৯ বছরের দণ্ড ভোগ করতে আটক রবিনিও
রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক খেলোয়াড় রবিনিও গতকাল ব্রাজিলে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ২০১৩ সালে ইতালিতে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে রবিনিওকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেন ইতালির আদালত। রায়ের আগে রবিনিও ইতালি ছেড়ে যাওয়ায় ব্রাজিল সরকারকে শাস্তি কার্যকরের আহ্বান জানায় ইতালির সর্বোচ্চ আদালত। পরশু ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার আদালত রায় দেন, রবিনিওকে অবিলম্বে ব্রাজিলেই সাজা খাটতে হবে। এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাজাটা যেন এখনই না খাটতে হয় সেই চেষ্টা করেছেন রবিনিও। কিন্তু ৪০ বছর বয়সী সাবেক এই ফরোয়ার্ডের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক লুইস ফিউক্স। তিনি রায়ে বলেন, ‘শাস্তি বহাল আছে...তাই সে (রবিনিও) এই কারাভোগ শুরু করতে পারে।’
সান্তোসের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল শহরের ফেডারেল পুলিশ গতকাল স্থানীয় সময় রাতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘রবসন ডি সউজার (রবিনিও) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা হয়েছে। আসামির শারীরিক পরীক্ষা করা হবে (মেডিকেল লিগ্যাল ইনস্টিটিউটে) এবং শুনানিও হবে। এরপর তাকে সংশোধনাগারে পাঠাতে হবে।’
ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে খেলার সময় ২০১৩ সালে মিলানের এক নৈশ ক্লাবে আলবেনিয়ান এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে রবিনিওর বিরুদ্ধে। সেই নারী নিজের ২৩তম জন্মদিন উদ্যাপন করতে ওই নৈশ ক্লাবে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে ইতালিতে মামলা এবং ২০১৭ সালে রায় হওয়ার পর ২০২০ সালে আপিলে হেরে যান রবিনিও। ইতালির সর্বোচ্চ আদালত ২০২২ সালে রবিনিওর শাস্তি বহাল রাখার পর তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ইতালিয়ান কৌঁসুলিরা।
বিদেশে অপরাধ সংঘটনের পর ব্রাজিলের কোনো নাগরিক তাঁর দেশে ফিরলে বিদেশের বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁকে হস্তান্তর করে না দেশটির সরকার। তাই ইতালির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রবিনিওর শাস্তি যেন ব্রাজিলেই কার্যকর করা হয়। আর সেটারই চূড়ান্ত রায় হিসেবে গত বুধবার ইতালির সর্বোচ্চ আদালতের দাবির সঙ্গে একমত হয় ব্রাসিলিয়ার আদালত। অর্থাৎ, রবিনিওকে ব্রাজিলেই ৯ বছর সাজা খাটতে হবে। ৯-২ ভোটে এ বিষয়ে একমত হয় ব্রাসিলিয়ার আদালত। গতকাল আদালতের সভাপতি মারিয়া থেরেজা ডি আসিস মউরা কাগজপত্রে সই করার পর রবিনিওর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
রবিনিওর আইনজীবী ব্রাসিলিয়ার আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ‘হেবিয়াস কর্পাস’ রায় পেতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন যেন তাঁর মক্কেল মুক্ত থাকতে পারেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।
রবিনিও শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন। ব্রাজিলের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ‘রেকর্ড’-এ গত রোববার প্রচারিত সাক্ষাৎকারে রবিনিও দাবি করেন, ওই নারীর সঙ্গে সবকিছু পারস্পরিক সম্মতিতেই হয়েছিল। এ ছাড়া তিনি ইতালির বিচারিক ব্যবস্থাকে ‘বর্ণবাদী’ আখ্যা দিয়েছেন।
ব্রাজিলের হয়ে ১০০ ম্যাচে ২৮ গোল করেছেন রবিনিও। অমিত প্রতিভার জন্য এক সময় তাঁকে ‘পরবর্তী পেলে’ হিসেবেও দেখেছেন কেউ কেউ। রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি ও এসি মিলানের মতো ক্লাবে খেললেও নিজের নামের সুবিচার করতে পারেননি রবিনিও। রিয়াল ও সিটির হয়ে লিগ জিতেছেন যদিও। ২০২০ সালে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরলেও তাঁকে মাঠেই নামতে দেওয়া হয়নি। ধর্ষণের অভিযোগ থাকায় ফুটবলের সমর্থক, পৃষ্ঠপোষক ও সংবাদমাধ্যমের চাপে সান্তোস তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।