মোহামেডানের টানা সাত জয়, ৬ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে শীর্ষে

মোহামেডান খেলোয়াড়দের গোল উদ্‌যাপনবাফুফে

মঙ্গলবারই ফেডারেশন কাপের গ্রুপ ম্যাচে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের কাছে হেরে ফেডারেশন কাপে নিজেদের ভবিষ্যতই শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। প্রথম ম্যাচে রহমতগঞ্জের কাছে হেরেই সর্বনাশটা হয়েছে তাদের।

কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে পুরোপুরি অন্য রকম পারফরম্যান্সই সাদা–কালোদের। যে রহমগঞ্জের কাছে ফেডারেশন কাপে হেরেছিল মোহামেডান, আজ মুন্সিগঞ্জে তাদেরই ৩–১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই থাকল আলফাজ আহমেদের দল।

লিগের পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা রহমতগঞ্জের বিপক্ষে এই জয়ে তাদের সঙ্গে ৬ পয়েন্টের ব্যবধান তৈরি করেছে মোহামেডান। ৭ ম্যাচে ৭ জয়ে মোহামেডানের পয়েন্ট এই মুহূর্তে ২১। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রহমতগঞ্জের পয়েন্ট ১৬।

ম্যাচটা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন মোহামেডানের সমর্থকেরা। একে তো ফেডারেশন কাপে হার, তার ওপর গত মৌসুমে একটি ম্যাচে শেষ মুহূর্তের পেনাল্টি গোলে পুরান ঢাকার দলটির বিপক্ষে হার এড়ানো ড্র, আগের ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে ফেডারেশন কাপের হারটাও মোহামেডানকে মানসিকভাবে পিছিয়ে রেখেছিল।

এ মৌসুমে রহমতগঞ্জের পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত—সব মিলিয়ে ম্যাচটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রত্যাশা ছিল দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। লড়াইটা রহমতগঞ্জ অবশ্য করেছে, তবে মোহামেডানের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। গোলের সুযোগগুলো ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে এ ম্যাচে মোহামেডানের জয়ের ব্যবধানটা আরও বড় হতে পারত।

প্রথমার্ধে খেলাটা ছিল সমানে সমান। মোহামেডান যেমন আক্রমণ করেছে, রহমতগঞ্জও পিছিয়ে ছিল না। তবে গোলের সুযোগ তৈরি করেছে মোহামেডানই বেশি। রহমতগঞ্জের গোলকিপার আহসান হাবিব মোহামেডানের ফরোয়ার্ডদের সামনে বাধার দেয়াল হয়েই দাঁড়িয়েছিলেন। পুরো ম্যাচেই তিনি ভালো খেলেছেন। আহসান হাবিবের কারণেই রহমতগঞ্জ বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

ম্যাচের ৪৫ মিনিটে মোহামেডান গোল করে এগিয়ে যায়। তরুণ ফরোয়ার্ড রাজু আহমেদ জিশান পেছন থেকে পাওয়া থ্রু ধরে গোল করেন। যদিও গোলটি নিয়ে রহমতগঞ্জের আপত্তি ছিল। আপত্তির কারণ মোহামেডানের মালির স্ট্রাইকার সোলেমান দিয়াবাতে আগে থেকেই রহমতগঞ্জের বক্সের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যদিও রেফারি ও তাঁর সহকারীরা এখানে অফসাইডের কিছু দেখেননি।

এগিয়ে গিয়ে স্বস্তি পায়নি মোহামেডান। পরের মিনিটেই স্যামুয়েল বোয়েটাংকে বক্সের মধ্যে ফাউল করে রহমতগঞ্জকে পেনাল্টি উপহার দেন মোহামেডানের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় ইমানুয়েল টনি। যদিও সেই পেনাল্টি কাজে লাগাতে পারেনি রহমতগঞ্জ। নাবিব নেওয়াজ জীবনের নেওয়া পেনাল্টি ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন মোহামেডানের গোলকিপার সুজন হোসেন। প্রথমার্ধ শেষ হয় মোহামেডানের ১–০ গোলের অগ্রগামিতায়।

ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে দিয়াবাতে
বাফুফে

দ্বিতীয়ার্ধে পুরোপুরি অন্য মোহামেডানকে দেখেছে মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের দর্শক। যদিও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই রহমতগঞ্জের অধিনায়ক মোহাম্মদ সাঈদীর দূরপাল্লার শট কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান সুজন। ৬৪ মিনিটে মনজুর কুলিদিয়াতির তৈরি করা দারুণ একটি প্রতি–আক্রমণ থেকে বল পেয়ে বদলি নামা আরিফ হোসেন যে ক্রসটি করেন, তা থেকে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে মোহামেডানকে ২–০ গোলে এগিয়ে দেন সোলেমান দিয়াবাতে।

৬৮ মিনিটে রহমতগঞ্জকে একেবারে শেষ করে দেন ইমানুয়েল সানডে গোল করে (৩–০)। বাকি সময় মোহামেডান একের পর এক আক্রমণে উঠেছে। গোলকিপার আহসান হাবিবকে বেশ কয়েকবার একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন সোলেমান দিয়াবাতে ও আরিফ।

আরও পড়ুন

ম্যাচের ৮৫ মিনিটে রহমতগঞ্জের ঘানাইয়ান স্ট্রাইকার স্যামুয়েল বোয়েটাং গোল করে ব্যবধান কমান (৩–১)। এই গোলটির আগে রহমতগঞ্জ মোহামেডানের ওপর কিছুটা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। যদিও ম্যাচের বাকি সময়সহ যোগ করা সময়ে মোহামেডান আক্রমণে আক্রমণে রহমতগঞ্জকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল, কিন্তু গোলের ব্যবধান আর বাড়াতে পারেনি।

এদিকে ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে নাটকীয় এক ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করেছে ফর্টিস এফসি ও বাংলাদেশ পুলিশ এফসি। ৯০ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য থাকা ম্যাচটিতে দুটি গোলই হয়েছে যোগ করা সময়ে। ৯২ মিনিটে মোরশেদুলের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। পরের মিনিটেই ফর্টিসের ইউক্রেনিয়ান ফরোয়ার্ড ভ্যালেরির ফ্রি কিক থেকে বলে মাথা ছুঁইয়ে সমতা ফেরান পিয়াস নোভা। ম্যাচের বড় একটা অংশ ফর্টিস খেলেছে ১০ জন নিয়ে।

পুলিশ এফসি ও ফর্টিস এএফসি ম্যাচে দুটি গোলই হয়েছে যোগ করা সময়ে
বাফুফে

গাজীপুরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে আরেক ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ৪-১ গোলে হারিয়েছে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সকে। ১৭ মিনিটে ইমনের গোলে এগিয়ে যাওয়া ব্রাদার্স স্কোরলাইন ২-০ করেন মাহবুবুর রহমান সুফিল। ৪৪ মিনিটে সিফাতের গোলে ব্যবধান কমায় ঢাকা ওয়ান্ডারার্স।

দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করেও ব্রাদার্স গোলের ব্যবধান বাড়াতে পারছিল না। অবশেষে ৮৮ মিনিটে এলিটা কিংসলে ব্রাদার্সকে এগিয়ে দেন ৩-১ গোলে। ব্রাদার্সের চতুর্থ গোলটি আসে চেক সেনের পা থেকে, ম্যাচের যোগ করা সময়ে। এই জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগের পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকল ব্রাদার্স।