প্রথম আলোর চোখে বিশ্বকাপের সেরা
বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল!
শেষ হলো পুরো এক মাসের রোমাঞ্চকর জীবনযাপনও। যে ৩২টি দল খেলেছে, তাদের জন্য তো বটেই, বিশ্বজুড়ে শতকোটি যে সমর্থকেরা দর্শক হয়ে খেলা দেখেছেন, তাঁদের জন্যও। সেখানে টান টান উত্তেজনা ছিল, ছিল শ্বাসরুদ্ধকর অনেক মুহূর্ত। স্বপ্নপূরণের উল্লাস ছিল, ছিল স্বপ্নভঙ্গের হতাশাও। এই উচ্ছ্বাস ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসবে, কমে যাবে হতাশা। তারপর শুরু হবে আরও একটি বিশ্বকাপের অপেক্ষা। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা-মেক্সিকোতে সেই বিশ্বকাপ হবে ২০২৬ সালে।
পরের বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষার শুরুটা হবে কাতার বিশ্বকাপকে ফিরে দেখা নানা গল্পেই। স্বাভাবিকভাবেই সেই আলোচনায় আসবে এবার কারা ভালো খেললেন, কারা হতাশ করলেন, সেরা গোলটা কার ছিল, কোনটা সেরা ম্যাচ-এমন অনেক কিছুই।
পেশাদারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সারা বিশ্বের ক্রীড়া সাংবাদিকেরা বিশ্বকাপে মজে থাকা দর্শকও হয়েছিলেন এই এক মাস। প্রথম আলোক্রীড়া বিভাগও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বকাপ শেষে প্রথম আলোর চোখে সেরা বাছাইয়ের একটা রীতি আগে থেকেই আছে। তবে আড্ডা-আলোচনার মাধ্যমে সব সময় এই বাছাবাছির কাজটা করা যায় না। তার জন্য আয়োজন করে নিতে হয় গোপন ভোট!
ভোটাভুটি মানেই ভিন্নমতের লড়াই শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠের জয়। তবে এই বিশ্বকাপের সেরা বেছে নিতে গিয়ে ভোটাভুটিতে দেখা গেল বেশির ভাগ সেরাই নির্বাচিত হয়েছে বড় ব্যবধানে।
সেরা খেলোয়াড়ের কথাই ধরুন। লড়াইটা হওয়ার কথা ছিল লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আঁতোয়ান গ্রিজমানের মধ্যে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, ৮১.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে মেসিই সেরা। ফাইনালের হ্যাটট্রিক এমবাপ্পেকে গোল্ডেন বুট এনে দিয়েছে, কিন্তু পুরো বিশ্বকাপে মেসি যেভাবে খেলেছেন, ফাইনালে যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ ২টি গোল করে দলকে টেনেছেন, তাতে মুগ্ধ সবাই। এমবাপ্পে তাই বেশির ভাগের চোখেই দ্বিতীয় সেরা।
এতটা দাপুটে না হলেও সেরা উদীয়মান ও সেরা গোলের লড়াইয়ে ব্যবধানটা বেশ স্পষ্ট। সেরা উদীয়মানের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পর্তুগালের ২১ বছর বয়সী গনসালো রামোস, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে যিনি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই করেছেন হ্যাটট্রিক। ছিলেন আর্জেন্টিনার ২২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড হুলিয়ান আলভারেজ, মরক্কোর মিডফিল্ডার আজেদিন উনাহি, জার্মানির জামাল মুসিয়ালা, আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার ও ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার ইওস্কো গাভারদিওল। ৮৩.৩ ভাগ ভোট পেয়ে সেরা হয়েছেন আলভারেজই।
সেরা গোলের লড়াইয়ে ব্রাজিলের দাপট ছিল স্পষ্ট। রিচার্লিসনের দুটি গোল চোখে লেগে থাকার মতো, যার একটা সার্বিয়ার বিপক্ষে বাইসাইকেল কিকে করা তাঁর দ্বিতীয় গোলটি। অন্যটি দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নেইমারের গোলটাও কি ভোলা যায়! লড়াইয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হুলিয়ান আলভারেজের একা দৌড়ে করা গোলটাও। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের ভাউট ভেগহোর্স্টের দ্বিতীয় গোলটাও তো দারুণ। তবে ৭৫ ভাগ ভোট পেয়ে সেরা শেষ পর্যন্ত রিচার্লিসনের সেই বাইসাইকেল কিকের গোলই।
সেরা ম্যাচের আলোচনায় বেশ কিছু ম্যাচের কথাই এসেছে। বেশির ভাগের চোখে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডসের কোয়ার্টার ফাইনালটাই ছিল সেরা। ২-২ সমতার পর টাইব্রেকারে যে ম্যাচটা ৪-৩ ব্যবধানে জিতেছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু মহানাটকীয় ফাইনালের পর ভোট বদলে সবাই বলছেন, এর চেয়ে অসাধারণ কোনো আর হতে পারে না। ১০০ শতাংশ ভোট পেয়ে তাই ফাইনালটাই বিশ্বকাপের ম্যাচ।
সেরা কোচ বেছে নিতে গিয়ে বেশির ভাগই এগিয়ে রেখেছেন মরক্কোর ওয়ালিদ রেগরাগুইকে, ৫৮.৩ ভাগ ভোট পড়েছে তাঁর বাক্সে। আর্জেন্টিনার লিওনেল স্কালোনি পেয়েছেন ২৫ ভাগ ভোট, দিদিয়ের দেশম ১৬.৭ ভাগ।
সেরা গোলরক্ষকের লড়াইয়ে ছিলেন মরক্কোর ইয়াসিন বুনু, আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, ক্রোয়েশিয়ার দমিনিক লিভাকোভিচ ও পোল্যান্ডের ভয়েচেক সেজনি। বুনু পেয়েছেন ৩৩.৩ ভাগ ভোট, ১৬.৭ ভাগ ভোট লিভাকোভিচ, সেজনি পেয়েছেন ৮.৩ ভাগ। তবে ৪১.৭ ভাগ ভোট পেয়ে সবাইকে পেছনে ফেলেছেন মার্তিনেজ। প্রথম আলোর ‘গোল্ডেন গ্লাভস’তাই মার্তিনেজের হাতেই।