আর্সেনাল কি আজ হতে পারবে ‘শেষ দিনের আর্সেনাল’
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নাটকীয় এক মৌসুমের যবনিকাপাত হবে আজ। মৌসুমজুড়ে যে রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা ধীরে ধীরে জমাট বেঁধেছে, তার সব জট আজ খুলবে। শেষ দিনে বেশ কিছু আইকনিক মুহূর্তের জন্ম হওয়ার অপেক্ষা থাকলেও সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকবে শিরোপার মীমাংসা। ম্যানচেস্টার সিটি, নাকি আর্সেনাল—ফুটবল দুনিয়া আজ এ প্রশ্নের উত্তর জানতেই চোখ রাখবে ইতিহাদ ও এমিরেটসে।
সিটির জন্য অবশ্য কাজটা সহজ। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে জয় কোনো হিসাব ছাড়াই টানা চতুর্থ লিগ শিরোপাটি তুলে দেবে সিটির হাতে। বিপরীতে এভারটনের বিপক্ষে নিজেদের জয়ই আর্সেনালের জন্য যথেষ্ট নয়। তাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে সিটির পয়েন্ট হারানোরও।
সাম্প্রতিক সময়ে যে ছন্দে সিটি খেলছে, পয়েন্ট হারানো বেশ কঠিনই বটে। এরপরও আজ আশায় বুক বেঁধেই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবে আর্সেনালের ভক্তরা। সিটির পয়েন্ট হারানো কঠিন হতে পারে, কিন্তু অসম্ভব নয়। ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে শেষ দিনে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রে আর্সেনালের প্রেরণা হতে পারে তাদেরই অতীত।
প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে এর আগে ৯ বার শেষ দিনে শিরোপার মীমাংসা হয়েছে। যেখানে প্রতিবার শীর্ষে থেকে শেষ দিনে আসা দলটিই ট্রফি নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। তবে এরপরও আর্সেনাল সমর্থকেরা অনুপ্রেরণা হিসেবে নিতে পারে নিজেদের ইতিহাসকে। ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবলে সর্বশেষ দল হিসেবে তারাই যে দ্বিতীয় স্থানে থেকে শেষ দিনে লিগ জিততে পেরেছিল।
এই কীর্তি আর্সেনাল দেখিয়েছিল ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে। পয়েন্ট এবং গোল ব্যবধান সমান হওয়ায় আর্সেনাল সেবার লিগ জিতেছিল গোল বেশি করার কারণে। শেষ ম্যাচে লিভারপুলের বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতেছিল আর্সেনাল। যোগ করা সময়ে মিশেল টমাস গোলটিই মূলত সব বদলে দিয়েছিলেন। সেই গোল না হলে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ট্রফি জিতত লিভারপুলই। প্রিমিয়ার লিগ-যুগে এমন কিছু আর দেখা যায়নি।
১৯৯৪-৯৫ মৌসুম
সেবার ২ পয়েন্ট বেশি নিয়ে শীর্ষে থেকেই মৌসুমের শেষ দিনে লিভারপুলের মাঠে খেলতে গিয়েছিল ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স। অন্যদিকে দুইয়ে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট হাম। ব্ল্যাকবার্ন জিতলে আর কোনো হিসাব ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হতো তারা। তবে ব্ল্যাকবার্ন হারলে এবং ইউনাইটেড জিতলে উল্টে যেত সব হিসাব-নিকাশ। যোগ করা সময়ে গোল করে ব্ল্যাকবার্নকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেডকে লিগ জেতার মঞ্চও তৈরি করে দেয় লিভারপুল। কিন্তু ওয়েস্ট হামের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে সে সুযোগ নষ্ট করে ইউনাইটেড। ব্ল্যাকবার্ন ৮৯ এবং ইউনাইটেড ৮৮ পয়েন্ট নিয়ে মৌসুম শেষ করে।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুম
পরের মৌসুমেও লিগ শিরোপার মীমাংসার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল শেষ দিন পর্যন্ত। সেবারও দৃশ্যপটে ছিল ইউনাইটেড। তবে শিরোপা–লড়াইয়ে শেষ দিন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল নিউক্যাসল ইউনাইটেড। শেষ ম্যাচে মাঠে নামার আগে ইউনাইটেডের পয়েন্ট ছিল ৭৯ এবং নিউক্যাসলের ৭৭। অর্থাৎ ইউনাইটেডের শিরোপার জন্য নিজেদের জয়ই যথেষ্ট ছিল। আর নিউক্যাসলকে নিজেদের জয়ের পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হচ্ছিল ইউনাইটেডের ফলের দিকেও। তবে নিউক্যাসলকে কোনো সুযোগ দেয়নি স্যার আলেক্স ফার্গুসনের দল। মিডলসবোরোর বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় দিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে তারা। নিউক্যাসল নিজেদের শেষ ম্যাচে জয় পায়নি, ১-১ গোলে ড্র করেছিল টটেনহামের সঙ্গে।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুম
এবারও ইউনাইটেডকে শিরোপার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল মৌসুমের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। শিরোপা–লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ ছিল আর্সেনাল। গানারদের চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল ইউনাইটেড। শেষ দিন ইউনাইটেডের হারের দিকেই তাকিয়ে ছিল আর্সেনাল। তবে টটেনহামের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় নিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে ফার্গুসনের দল। অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে আর্সেনালের ১-০ গোলের জয়টা আর কাজে লাগেনি।
২০০৭-০৮ মৌসুম
আগের তিনবারের মতো এবারও শেষ দিনে শিরোপার অপেক্ষায় ছিল ইউনাইটেড। তবে এবারের লড়াইটা ছিল আরও হাড্ডাহাড্ডি। কারণ, চেলসির পয়েন্টও ছিল ইউনাইটেডের সমান ৮৪। গোল ব্যবধানে এগিয়ে শীর্ষে ছিল ইউনাইটেড। ইউনাইটেডের শেষ ম্যাচটা ছিল উইগান অ্যাথলেটিকের মাঠে, যে ম্যাচে ২-০ গোলের জয় পায় ইউনাইটেড। অন্যদিকে বোল্টনের সঙ্গে চেলসি ১-১ গোলে ড্র করায় শিরোপা নির্ধারণে আর বিশেষ কোনো হিসাবের প্রয়োজন হয়নি।
২০০৯-১০ মৌসুম
শেষ দিনে সেই ইউনাইটেড-চেলসিরই লড়াই। মাঠে নামার আগে ইউনাইটেডের চেয়ে ১ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল চেলসি। চেলসি ৮-০ গোলে উইগান অ্যাথলেটিককে উড়িয়ে নিশ্চিত করে লিগ শিরোপা। ফলে স্টোক সিটির বিপক্ষে ৪-০ গোলে জিতেও কোনো লাভ হয়নি ইউনাইটেডের।
২০১১-১২ মৌসুম
মৌসুমটা যেভাবে শেষ হয়েছে, সেটা ছিল অবিশ্বাস্য। যথারীতি বরাবরের মতো এবারও শেষ দিনে লড়াইয়ের একটি দল ইউনাইটেড এবং অন্য দলটি হচ্ছে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটি। শেষ ম্যাচে মাঠে নামার আগে দুই দলের পয়েন্টই ছিল ৮৬। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শীর্ষে ছিল সিটিই। তাই ইউনাইটেডকে শিরোপা জিততে নিজেদের জয় এবং সিটির পয়েন্ট হারানোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল। কোনো দলই পয়েন্ট হারায়নি। কুইন পার্ক রেঞ্জার্সের বিপক্ষে সিটি ৩-২ গোলে জেতে এবং সান্ডারল্যান্ডের বিপক্ষে ইউনাইটেড জেতে ১-০ গোলে। কিন্তু গোল ব্যবধানে শিরোপা জিতে নেয় সিটিই।
২০১৩-১৪ মৌসুম
এই প্রথম শেষ দিনের লড়াইয়ে ছিল না ইউনাইটেড। সেবার লড়াইটা ছিল লিভারপুল ও সিটির মধ্যে। সিটির পয়েন্ট ছিল ৮৩ এবং লিভারপুলের ৮১। শেষ দিন সিটির হারের দিকেই তাকিয়ে ছিল লিভারপুল। তবে ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতে লিভারপুলকে কোনো সুযোগ দেয়নি সিটি। ফলে নিউক্যাসলের বিপক্ষে লিভারপুলের ২-১ গোলের জয় কোনো কাজে আসেনি।
২০১৮-১৯ মৌসুম
সেই সিটির কাছে শেষ দিনে লিভারপুলের স্বপ্নভঙ্গ। শেষ দিনে মাঠে নামার আগে সিটির পয়েন্ট ছিল ৯৮, লিভারপুলের ৯৭। ব্রাইটনকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে লিভারপুলকে হতাশায় ভাসিয়ে শিরোপা ধরে রাখে সিটি। নিজেদের ম্যাচে উলভসকে অবশ্য ২-০ গোলে হারিয়েছিল লিভারপুল।
২০২১-২২ মৌসুম
এবারও সেই সিটি-লিভারপুলের মহাকাব্যিক দ্বৈরথ। আলাদা আলাদা ম্যাচে সিটির প্রতিপক্ষ ছিল অ্যাস্টন ভিলা এবং লিভারপুল খেলছিল উলভসের বিপক্ষে। উলভসের বিপক্ষে ৬৯ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল সিটি। মনে হচ্ছিল লিগ শিরোপা হয়তো লিভারপুলের হাতেই উঠবে। কিন্তু এরপরই চমক। ৭৬ থেকে ৮১—এই ৫ মিনিটের মধ্যে ৩ গোল করে সিটি। ম্যাচটি তারা জিতে নেয় ৩-২ গোলে। ফলে উলভসের বিপক্ষে লিভারপুলের ৩-১ গোলের জয় শুধুই সান্ত্বনা হয়ে ছিল।