স্কালোনি মেসিকে হোয়াটসঅ্যাপে কী বার্তা পাঠিয়েছিলেন
যে ফুটবলার নিজের দেশকে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে নিয়ে গেছেন, যে ফুটবলার দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, অভিষেকে তিনিই মাঠে ৪০ সেকেন্ডের বেশি থাকতে পারেননি।
লিওনেল মেসির কথাই বলা হচ্ছে। ২০০৫ সালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল। মাঠে নেমেই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের কড়া ট্যাকলের শিকার হন তিনি। ১৮ বছর বয়সী মেসি মেজাজ হারিয়ে ওই হাঙ্গেরিয়ান খেলোয়াড়ের জার্সি টেনে ধরেন। রেফারি তাঁকে লাল কার্ড দেখান। আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির আন্তর্জাতিক অভিষেকই হয়েছিল চোখের পানি ফেলে।
হঠাৎ এ প্রসঙ্গ কেন? কারণ আছে, মেসির আন্তর্জাতিক অভিষেক ম্যাচটিতে আর্জেন্টাইন দলে ছিলেন আরেক ‘লিওনেল’। হ্যাঁ, লিওনেল স্কালোনি, আর্জেন্টিনার এখনকার কোচ। ছিলেন এখনকার সহকারী কোচ পাবলো আইমারও। মেসি লাল কার্ড খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ দুজন রেফারিকে ঘিরে ধরে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। মেসিকে দিয়েছিলেন সান্ত্বনা। মেসি ওই মুহূর্তটি কখনোই ভুলতে পারেননি।
সেই স্কালোনি আর আইমারের হাতে ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনা দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হলো। আর্জেন্টাইন ফুটবলের তখন দুঃসময়। ২০১৮ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতেই ব্যর্থ হয়েছে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেও গ্রুপ পর্বে মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছে আর্জেন্টিনা (নাইজেরিয়ার বিপক্ষে)। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করে বিশ্বকাপ শুরু করা মেসির দল দ্বিতীয় ম্যাচে ৩–০ গোলে পর্যুদস্ত ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। দ্বিতীয় রাউন্ডে কিলিয়ান এমবাপ্পে ‘খুন’ করেছেন আর্জেন্টিনা দলকে। যদিও ম্যাচটি ৪–৩ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের আগেও ব্যর্থতার মিছিলেই ছিল আর্জেন্টিনা দল। কোপা আমেরিকায় দুটি ফাইনাল হেরেছে। মেসিকে নিয়ে তখন সমালোচনার ঢেউ। মেসি মুক্তির উপায় খুঁজছিলেন। সিদ্ধান্তটা প্রায় নিয়েই ফেলেছেন—আর্জেন্টিনার জার্সিতে আর নয়। নিন্দুকেরা তখন যে ঠোঁট উল্টে মেসির নিবেদন নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।
এরপর আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নেন স্কালোনি। কিন্তু হোর্হে সাম্পাওলির পর আর্জেন্টিনার ফুটবল অনুরাগীরা চাচ্ছিলেন একজন ‘তারকা কোচ’। স্কালোনি কোনো বিচারেই তারকা কোচ ছিলেন না। আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ‘যুব কার্যক্রম’ দেখভাল করা সাধারণ একজন কোচ তখন তিনি। দায়িত্ব নিয়েই মেসিকে হোয়াটসঅ্যাপে একটা বার্তা পাঠিয়েছিলেন। খুব আবেগঘন কিছু ছিল না। লিখেছিলেন, ‘লিও! কেমন আছ? তোমার সঙ্গে কি আমি আর আইমার একটু দেখা করতে পারি?’
জাতীয় দল নিয়ে চরম হতাশার মধ্যেও স্কালোনির সেই বার্তায় সাড়া না দিয়ে পারেননি মেসি। কীভাবে পারবেন! স্কালোনি আর আইমারের প্রতি তাঁর যে অন্য রকম অনুরাগ। স্কালোনি মানুষ হিসেবে তাঁর প্রিয় ছিলেন সব সময়ই। আইমার তো ছিলেন মেসির আইডলই! মেসি নিজেই অনেকবার বলেছেন, আইমারকে দেখেই বড় হয়েছেন। পরে দুজনের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে মেসি আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। এরপরের ইতিহাস তো সবার সামনেই। মেসি–স্কালোনি জুটি বেঁধে আর্জেন্টিনাকে ২৮ বছর পর এনে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক শিরোপা। টানা ৩৬ ম্যাচে অজেয় থেকেছেন। ব্যর্থতার চোরাবালিতে ঘুরপাক খেতে থাকা দলকে বানিয়েছেন বিশ্বকাপ জয়ের উপযোগী। কাতারে দলকে তুলেছেন ফাইনালে।
নতুন ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মেসির নিশ্চয়ই মনে পড়ছে সেই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার কথা!