রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে পৃথিবীর নানা প্রান্তে শোক পালন করা হচ্ছে। শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনও। স্থগিত করা হয়েছে এ সপ্তাহে প্রিমিয়ার লিগের সব খেলা। তবে লিগ স্থগিত করায় বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি দেখছেন বিদেশি দর্শক, যাঁরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে খেলা দেখতে ছুটে আসেন ইংল্যান্ডে।
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। পৃথিবীর নানা প্রান্তে এই লিগের বিভিন্ন ক্লাবের সমর্থকেরা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন। তাঁদের অনেকে নিয়ম করে খেলা লিগের খেলা দেখতে ছুটে আসেন ইংল্যান্ডে।
তবে রানির মৃত্যুতে খেলা স্থগিত করায় অনেককে এখন পড়তে হয়েছে বিপাকে। পড়তে হচ্ছে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখেও। এ নিয়ে ইংলিশ ফুটবলের অনেক সমর্থক নিজেদের ক্ষোভের কথাও জানিয়েছেন।
যেসব দর্শক এই সপ্তাহের খেলা দেখার টিকিট কেটেছিলেন, তাঁদের এখন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। স্থগিত ম্যাচের টিকিট পরের ম্যাচগুলোয় ব৵বহারের কোনো সুযোগ নেই। বিমান ও আবাসন খরচ ফেরত পাওয়ারও তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। অনেকেরই ভ্রমণের জন্য করা বাজেট ও পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
চার্লস মোটা—টটেনহাম হটস্পার ক্লাবের এক সমর্থক। থাকেন কানাডার উত্তর টরন্টো শহরে। তাঁর পরিকল্পনা ছিল ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ম্যানচেস্টার সিটি বনাম টটেনহামের খেলা দেখার।
টটেনহাম ও সিটির প্রতি নিজেদের প্রেমের কথা জানাতে গিয়ে মোটা বলেন, ‘আমরা দুই ভাই ছুটিতে আছি। তাই বিশেষভাবে এই ম্যাচ দেখতে চেয়েছিলাম, যেখানে দুজনের পছন্দের দল একে অপরের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছে। মারিও বালোতেল্লি যোগ দেওয়ার পর থেকে আমার ভাই ম্যান সিটি সমর্থন করে আসছে। আমরা মূলত ইতালিয়ান এবং বালোতেল্লি ছিল তার পছন্দের খেলোয়াড়। আর আমি ২০১১ সাল থেকে স্পার্সদের সমর্থন করে আসছি। গ্যারেথ বেলই প্রথম আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।’
ম্যাচ স্থগিত করার চেয়ে মাঠে শোক পালন অধিক যুক্তিসংগত মনে হচ্ছে মোটার কাছে। তিনি বলেন, ‘যদি একমুহূর্তের নীরবতা পালন করা হতো কিংবা উপস্থিত সব সমর্থক একত্র হয়ে রানির স্মৃতিকে স্মরণ করত, সেটিই অধিকতর অর্থপূর্ণ হতো। এটা বেশ দুঃখজনক হলেও আমরা সবাই জানতাম যে এটা ঘটতই। সৌভাগ্যবশত আমি মার্শেইয়ের বিপক্ষে টটেনহামের খেলা দেখলেও আমার ভাই এখনো তার ক্লাবের কোনো খেলা দেখতে পারেনি। নিজেদের পছন্দের দলকে একে অপরের বিপক্ষে খেলতে দেখাটাই ছিল আমাদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য। আমি এখন স্রেফ হতাশ।’
৪০ বছর বয়সী মোটা বলছেন, বিমানভাড়ায় তাঁদের দুজনের এক হাজার পাউন্ড করে ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া মঙ্গল থেকে সোমবার পর্যন্ত থাকা এবং লন্ডন থেকে ম্যানচেস্টার পর্যন্ত ট্রেনভাড়ার পেছনে প্রত্যেকের দুই হাজার পাউন্ডের বেশি করে খরচ হয়েছে। মোটা বলেছেন, ‘যৌক্তিকভাবে আমি বিমান সংস্থা বা হোটেলকে আমার অর্থ ফিরিয়ে দিতে বলতে পারি না। যে প্রত্যাশিত সেবা দেওয়ার কথা, তা তারা দিয়েছে।’
মোটার মতোই অভিজ্ঞতা কানাডার এডমন্টন থেকে আসা সামিটেরও। ২৬ বছর বয়সী সামিটের এভারটনের বিপক্ষে তাঁর পছন্দের দল আর্সেনালের খেলা দেখা হচ্ছে না। হতাশ সামিট বলেছেন, ‘আমি ২০২০ সালের মে মাসে বার্নলের বিপক্ষে আর্সেনালের ম্যাচ দেখতে চেয়েছিলাম। তবে মহামারির কারণে সে ম্যাচ স্থগিত হয়ে যায়। সম্ভবত আমাকে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের জন্য বুকিং দেওয়া বাদ দিতে হবে, বিষয়টা মোটেই ভালো ঠেকছে না।’
৩৮ বছর বয়সী অ্যাশলে মোডরাফও ভ্যানকুভার থেকে এসেছিলেন আর্সেনাল ও এভারটনের খেলা দেখতে। কানাডা থেকে মোডরাফের সঙ্গে তাঁর মাও এসেছিলেন। বাকি দুজনের মতো হতাশও তিনিও, ‘অবশ্যই রানির চলে যাওয়া বড় ঘটনা। তবে রানি মানুষের জন্য কী ছিলেন, সেটা দেখানোর সুযোগ হাতছাড়া করেছে প্রিমিয়ার লিগ। নির্দিষ্ট কিছু ছুটির দিন ছিল, এখন এই অবস্থা! আমি ৮ বছর বয়স থেকে আর্সেনালের সমর্থক এবং ভ্যানকুভারে আর্সেনালের সমর্থক গোষ্ঠীও প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এটা হজম করা কঠিন। সম্ভবত আমার মাও আমার মতো হতাশ।’
এদিকে গোল ডটকমের এক প্রতিবেদনে ফুটবল লেখক জোনাথন স্মিথও বলেছেন, প্রিমিয়ার লিগের খেলা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে। তিনি বলেছেন, ম্যাচ বাতিলের কারণে রোমানিয়ান ও স্প্যানিশ দর্শকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করবে, যাঁরা কিনা নিজেদের কাজ থেকে ছুটি নিয়েছে এবং ইংল্যান্ড আসার জন্য ভ্রমণের টাকাও খরচ করেছেন।