ফুটবল মাঠ থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট—উইয়াহর পর আরও একজন

জর্জিয়ান ফুটবলার মিখাইল কাভেলাশভিলিকে সম্প্রতি দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছেে দেশটির সংসদএএফপি

খেলোয়াড় ছিলেন, পরে রাজনীতিবিদ হয়েছেন—এমন উদাহরণ অনেক। খেলোয়াড় ছিলেন, পরে রাজনীতি করে দেশের সর্বোচ্চ পদে গেছেন, এমন উদাহরণ অবশ্য খুব বেশি নেই। কিংবদন্তি লাইবেরিয়ান ফুটবলার জর্জ উইয়াহ এবং কিংবদন্তি পাকিস্তানি ক্রিকেটার ইমরান খান, এত দিন স্রেফ এ দুটি নামই ছিল এ তালিকায়। এবার এর সঙ্গে যোগ হলো আরও একটা নাম—মিখাইল কাভেলাশভিলি।

আরও পড়ুন

জর্জিয়ান এই ফুটবলারকে সম্প্রতি দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছেে দেশটির সংসদ। ২৯ ডিসেম্বর থেকে তাঁর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার কথা। ৫৩ বছর বয়সী মিখাইল কাভেলাশভিলি ক্ষমতাসীন জর্জিয়ান ড্রিম দলের সাবেক সংসদ সদস্য। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তিনিই ছিলেন একমাত্র প্রার্থী। জর্জিয়ায় চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কাভেলাশভিলির নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

কিছুদিন ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলেছেন মিখাইল কাভেলাশভিলি
রয়টার্স

মিখাইল কাভেলাশভিলির ফুটবল ক্যারিয়ার প্রায় ১৮ বছরের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন জর্জিয়ারই ক্লাব দিনামো তিবলিসিতে, ১৯৮৮-১৯৯৫ পর্যন্ত। তিবলিসির হয়ে তিনবার জিতেছেন দেশটির ফুটবলের সর্বোচ্চ লিগের শিরোপাও। জর্জিয়ান এই স্ট্রাইকার খেলেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতেও। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত দুই মৌসুমে সিটির হয়ে ২৮ ম্যাচে ৩টি গোল তাঁর। সব মিলিয়ে পেশাদার ফুটবলে ৩৯৬ ম্যাচে ১৬৬ গোল কাভেলাশভিলির। দেশের হয়েও ৪৬টি ম্যাচ খেলেছেন প্রায় এক দশকের ক্যারিয়ারে, করেছেন ৯টি গোল।

জর্জ উইয়াহ ও ইমরান খান, খেলোয়াড়ি জীবন শেষে রাজনীতি করে দেশের সর্বোচ্চ পদে গেছেন তাঁরা দুজনও
এএফপি


সর্বোচ্চ পর্যায়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ার হলেও কাভেলাশভিলি জর্জ উইয়াহর মতো বিশ্বখ্যাত অবশ্য হতে পারেননি। ২০১৮ থেকে এ বছর জানুয়ারি পর্যন্ত লাইবেরিয়ার ২৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উইয়াহ শুধু পিএসজি, মিলান, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটির মতো ইউরোপের বড় ক্লাবেই খেলেননি, আফ্রিকার ইতিহাসের সেরা স্ট্রাইকারদের একজনও মনে করা হয় তাঁকে। আফ্রিকার ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি অর ও ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়, এই দুটি পুরস্কারই জেতা (দুটিই ১৯৯৫ সালে) উইয়াহ মিলানের হয়ে জিতেছেন দুটি সিরি আ-ও। লাইবেরিয়ার হয়ে ৭৫ ম্যাচে ১৮ গোল করা উইয়াহ দুবার হয়েছেন আফ্রিকার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ও।

আরও পড়ুন

খেলার মাঠের মতোই রাজনীতিতেও দারুণ সফল উইয়াহ। নিজের গড়া রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ফর ডেমোক্রেটিক চেঞ্জ-এর হয়ে ২০১৪ সালে লাইবেরিয়ার সিনেটর হন। এরপর ২০১৭ সালের নির্বাচনে জিতে দায়িত্ব নেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে হওয়া সর্বশেষ নির্বাচনে অবশ্য হেরে গেছেন উইয়াহ।

সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার পেলে ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রী হয়েছিলেন
এএফপি

দেশের সর্বোচ্চ পদে যেতে না পারলেও খেলোয়াড় থেকে পরে রাজনীতিবিদ হয়েছেন এবং বড় দায়িত্বও পালন করেছেন এমন ফুটবলারের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার পেলেই যেমন ১৯৯৫ সালে ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রী হয়েছেন এবং দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে সংস্কার ও দুর্নীতি দমনে বড় ভূমিকা রেখেছেন। পেলের আগেই ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সাদা-পেলে হিসেবে পরিচিত কিংবদন্তি জিকো। রাজনীতিতে খুব সক্রিয় আরেক ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোমারিও, হয়েছেন দেশটির সিনেটরও।

আরও পড়ুন

রাজনীতির মাঠে সদর্প বিচরণ ছিল ইতালির গোল্ডেন বয় হিসেবে পরিচিত মিলান কিংবদন্তি জিয়ান্নি রিভেরারও। এসি মিলানের হয়ে দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, তিনটি সিরি আ ও ইতালির হয়ে ১৯৬৮ ইউরো জেতা এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পরে দেশটির ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেসি পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন, পালন করেছেন সামরিক সচিবের দায়িত্বও।
এ ছাড়া ফুটবলার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া পরিচিত নামের মধ্যে আছেন ইউক্রেনিয়ান কিংবদন্তি আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো, তুরস্কের হাকান সুকুর এবং ফ্রান্সের লিলিয়াম থুরাম।