এখানেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন পেপ গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটি নয়, আর্সেনালও নয়, এবার প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি জিতবে লিভারপুল। টানা চতুর্থ শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সিটি কোচের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘এটা আর আমাদের হাতে নেই।’ পরশু আর্সেনালের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর গার্দিওলা যা বলেছেন, তা আসলে লিগ পয়েন্ট তালিকারই অনুবাদ।
শীর্ষ তিন দলেরই ২৯টি করে ম্যাচ শেষ। এর মধ্যে ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে লিভারপুল, দুই পয়েন্ট পেছনে থেকে দুইয়ে আর্সেনাল। আর ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে সর্বশেষ তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন সিটি। ‘যারা প্রথমে আছে, তারাই ফেবারিট। আর্সেনাল দুইয়ে, আমরা তিনে’—এই হচ্ছে গার্দিওলার যুক্তি।
তবে সিটি কোচের যুক্তি বা পয়েন্ট তালিকার বর্তমান অবস্থাকে চূড়ান্ত ধরে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণও। ঠিক আগের মৌসুমেই ২৯ রাউন্ড শেষে আর্সেনাল ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ছিল। সমান ম্যাচে সিটির পয়েন্ট ছিল ৬৭। কিন্তু মৌসুম শেষে দেখা গেল ২৯ ম্যাচের পর পাঁচ পয়েন্ট পিছিয়ে থাকা সিটিই ৫ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে শিরোপাজয়ী!
এমন ওলট–পালটের অন্যতম কারণ ছিল নিজেদের মধ্যে পয়েন্ট কাটাকাটি আর শেষ দিকে গানারদের এলোমেলো হয়ে যাওয়া। এবারও তাই লিভারপুল এগিয়ে যেমন ঠিকই, তেমনি শেষ কথাটা বলে দেওয়া যাচ্ছে না এখনই। তবে শেষ দিকে কার সামনে কী অপেক্ষা করছে, প্রতিপক্ষ কারা, ম্যাচ কোথায়, অন্য প্রতিযোগিতাগুলোর ব্যস্ততা কতটা—এসব মিলিয়ে একটা আভাস পাওয়াই যায়।
শেষ ৯ ম্যাচের হিসাব আমলে নিলে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানেই আছে লিভারপুল। অ্যাস্টন ভিলা (চতুর্থ স্থান), টটেনহাম (পঞ্চম) আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (ষষ্ঠ) ছাড়া বাকি সব দলই নিচের দিকের। এর মধ্যে অ্যাস্টন ভিলা ও ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলতে হবে ওদের মাঠে গিয়ে। লিগে ইউনাইটেডের বিপক্ষে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল, একটিতে হার। গত মাসে দুই দলের সর্বশেষ লড়াইয়ে অবশ্য অতিরিক্ত সময়ে জিতেছে ইউনাইটেডই (এফএ কাপে)।
ট্রফি–জয়ের পথটা খুব বেশি কণ্টকাকীর্ণ নয় বলে কিছুটা স্বস্তি হওয়ারই কথা লিভারপুল কোচের। মৌসুম শেষে অ্যানফিল্ড ছাড়তে যাওয়া এই জার্মান কোচের মুখে তাই ট্রফি–সম্ভাবনা প্রশ্নে শোনা গেল উপভোগের মন্ত্র, ‘আমরা যদি সামনের সময় উপভোগ করি, তাহলে (ট্রফি জেতার) সুযোগ থাকবে। উপভোগ না করলেও সুযোগ থাকবে, যদিও সেটা কঠিন। যে কারণে এই সময়টা আমরা ইতিবাচক থাকারই চেষ্টা করব।’
ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছেন আর্সেনাল কোচ মিকেল আরতেতাও। লিভারপুলের মতো তাঁর দলের সামনেও ইউনাইটেড, টটেনহামের বিপক্ষে ম্যাচ বাকি। দুটি ম্যাচই প্রতিপক্ষের মাঠে। আছে অ্যাস্টন ভিলা, ব্রাইটন আর চেলসির বিপক্ষে নিজের মাঠে ম্যাচও। চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখ প্রতিপক্ষ হওয়ায় সেখানেও বাড়তি মনোযোগ রাখতে হবে আর্সেনালকে। ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার কথা ধরলে ম্যানচেস্টার সিটির চাপ অবশ্য আরও বেশি, প্রতিপক্ষের নাম যে রিয়াল মাদ্রিদ।
লিগে অবশ্য সিটির চ্যালেঞ্জ তুলনামূলক কমই। শেষ ৯ ম্যাচের মধ্যে বড় ম্যাচ টটেনহামের মাঠে। তবে লিগের শেষ দিনের ম্যাচ বলে এর আগেই নিজেদের ভাগ্য অনেকটাই জেনে যাবে তারা। নিজেদের কাজটা করে যাওয়ার পাশাপাশি অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া যে বিকল্প নেই!