ট্রেবল জিতে ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে কি মেসিকে পেছনে ফেললেন হলান্ড
স্বপ্নপূরণের আনন্দ কেমন?
আর্লিং হলান্ডের চেয়ে এ প্রশ্নের উত্তর কেই–বা ভালো বলতে পারবে! চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় হলান্ডের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল। এই শিরোপা নিয়ে তিনি রীতিমতো ঘোরের মধ্যেই থাকতেন। সেই ঘোর এতটাই যে গত বছর একবার বলেছিলেন, তাঁর মুঠোফোনের রিংটোনেও চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘থিম সং’ দেওয়া। সেই ট্রফি এখন হলান্ডেরও।
ম্যানচেস্টার সিটির এই শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়কও যে এই নওরেজিয়ান তারকা। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে গোল না পেলেও এই মৌসুমে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে হলান্ডই সর্বোচ্চ গোলদাতা। গোল করেছেন ১১ ম্যাচে ১২টি।
এর আগে প্রিমিয়ার লিগে সিটিকে চ্যাম্পিয়ন করতে হলান্ড কী করেছেন, সেটা আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক। প্রিমিয়ার লিগে হলান্ডের গোল ৩৫ ম্যাচে ৩৬টি, যা প্রিমিয়ার লিগের এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। হলান্ড ছাড়িয়ে গেছেন অ্যালান শিয়ারার ও অ্যান্ড্রু কোলকে। মৌসুম শেষে তাই লিগের সেরা খেলোয়াড়, সেরা তরুণ খেলোয়াড়, সেরা নবাগত খেলোয়াড়সহ অনেকগুলো পুরস্কার গেছে হলান্ডের হাতে। গোল্ডেন শুর পুরস্কারও যে তিনি পেতে যাচ্ছেন সেটাও নিশ্চিত।
হলান্ড কি আরও একটা ট্রফির কথাও মনে মনে ভাবছেন? ভাবতেই তো পারেন, গোল তো আর কম করেননি। গোলমেশিন হলান্ড ট্রেবল জয়ের পথে এই মৌসুমে করেছেন ৫৩টি গোল। এর চেয়ে এই মৌসুমে কেউ তো বেশি গোল পাননি। তাঁর সমান গোল আছে কিলিয়ান এমবাপ্পের। তবে তিনি তো আর ট্রেবল জেতেননি।
তাহলে হলান্ডের ব্যালন ডি’অর জয় নিয়ে ভাবলে, সেটা আর বাড়াবাড়ি কোথায়! এই ট্রফির দৌড়ে অবশ্য হলান্ডকে একক ফেবারিট বলার সুযোগ নেই। কারণ, গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই এই ট্রফি জয়ে একজন ফেবারিটের তকমা গায়ে লাগিয়ে বসে আছেন। অবশ্য হলান্ডের মতো তাঁর এত গোল নেই, ইউরোপিয়ান শিরোপাও নেই। তাহলে তাঁর কাছে কী আছে? একটা বিশ্বকাপ ট্রফি।
আন্দাজ করে নেওয়া খুব একটা কঠিন নয়, আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসির কথাই বলা হচ্ছে। এই মৌসুমে মেসি কী করেছেন, সেদিকে একটু চোখ বোলানো যাক। চলতি মৌসুমে সব মিলিয়ে মেসির গোল ৩৮টি। গোলে সহায়তা করেছেন আরও ২৫টি। এর মধ্যে বিশ্বকাপে মেসির ৭ গোল ও ৫ অ্যাসিস্টেই ৩৬ বছরের শিরোপা-খরা ঘোচায় আর্জেন্টিনা।
কাতার বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটাও ওঠে মেসিরই হাতে। তাই অনেকের মতেই, হলান্ড ট্রেবল জেতার পরও ব্যালন ডি’অর জেতায় এবারও সবচেয়ে এগিয়ে মেসি। কারণ, বিশ্বকাপের ওজনটা যে অনেক ভারী! ক্লাব ফুটবলে আছে মেসির দুটি শিরোপা। পিএসজির হয়ে মেসি জিতেছেন লিগ ‘আঁ’ ও ফরাসি চ্যাম্পিয়নশিপ। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির হয়ে ব্যর্থতা মেসিকে একটু হলেও পিছিয়ে দিতে পারে।
এমবাপ্পে এই মৌসুমে ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আঁ’র সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। লিগ ‘আঁ’র সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। তবে এমবাপ্পে মেসি ও হলান্ডের চেয়ে পিছিয়ে আছেন শিরোপার দিক থেকে। এমবাপ্পে এই মৌসুমে জিতেছেন ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আঁ’ ও ফরাসি চ্যাম্পিয়নশিপ। বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা এমবাপ্পে সেই ম্যাচটাতে জয় পেলেই হয়তো ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকতেন।
আলোচনায় আছেন রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও সিটিতে হলান্ডের সতীর্থ কেভিন ডি ব্রুইনাও। ভিনিসিয়ুসের এই মৌসুমে গোল ২৪টি, করিয়েছেন ২৫টি। জিতেছেন কোপা দেল রে, ক্লাব বিশ্বকাপ ও উয়েফা সুপার কাপ। ট্রেবল জেতা ডি ব্রুইনার গোল ১০টি, তবে গোল করানোয় ডি ব্রুইনা সবার ওপরে—৩২টি।
ফেবারিট হিসেবে এঁদের নাম ধারণা করা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত হলান্ড, এমবাপ্পেদের প্রথম নাকি মেসির অষ্টম হবে—সেটা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। এই দিনই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ মর্যাদার পুরস্কার ব্যালন ডি’অর পুরস্কার প্রদানের তারিখ চূড়ান্ত করেছে পুরস্কারটা যারা দেয়, সেই ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’।