পিএসজির দায়িত্ব এখন নেইমারের কাঁধে
লিওনেল মেসির বিদায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভেঙে যায় ‘এমএনএম’ ত্রিফলা। মেসি ইন্টার মায়ামিতে চলে যাওয়ার পর পিএসজির স্বপ্নসারথি হিসেবে টিকে ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে ও নেইমার। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে পিএসজিকে মেসির চেয়েও বড় ধাক্কা দেন এমবাপ্পে। চিঠি দিয়ে ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের জানিয়ে দেন তিনি আর চুক্তি নবায়ন করবেন না। আগের চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালে মেয়াদ শেষ করে তিনি ক্লাব ছাড়তে চান। তাঁর এই চিঠিতে ঝড় ওঠে পিএসজিতে।
ক্লাবটি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে জানিয়ে দেয়, ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ক্লাব ছাড়ার সুযোগ নেই। হয় চুক্তি নবায়ন করতে হবে, নয়তো এই গ্রীষ্মেই খুঁজে নিতে নতুন ঠিকানা। এমবাপ্পের চিঠি পাঠানোর দিন থেকে এখন পর্যন্ত জল ঘোলা হয়েছে অনেক। এর মধ্যে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল থেকে ৩০ কোটি ইউরোর প্রস্তাবও পেয়েছেন ফরাসি তারকা। পরিস্থিতি সব মিলিয়ে এখন এমন পর্যায়ে যে পিএসজিতে তাঁর থেকে যাওয়াটা এবার অলৌকিক কিছুই হবে। আর এমবাপ্পেও যদি শেষ পর্যন্ত পিএসজি ছাড়েন, তবে ক্লাবের সবচেয়ে বড় তারকা হিসেবে থাকবেন নেইমার, যাঁকে দিয়েই মূলত শুরু হয়েছিল পুরো চক্রটির।
২০১৭ সালে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে দামের রেকর্ড গড়ে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে আসেন নেইমার। এর কদিন পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড় হিসেবে প্যারিসের ক্লাবটিতে আসেন এমবাপ্পে। এই দুজনকে দিয়েই মূলত ইউরোপ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল পিএসজি। কিন্তু এই দুই বিশ্বসেরা তারকা মিলেও পিএসজিকে গত ছয় বছরে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে পারেননি। ২০১৯-২০ মৌসুমে পিএসজিকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তুললেও শিরোপা এনে দিতে ব্যর্থ হন নেইমার-এমবাপ্পে।
একপর্যায়ে শুরু হয় দুজনের অহমের দ্বন্দ্বও। শুরুতে নেইমারকে নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা জানালেও, ধীরে ধীরে ব্রাজিলিয়ান তারকার সঙ্গে চরমে ওঠে এমবাপ্পের বিরোধ। চোট ও ছন্দহীনতায় নেইমার পিছিয়ে গেলে পিএসজিতে এমবাপ্পের দাপটও বেশ বাড়তে শুরু করে। মাঝখানে নেইমারের ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পিএসজি ছাড়া না হলেও কিছুটা আড়ালেই পড়ে যান নেইমার।
অন্যদিকে দাপুটে ফুটবলে এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে গিয়ে স্বপ্নপূরণের পথেও অনেক দূর এগিয়ে যান। কিন্তু এমবাপ্পেকে মরিয়া চেষ্টায় রেখে দেয় পিএসজি। এর মধ্যে ২০২১ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে আসেন মেসিও। পিএসজির সমর্থকেরাও এ সময় তিনজনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু কথায় যে বলে, ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’ পিএসজিতে দেখা দেয় একই সমস্যা।
মেসি প্যারিসের ক্লাবটিতে কখনোই থিতু হতে পারেননি। আর এমবাপ্পে-নেইমারের সম্পর্কের দ্বন্দ্বও বেশ চরমে ওঠে। যা প্রভাব ফেলে পিএসজির পারফরম্যান্সেও। এমনকি গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে পিএসজির বিদায়ের পর মেসি-নেইমারকে নিয়মিত শুনতে হয় দুয়োও। পিএসজির সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন নেইমারের বাড়ির সামনে এসেও।
ওই সময় শোনা যায়, দুজনেরই ক্লাব ছাড়ার খবর। এমনকি নেইমারকে নিয়ে চেলসি ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আগ্রহের কথাও শোনা যাচ্ছিল বেশ। কিন্তু দলবদল শুরু হওয়ার পর বাতাস মোড় নেয় ভিন্ন দিকে। মেসি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ঘর বেঁধেছেন, এমবাপ্পেও হাঁটছেন একই পথে। রয়ে গেলেন শুধু যাঁর মধ্য দিয়ে এই ‘ত্রিফলা’র যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই নেইমার। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মৌসুমে নেইমারের কাঁধেই থাকবে পিএসজির দায়িত্ব।
নেইমারের পিএসজি ছাড়ার সিদ্ধান্ত বদলানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে লুইস এনরিকের কোচ হয়ে আসা। বার্সেলোনায় এনরিকের সঙ্গে কাজ করে দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। বার্সার হয়ে ওই সময় ঐতিহাসিক ট্রেবলও জিতেছিলেন তাঁরা। আর সেই এনরিকে পিএসজিতে আসার পরই ধীরে ধীরে নেইমারের দলবদলের গুঞ্জনে ভাটা পড়তে থাকে। আর এখন আগামী মৌসুমে নেইমারকে ঘিরে পিএসজির আগামী মৌসুমের পরিকল্পনা সাজানোর খবরও শোনা যাচ্ছে, যা একই সঙ্গে ক্লাবের প্রধান খেলোয়াড় হয়ে থাকার লক্ষ্য, তা–ও পূরণ করবে।
তবে নেইমারের জন্য চ্যালেঞ্জও কিন্তু কম নয়। এমবাপ্পে যদি শেষ পর্যন্ত চলেই যান, তবে আগামী মৌসুমে তাঁকে একেবারে নতুন করে সব শুরু করতে হবে পিএসজিকে। কিন্তু এখনো তাদের মূল লক্ষ্য কিন্তু সেই চ্যাম্পিয়নস লিগই। যেখানে এককভাবে বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে নেইমারকেই। যা তাঁর জন্য শেষ সুযোগও হতে পারে।
পাশাপাশি বড় কিছু করার জন্য নেইমারের যোগ্য সঙ্গীও প্রয়োজন। তাই দলবদলে শেষ পর্যন্ত পিএসজি কাদের দলে ভেড়াবে, সেটার ওপরও নির্ভর করবে অনেক কিছু।
সব মিলিয়ে নেইমার হয়তো আগামী মৌসুমে এককভাবে তারকা হয়ে ওঠার দারুণ একটি সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। ব্রাজিলিয়ান তারকার সেই সুযোগ কাজে লাগানোর ওপর নির্ভর করছে তাঁর ক্যারিয়ারের পথরেখাও।