ক্লপ বিদায়ী বক্তব্যে বললেন, ‘আমিও কাঁদব’
অ্যানফিল্ডের বিখ্যাত টানেল দিয়ে তিনি যখন মাঠে ঢুকছিলেন, পুরো গ্যালারি যেন জেগে উঠল। লিভারপুলের সমর্থকেরা উঠে দাঁড়িয়ে অ্যানফিল্ডে শেষবারের মতো স্বাগত জানালেন ইয়ুর্গেন ক্লপকে। উলভসের বিপক্ষে লিভারপুলের ম্যাচটির মাঠের খেলা কাল রাতে গৌণ হয়ে গেল তখনই। আলেক্সিস মাক অ্যালিস্টার ও জারেল কোয়ানশাহর গোলে লিভারপুলের ২-০ গোলে জেতা ম্যাচের দিকে মনোযোগ ছিলও কমই। সবকিছু যে শুরু থেকেই হয়ে পড়েছে ক্লপময়। যে কোচ বছরের পর বছর ধুঁকতে থাকা লিভারপুলকে আবার হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বিদায়বেলায় অন্য কিছু মুখ্য হয় কীভাবে!
তাই তো ম্যাচ শেষে ৫৬ বছর বয়সী কোচ যখন মাঠের মাঝখানটায় বানানো অস্থায়ী মঞ্চের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন, ‘ক্লপ, ক্লপ’ স্লোগানে গর্জে ওঠে অ্যানফিল্ড। ২০১৫ সালে লিভারপুলের দায়িত্ব নেওয়া ক্লপ এ বছরের জানুয়ারিতেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, মৌসুম শেষে বিদায় বলবেন। তাঁর বিদায়টা রাঙাতে নানা আয়োজন করে রাখে লিভারপুল কর্তৃপক্ষ। ম্যাচ শেষে মাঠের মাঝখানে অস্থায়ী মঞ্চে যাওয়ার সময় তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়েছেন লিভারপুলের খেলোয়াড়েরা। এ সময় ক্লপের সঙ্গে ছিলেন ক্লাবের মালিক, পরিচালক ও শুভেচ্ছাদূতেরা। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিলেন অ্যানফিল্ডের কিংবদন্তি কেনি ডালগ্লিশ।
‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার সময় লিভারপুলের খেলোয়াড়দের গায়ে ছিল লিভারপুলের সর্বলাল গেঞ্জি, যার সামনের দিকটায় লেখা ছিল, ‘আপনাকে ধন্যবাদ’ আর পেছনের দিকে লিভারপুলের সেই বিখ্যাত গানের সঙ্গে মিল রেখে কথা, ‘আই উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন এগেইন।’ সমর্থকেরাও ক্লপকে ধন্যবাদ জানাতে নানা রকমের ব্যানার, ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিল গ্যালারিতে। এর মধ্যে দুই ধরনের লেখায় তৈরি অসংখ্য কার্ড দিয়ে বিশালাকার একটি দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। একটায় লেখা ছিল ‘ইয়ুর্গেন’, আরেকটিতে ‘ডানকে (ধন্যবাদ)’। ক্লপ হেঁটে মঞ্চে যাওয়ার সময় সবাই গেয়ে ওঠেন, ‘উই উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন।’
বিদায়বেলায় এত আয়োজন আর ভালোবাসা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ক্লপ। প্রায় ৯ বছরে লিভারপুলকে একটি করে চ্যাম্পিয়নস লিগ, প্রিমিয়ার লিগসহ মোট ৯টি শিরোপা জেতানো ক্লপ মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলেন, ‘আমি খুব খুশি। আমি এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমি খেলা নিয়ে খুশি, এই আবহ আর এই পরিবার নিয়ে খুশি। এটা অসাধারণ, আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।’ ক্লপ থামেন না, কাঁপা কণ্ঠে বলে চলেন, ‘আমার কাছে এটা শেষের মতো মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে শুরুর মতো। আজ আমি একটি ফুটবল দলকে পূর্ণ প্রতিভা, তারুণ্য, সৃষ্টিশীলতা, ইচ্ছাশক্তি আর (জয়ের) ক্ষুধা নিয়ে খেলতে দেখেছি। এটা উন্নতির একটা অংশ। নিশ্চিত করে এটাই আপনাদের প্রয়োজন।’
ক্লপ এরপর কথা বলেন লিভারপুলের বদলে যাওয়া বা পুরোনো দিনে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে। সেখানে তিনি কৃতিত্ব দিলেন সমর্থকদেরই, ‘এই কয়েক সপ্তাহে আমার অনেক মনোযোগ দিতে হয়েছে। আমি অনেক কিছু উপলব্ধি করেছি। মানুষ বলে, আমি তাদের (লিভারপুল) সংশয়ী থেকে বিশ্বাসী বানিয়েছি। এটা সত্য নয়। আপনারাই এটা করেছেন। কেউ আপনাদের বিশ্বাস করা বন্ধ করতে বলেনি। লম্বা একটা সময়ের চেয়ে এই ক্লাবের এখন ভালো সময় যাচ্ছে।’ ক্লপ এরপর ক্লাবের আবহ নিয়ে বলতে গিয়ে লিভারপুলের সমর্থকদের অন্য এক উচ্চতায় স্থান দিয়েছেন, ‘আমাদের এমন অসাধারণ একটা স্টেডিয়াম আর ট্রেনিং সেন্টার আছে। আর আছেন আপনারা—ফুটবল বিশ্বের সুপার পাওয়ার। ওয়াও!’
ক্লপ এরপর লিভারপুলের বদলে যাওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন, ‘আমরা ভয় পাব, নাকি রোমাঞ্চ অনুভব করব, এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিশ্বাস রাখব কি রাখব না। আজ আমিও আপনাদেরই একজন এবং আমি বিশ্বাস রাখছি। আমি এখনো ১০০ ভাগ বিশ্বাস রাখছি। হ্যাঁ, আমি অনেককে কাঁদতে দেখেছি এবং আজ রাতে আমিও কাঁদব। কারণ, আমি এই মানুষগুলোকে মিস করব। কিন্তু পরিবর্তন ভালো। সবকিছুই ঠিক থাকবে। কারণ, মৌলিক ব্যাপারগুলো শতভাগ ঠিক আছে।’
ক্লপ শেষবারের মতো সবাইকে ধন্যবাদ জানানোর আগে নতুন কোচের বিষয়ে লিভারপুলের সমর্থকদের কাছে একটা অনুরোধ করে গেছেন, ‘আপনারা নতুন কোচকে (আর্নে স্লট) স্বাগত জানবেন, যেমনটা আমাকে জানিয়েছিলেন। আপনারা প্রথম দিন থেকেই এটা সর্বাত্মকভাবে করবেন। আপনারা বিশ্বাস রাখতে থাকবেন। আপনারা দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমিও আপনাদের একজন। আমিও আপনাদের ভালোবাসি। আপনাদের ধন্যবাদ। আপনারা বিশ্বের সেরা দল। ধন্যবাদ।’