোমবার
এক দিকে প্রিমিয়ার লিগ, আরেক দিকে এই লিগের সর্বশেষ চার আসরের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি—শুরু হতে চলেছে ইংলিশ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও বিতর্কিত বিষয়ের আইনি লড়াই। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি যেটিকে ‘খেলাধুলার শতাব্দীর আলোচিত বিচার কার্যক্রম’ বলে অভিহিত করেছে।
ইংল্যান্ডের লিগে খেলা সিটির মালিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজপরিবারের এক সদস্য। একই মালিকানায় বিশ্বের পাঁচ মহাদেশে আছে আরও ১২টি ক্লাব। ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে আর্থিক নীতিমালা ভঙ্গের ১১৫টি অভিযোগ গঠন করেছে লিগ কর্তৃপক্ষ। আগামী সোমবার এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শুরু হচ্ছে। একটি স্বাধীন প্যানেল ১০ সপ্তাহের মধ্যে শুনানি কার্যক্রম শেষ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রায় পাওয়া যাবে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে।
শুরুটা কবে কীভাবে
সিটির বিরুদ্ধে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে ২০১৮ সালে। ২০০৯–১০ থেকে ২০১৭–১৮ পর্যন্ত বিষয়গুলো তখন আমলে নেওয়া হয়। পরে তদন্ত কার্যক্রমের সময় যুক্ত হয় অসহযোগিতার অভিযোগও। সব মিলিয়ে ১৪ বছরের ১৫৫টি অভিযোগ এবং ৬ বছরের তদন্ত শেষে বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
অভিযোগগুলো কী
* ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে আছে—
২০০৯–১০ থেকে ২০১৭–১৮ মৌসুমে যথাযথ আর্থিক তথ্য প্রদানের ব্যর্থতায় ৫৪টি অভিযোগ
* ২০০৯–১০ থেকে ২০১৭–১৮ মৌসুমে খেলোয়াড় ও ম্যানেজারকে দেওয়া অর্থের বিস্তারিত তথ্য প্রদানে ব্যর্থতায় ১৪টি অভিযোগ
* ২০১৩–১৪ থেকে ২০১৭–১৮ মৌসুমে আর্থিক সংগতি নীতিসহ উয়েফা নীতিমালা পরিপালনে ব্যর্থতায় ৫টি অভিযোগ
* ২০১৫–১৬ থেকে ২০১৭–১৮ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের পিএসআর নীতিমালা ভঙ্গে ৭টি অভিযোগ
* ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি সময়ে প্রিমিয়ার লিগের তদন্তকারী দলকে সহযোগিতায় ব্যর্থতায় ৩৫টি অভিযোগ
প্রমাণিত হলে কী হতে পারে
অভিযোগগুলো প্রমাণিত হওয়ার অর্থ সিটি নিয়ম–নীতি ভঙ্গ করেছে। আর সেই ভঙ্গের সুফল হিসেবে দলটি অভিযুক্তকালীন সময়ে টানা তিনটিসহ মোট ৭টি প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে, ২০২২–২৩ মৌসুমে জিতেছে ট্রেবলও। সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলটির জেতা ট্রফি বাদ যেতে পারে, জয়ী ঘোষণা করা হতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতাগুলোয় পরের অবস্থানে থাকা দলকে। এ ছাড়া প্রিমিয়ার লিগ থেকে নামিয়ে দেওয়া বা নির্দিষ্ট সময়ের নিষেধাজ্ঞাও দেখা যেতে পারে।
এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ঘটতে পারে পেপ গার্দিওলার সিটি ছেড়ে চলে যাওয়া, বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা শেখ মনসুরের ফুটবল থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা, এমনকি ‘স্পোর্টশ ওয়াশিং’ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেটিতে বড় ধাক্কা লাগা। সবচেয়ে বড় যে প্রভাব পড়তে পারে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তাদের অন্যতম বাণিজ্যসঙ্গী সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্কে অবনতি। সিটির মালিক শেখ মনসুরের ভাই এখন আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট।
বিপরীতে সিটি যদি অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পায়, প্রিমিয়ার লিগে আর্থিক নীতিমালা কঠোরভাবে পরিপালনের বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদে ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে।
সাজার দৃষ্টান্ত
ইউরোপীয় ফুটবল কর্তৃপক্ষ উয়েফা এখন পর্যন্ত দুবার ম্যানচেস্টার সিটিকে শাস্তি দিয়েছে। প্রথমটি ২০১৪ সালে, আর্থিক সংগতি নীতি ভঙ্গের দায়ে ৪ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড জরিমানা করা হয়। দ্বিতীয়বার ২০২০ সালে, সেবার ২০১২ থেকে ২০১৬ সময়ে স্পনসরদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানোয় সিটিকে উয়েফা প্রতিযোগিতা থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়, জরিমানা করা হয় ৩ কোটি রুপি।
এর বিরুদ্ধে সিটি ক্রীড়াবিষয়ক সর্বোচ্চ আদালত সিএএসে গেলে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় দলটিকে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে অসহযোগিতার দায়ে জরিমানা কমিয়ে ১ কোটি করা হয়।