পেলের সম্পত্তির ভাগ চান তাঁর আইনি পরামর্শক
কিংবদন্তি মারা গেছেন এক বছর পার হয়েছে। এরই মধ্যে আদালতে আইনি লড়াই শুরু হয়েছে তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ে। যে লড়াইয়ে পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আওকির মুখোমুখি হোসে ফরনোস পেপিতো নামের একজন। ভদ্রলোকের পরিচয়? ব্যবসার পাশাপাশি পেলে বেঁচে থাকতে প্রায় ৫০ বছর তাঁর আইনি পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করেছেন পেপিতো।
আদালতে দুই পক্ষের আইনি লড়াইয়ের বিষয়বস্তু জানিয়েছে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘ফোলা দে সাও পাওলো’। ব্রাজিলের হয়ে তিনবার বিশ্বকাপজয়ী পেলে বেঁচে থাকতে একটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে যান—তাঁর সম্পত্তি নিয়ে করা ‘উইল’ (ইচ্ছাপত্র) কার্যকর করার ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি হবেন পেপিতো। গত বছরের জুনে সাও পাওলোর আদালতে পেপিতো অনুরোধ করেন, পেলের ‘উইল’ কার্যকর করার যে দায়িত্ব তিনি পেয়েছেন, সে জন্য কিংবদন্তির সম্পত্তি থেকে ৫ শতাংশ ভাগ যেন তাঁকে দেওয়া হয়।
কিন্তু পেলের স্ত্রী মার্সিয়ার আইনজীবী লুইজ কিগনেল পেপিতোর এ অনুরোধের বিপক্ষে অবস্থান নেন। তাঁর যুক্তি, পেপিতোকে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়নি, ‘এই (ইচ্ছাপত্র কার্যকর করা) দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তির প্রাথমিক ভূমিকা হলো, উত্তরাধিকারদের মধ্যে কোনো বিরোধ তৈরি হলে ইচ্ছাপত্রের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। কিন্তু উত্তরাধিকারদের মধ্যে এ নিয়ে কোনো বিরোধ নেই।’ কিন্তু পেপিতোর আইনজীবী যুক্তি দেন, পেলের মোট সম্পত্তির ৫ শতাংশ ভাগ চাওয়ার এই দাবি মেনে নেওয়া উচিত; কারণ, তাঁর ‘সম্পত্তি নিয়ে প্রচুর জটিলতা আছে, অনেককেই এর ভাগ দিতে হবে’।
ইচ্ছাপত্র কার্যকর করার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি (পেলের) সম্পত্তি ব্যবহার করে নিজেকে ধনী বানাতে চান।মার্সিয়া আওকি, পেলের স্ত্রী
ব্রাজিলের আরেক সংবাদমাধ্যম ‘ও গ্লোবো’ এ বিষয়ে পেলের স্ত্রীকে উদ্ধৃত করে লিখেছে। দেশটির আরেকটি সংবাদমাধ্যম ‘মেট্রোপোলস’–এর বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, মার্সিয়া বলেছেন, পেপিতো ‘পেলের সম্পত্তি ব্যবহার করে’ ধনী হতে চান। মার্সিয়াও বলেছেন, পেলের ইচ্ছাপত্র কার্যকর করার দায়িত্ব পেলেও পেপিতো এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখেননি। পেলের সম্পত্তিতে ভাগ চেয়ে পেপিতো ‘দুঃসাহসের পরিচয়’ দিয়েছেন বলেও মনে করেন মার্সিয়া। তবে তাঁর মতে, এই দাবি ‘ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক’।
ও গ্লোবো জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে পেলে যখন হাসপাতালে যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন, তখন সংবাদমাধ্যমের চাপ সামলেছেন পেপিতো। গত বছরের জুনে সাও পাওলোর আদালতে তাঁর সম্পত্তির ভাগ চাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মার্সিয়া। সম্পত্তি নিয়ে পেলের ইচ্ছাপত্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সাও পাওলো আদালতের। ‘মেট্রোপোলস’ সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ নিয়ে মার্সিয়ার উদ্ধৃতিও প্রকাশ করেছে ও গ্লোবো, ‘ইচ্ছাপত্র কার্যকর করার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি (পেলের) সম্পত্তি ব্যবহার করে নিজেকে ধনী বানাতে চান।’
২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফুটবল-সম্রাটের মৃত্যুর পর তারকাদের ধনসম্পত্তি নিয়ে কাজ করা সেলিব্রিটি নেট ওর্থ নামের একটি ওয়েব পোর্টাল জানিয়েছিল, পেলের মোট সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ১০ কোটি মার্কিন ডলার। এর বেশির ভাগই বাণিজ্যিক চুক্তির মাধ্যমে আয় করা। একই তথ্য জানিয়েছিল স্প্যানিশ ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম মার্কাও। তাদের খবরে বলা হয়, মৃত্যুর সময় ১০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা) সমমূল্যের সম্পদ রেখে গেছেন পেলে।
৫৬ বছর বয়সী মার্সিয়াকে ২০১৬ সালে বিয়ে করেন পেলে। দুজনের পরিচয় হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। চিকিৎসার সরঞ্জাম আমদানি করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা মার্সিয়া পেলের তৃতীয় স্ত্রী। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে মারা যান পেলে।