রিয়াল মাদ্রিদ ২ : ০ চেলসি
এই ম্যাচটা শুরু হওয়ার আগে থেকেই করিম বেনজেমার। শুরুর বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেও তাঁরই। আর বল মাঠে গড়ানোর পর তো যেন অন্য কারও হওয়ার সুযোগই ছিল না। ম্যাচের আগে-পরে-মাঝে প্রতিটি ধাপেই একের পর এক মাইলফলক স্পর্শ করে গেলেন বেনজেমা।
তারকা স্ট্রাইকারের মাইলফলকময় রাতে রিয়াল মাদ্রিদও পেয়েছে দারুণ এক জয়। চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে চেলসিকে হারিয়েছে ২-০ ব্যবধানে।
প্রথমার্ধে এগিয়ে দেওয়া গোলটি করেন বেনজেমা। দ্বিতীয়ার্ধে ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া চেলসি পরের গোল হজম করে মার্কো আসেনসিওর কাছ থেকে। সেমিফাইনালিস্ট নিশ্চিতের দ্বিতীয় লেগ আগামী সপ্তাহে স্টামফোর্ড ব্রিজে।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর প্রথম লেগে বেনজেমা আলোচনায় ছিলেন আগে থেকেই। গত বছরের চ্যাম্পিয়নস লিগেও কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল-চেলসি। সে বার প্রথম লেগে হ্যাটট্রিক করেছিলেন বেনজেমা। এর পরও দ্বিতীয় লেগে জেতার জন্য রিয়ালকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ম্যাচের শেষ পর্যন্ত। ৯৬তম মিনিটে গোল করে রিয়ালকে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন ফরাসি স্ট্রাইকারই।
সেবারের দ্বিতীয় লেগ আর এবারের প্রথম লেগ আবার একই দিনে। ভালো শুরুর জন্য রিয়াল তাকিয়ে ছিল ছন্দে থাকা বেনজেমার দিকেই। কিক অফ বাঁশি বাজতে একটি মাইলফলকও স্পর্শ করেন তিনি। রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ এখন বেনজেমার (১৩০টি)। পেরিয়ে গেছেন সের্হিও রামোসকে, সামনে শুধু ইকার ক্যাসিয়াস (১৫০)।
ম্যাচসংখ্যায় মাইলফলক ছোঁয়া বেনজেমা গোলে নতুন কীর্তি গড়তে সময় নেন মাত্র ২১ মিনিট। পেয়ে যান গোলের দেখা।
এই গোলের প্রাথমিক অবদান অবশ্য দানি কারভাহাল আর ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের।
কারভাহাল আক্রমণে উঠে চিপ করে চেলসি ডিফেন্ডারদের মাথার ওপর দিয়ে ভিনিসিয়ুসের দিকে বল বাড়ান। ভিনিসিয়ুস পা বাড়িয়ে বল গোলমুখের দিকে পাঠালে রুখে দেন কেপা। তবে পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। সামনেই থাকা বেনজেমা বিনা বাধায় বল জালে জড়িয়ে দেন। আর এই গোলেই বেশ কয়েকটি মাইলফলক স্পর্শ করেন ৩৫ বছর বয়সী ফরাসি তারকা।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বশেষ ৯ নকআউট ম্যাচে এটি তাঁর ১৪তম গোল। আর সব মিলিয়ে ইউরোপ-সেরার মঞ্চে ইংলিশ ক্লাবগুলোর বিপক্ষে এটি ২০তম। চ্যাম্পিয়নস লিগে ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলোর বিপক্ষে এর চেয়ে বেশি গোল আছে শুধু লিওনেল মেসির (২৭)।
চেলসির বিপক্ষে গোলটি আবার এ বছর বেনজেমার ১৮তম। ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগে ২০২৩ সালে এর বেশি গোল আর কারও নেই। সমান ১৮টি আছে ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়ে তারকা আর্লিং হলান্ডের।
গোল হজমের পরের মিনিটেই অবশ্য পাল্টা আক্রমণে সমতায় সম্ভাবনা জাগায় চেলসি। রিসি জেমসের বাড়ানো বল ছোট ডি বক্স থেকে শট নেন রাহিম স্টার্লিং। তবে এগিয়ে আসা কোর্তোয়ার হাতে লেগে বল পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
অবশ্য চেলসির এক আক্রমণের বিপরীতে রিয়ালের আক্রমণ ছিল একাধিক। এর মধ্যে প্রথমার্ধে গোলের ভালো সম্ভাবনা জাগানো আক্রমণ ছিল ৪০ মিনিটে। লুকা মদরিচের ক্রসে ডেভিড আলাবার গা ছুঁয়ে চলে যাচ্ছিল গোল পোস্টে। যা প্রতিহত করে দেন চেলসি গোলরক্ষক কেপা। সব মিলিয়ে প্রথমার্ধেই চেলসি গোলমুখে আটটি শট লক্ষ্যে রাখে রিয়াল। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথমার্ধে চেলসির বিপক্ষে এর চেয়ে বেশি শট কেউ নিতে পারেনি।
বিরতির পরও রিয়ালের দাপট বজায় থাকে প্রথমার্ধের মতোই। ৪৮ মিনিটে বল নিয়ে চেলসি ডি বক্সে ঢুকে পড়েন রদ্রিগো। তবে পাশে পাশে লেগে থাকা কালিদু কুলিবালি শেষ মুহূর্তে বল নাগালে নিয়ে গোলরক্ষকের কাছে এগিয়ে দেন। পরের মিনিটে ফাঁকায় থাকা মদরিচকে বল বাড়ান বেনজেমা। ক্রোয়েশিয়া অধিনায়ক জোরের সঙ্গে কোনাকুনি শট নিলে বারের কয়েক ইঞ্চি ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।
রিয়ালের একের পর এক আক্রমণ সামাল দিতে গিয়ে ৫৮ মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় চেলসি। বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকতে যাওয়া রদ্রিগোকে পেছন থেকে টেনে ফেলে দিয়ে লাল কার্ড দেখেন বেন চিলওয়েল।
একজন কমে যাওয়ার পর রক্ষণে মনোযোগ বাড়ায় চেলসি। কম ব্যবধান নিয়ে বার্নাব্যু ছাড়ার ভাবনাও অবশ্য খুব একটা কাজে লাগেনি। ৭৪ মিনিটে বদলি নামা আসেনসিও অপ্রস্তুত চেলসি রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়িয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।
এই গোলের সহায়তাও ছিল ভিনিসিয়ুসের। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নিজেও গোলদাতার খাতায় নাম লেখানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। ৮৫ মিনিটে তাঁর নেওয়া শট চেলসি রক্ষণ রুখে দিলে হতাশই হতে হয় তাঁকে।
তবে দলের জয়ে ভিনিসিয়ুস শেষ পর্যন্ত উজ্জীবিতই। পরের লেগে দুই গোল আগলে রাখতে পারলেই আবারও সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ।