নিউজিল্যান্ডের সনি শ, বাংলাদেশের ইউসুফ—সিলেটের গ্যালারিতে কত রঙ!

অকল্যান্ড থেকে আসা সনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ‘সুপার ফ্যান’প্রথম আলো

টেস্ট ম্যাচ। গ্যালারি এমনিতেই ফাঁকা থাকার কথা। এর মধ্যে যাঁরা মাঠে এসেছেন, তাঁরাও সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ডিজিটাল স্কোরবোর্ডের ছায়া খুঁজে নিয়েছেন। সেদিকে তাকালে একজনের দিকে সবার আগে চোখ পড়বে। গায়ে নিউজিল্যান্ডের জার্সি, চোখে রোদচশমা। দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, এই ভদ্রলোক নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলে ভক্ত, নাম সনি শ। কথা বলে জানা গেল, অকল্যান্ড থেকে আসা সনি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ‘সুপার ফ্যান’। যেহেতু নিউজিল্যান্ডার, রাগবি খেলাটাও সনির পছন্দ।

কুশল বিনিময়ের পর সনি নিজেই বলছিলেন দেশের বাইরে তাঁর খেলা দেখার অভিজ্ঞতার কথা, ‘খেলা দেখার জন্য এ নিয়ে এটা ১২২ বার দেশের বাইরে এসেছি। ক্রিকেট দেখতে এটা আমার ৬৬ তম সফর। শুধু ক্রিকেট নয়, আমি রাগবি দেখতে অন্তত ২৫ বার সফর করেছি। কমনওয়েলথ গেমস কিংবা বিশ্বকাপের মতো আসর দেখতেও সব সময় ব্ল্যাক ক্যাপদের সঙ্গেই থাকি।’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে খেলার দেখার অভিজ্ঞতাও নতুন নয়। ২০০৪ সাল থেকেই কিউইদের বাংলাদেশ সফরের সঙ্গী তিনি, ‘খেলা দেখাটা আমার কাছে আবেগের। আমি এ নিয়ে অন্তত চারবার বাংলাদেশ সফর করেছি। ২০০৪ সালে প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছিলাম।’

সে সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটে তারকা বলতে গেলে মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম আসবে। এখনো সনির পছন্দের বাংলাদেশের ক্রিকেটার সেই আশরাফুলই। তাঁর ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়া এখনো সনিকে কষ্ট দেয়। সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘বাংলাদেশে আমার আশরাফুলকে অনেক পছন্দ। আমি ওকে অনেক পছন্দ করতাম, সে এখন আর খেলে না। ২০০৪ সালে প্রথম ওকে দেখেছিলাম, ওর এক একটা বাউন্ডারিতে দর্শকদের সেই চিৎকার আমি কখনো ভুলব না। ফিক্সিং না করলে আশরাফুল অনেক বড় ক্রিকেটার হতে পারত, খুবই দারুণ ব্যাটসম্যান ছিল।’

শিক্ষা সফরের ব্যানারে আসা মৌলভীবাজারের এক দল শিক্ষার্থী
ছবি: শামসুল হক

সিলেটের গ্যালারিতে সনির মতো আলাদা করা যাচ্ছিল ইউসুফ আহমেদকেও। সিলেটের এমসি কলেজের প্রথম বর্ষের এই ছাত্র দুই বন্ধুর সঙ্গে এসেছেন খেলা দেখতে। ফাঁকা গ্যালারিতে তাঁকে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াতে দেখা যাচ্ছিল। কারণটাও অনুমেয়।

তবুও ইউসুফের কাছে কারণ জানতে চাইলে তাঁর বক্তব্য, ‘আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বিশ্বের পরিস্থিতি কেমন। ইসরায়েল যেমনভাবে ফিলিস্তিনের সাধারণ নাগরিকদের ওপর অন্যায় অত্যাচার করছে, তার প্রতিবাদ জানাতে ফিলিস্তিনের পাশে থাকতে তাদের পতাকা নিয়ে এখানে খেলা দেখতে এসেছি।’

আরও পড়ুন

কিছুক্ষণ পর শিক্ষা সফরের ব্যানারে আসা মৌলভীবাজারের এক দল শিক্ষার্থীরা মাঠে প্রবেশ করে। তাদের সৌজন্যে কানে আসতে থাকে স্লোগান। উড়তে থাকে বাংলাদেশের পতাকা। তাতে কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে আসে সিলেটের গ্যালারিতে। সে দলেরই একজন বাংলাদেশ দলকে উৎসাহ দেওয়ার ফাঁকে বলছিলেন, ‘আমার এবারই প্রথম মাঠে আসা। সবাই এক সঙ্গে মাঠে আসতে পেরেছি, সে জন্য বেশি ভালো লাগছে। আবার সুযোগ পেলে মাঠে এসে খেলার দেখার চেষ্টা করব।’

ক্রিকেটও নিশ্চয়ই এমন দর্শকদের মাঠে পেতে চাইবে।