২০২৬ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য এ বছর যেসব ম্যাচ পাচ্ছে আর্জেন্টিনা–ব্রাজিল
২০২৪ পেরিয়ে যাত্রা শুরু করেছে নতুন বছর ২০২৫। এর মধ্যেই লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়েরও দুই বছর পেরিয়ে গেছে। ২০২৬ বিশ্বকাপ শুরু হতে এখন বাকি দেড় বছর বা ১৮ মাসের মতো। আসন্ন এ বিশ্বকাপ সামনে রেখে সদ্য শুরু হওয়া বছরটা দলগুলোর জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরই মূলত সুর বেঁধে দেবে বিশ্বকাপের। নিজেদের শক্তি–দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করার জন্যও এই একটি বছরই হাতে পাচ্ছে শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলো।
বিশ্বকাপ ফুটবলের কথা বললে সাধারণত সবার আগে সামনে আসে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের কথা। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বকাপের আগে এ বছর প্রস্তুতির জন্য কেমন সুযোগ পাচ্ছে এ দুই দল? এর মধ্যে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার মতো যথেষ্ট ম্যাচ কি তারা পাবে?
আর্জেন্টিনা–ব্রাজিলের দুই দলই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এ বছর ৬টি করে ম্যাচ খেলবে। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় আয়োজিত হতে যাওয়া এ বিশ্বকাপে খেলার পথে এরই মধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে আর্জেন্টিনা।
বর্তমানে ১২ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে আছে আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা উরুগুয়ের চেয়ে আর্জেন্টিনা এগিয়ে আছে ৫ পয়েন্টে। ফলে আর্জেন্টিনার জন্য চ্যালেঞ্জটা যতটা না বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়ার তার চেয়ে বেশি ছন্দ ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার।
শীর্ষে থাকলেও বছরের শেষ ভাগে ধুঁকতে দেখা গেছে লিওনেল স্কালোনির দলকে। শেষ ৫ ম্যাচের ২টিতে জিতলেও হেরেছে দুই ম্যাচে এবং অন্য ম্যাচটিতে ড্র করেছে। পাশাপাশি ফিট অবস্থায় মেসিকে দলের সঙ্গে পাওয়ার বিষয়টিও আছে। এ ছাড়া নতুন বছরটি আরও একটি দিক থেকে আর্জেন্টিনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর অপেক্ষমাণ ম্যাচগুলো দিয়েই দলের সমন্বয় ঠিক করে নিতে হবে তাদের।
এ বছর আর্জেন্টিনা দল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম দুটি ম্যাচ খেলবে মার্চে। দুটি ম্যাচই উত্তাপের। ২০ মার্চ উরুগুয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর ২৫ মার্চ খেলবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে। মহা পরীক্ষার এই দুই ম্যাচ জিতে বছরটা আর্জেন্টিনা ভালোভাবে শুরু করতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
মার্চের পর আর্জেন্টিনা পরের দুটি ম্যাচ খেলবে জুনে। সেই দুই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ চিলি ও কলম্বিয়া। আর সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শেষ দুটি ম্যাচ আর্জেন্টিনা খেলবে ভেনেজুয়েলা ও ইকুয়েডরের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ ছাড়াও অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। যদিও সেই ম্যাচগুলোর প্রতিপক্ষ এবং স্থান–কাল এখনো নির্ধারিত নয়। আর্জেন্টিনার অবশ্য এ বছর আরেকটি শিরোপা লড়াইয়ে নামার কথা রয়েছে।
ফিনালিসিমার সে ম্যাচে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেনের। ঠাসা সূচির কারণে এই ম্যাচের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। এই প্রতিযোগিতার বর্তমান চ্যাম্পিয়নও অবশ্য আর্জেন্টিনা। ২০২২ সালে ওয়েম্বলিতে ইতালিকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল তারা।
বিশ্বকাপের দেড় বছর বাকি থাকলেও ব্রাজিলের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। একের পর এক ব্যর্থতায় দলটি এখন ঐতিহ্যের কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া দলটি দুই বছর ধরে মারাত্মক ভুগেছে। এমনকি আগের নিয়মে বিশ্বকাপ হলে বাছাইপর্ব উতরানোয় চ্যালেঞ্জিং হতে পারত দলটির জন্য।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের পয়েন্ট তালিকায় বর্তমানে ব্রাজিলের অবস্থান ৫ নম্বরে। ১২ ম্যাচে ৫ জয়, ৩ ড্র ও ৪ হারে তাদের পয়েন্ট ১৮। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে তেমন কোনো শঙ্কা না থাকলেও প্রস্তুতি নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। দরিভাল জুনিয়রের অধীন শুরুটা ভালো করলেও দ্রুতই পথ হারায় ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। কোপা আমেরিকা থেকেও বিদায় নিতে হয়েছে বাজেভাবে।
এখন সব ব্যর্থতা ভুলতে এ বছরকে পাখির চোখ করতে হবে দলটিকে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের বাকি ৬ ম্যাচ দিয়ে ছন্দে ফেরার পাশাপাশি দলের সমন্বয়ও ঠিক করতে হবে তাদের। দলে তারকার অভাব না থাকলেও সবার সেরাটা বের করে আনাটাই দরিভালের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের।
আর্জেন্টিনার মতো ব্রাজিলও বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম দুটি ম্যাচ খেলবে মার্চে। ২০ মার্চ কলম্বিয়ার বিপক্ষে খেলার পর ২৫ মার্চ তারা মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনার। এরপর ৪ জুন ইকুয়েডর ও ৯ জুন খেলবে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। আর সেপ্টেম্বরে ৯ তারিখ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ চিলি। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর ব্রাজিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচ খেলবে বলিভিয়ার বিপক্ষে। এ ছাড়া অক্টোবর ও নভেম্বরে তাদের প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে।