১৩ বছর বয়সে চ্যাম্পিয়নস লিগের উল্কি, ২৭-এ স্বপ্নপূরণ

লিভারপুলের বিপক্ষে গোলের পর দিয়েগো সিমিওনের ছেলে জিওভান্নির উল্লাসছবি: এএফপি

তাঁর বাবা ডাগআউটের বিখ্যাত এক নাম, যিনি ১১ বছর ধরে আতলেতিকো মাদ্রিদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তবে কোচ হিসেবে ২০১৩-১৪ ও ২০২০-২১ মৌসুমে লিগ শিরোপা জিতলেও দিয়েগো সিমিওনের আক্ষেপ এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারা। ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ মৌসুমে ফাইনালে উঠেও নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে শিরোপার স্বপ্ন ভেঙেছে।

আরও পড়ুন

দিয়েগোর আক্ষেপ দূর করার সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। তবে এর মধ্যেই দারুণ এক গোল করে চ্যাম্পিয়নস লিগ মঞ্চে নিজের স্বপ্ন পূরণ করলেন সিমিওনের ছেলে জিওভান্নি সিমিওনে। লিভারপুলের বিপক্ষে নাপোলির ৪-১ গোলের জয়ে তৃতীয় গোলটি এসেছে জুনিয়র সিমিওনের কাছ থেকেই। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে ছেলে জিওভান্নির স্বপ্নটা বাবার ফাইনালে ওঠারও আগের গল্প।

আজ থেকে ১৪ বছর আগের কথা, জিওভান্নির বয়স যখন ১৩ বছর। তখনই চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন জিওভান্নি। চ্যাম্পিয়নস লিগের লোগোকেই উল্কি হিসেবে বাহুতে আঁকিয়ে নেন। তাঁর এ কাণ্ড ক্ষুব্ধ করেছিল মা–বাবাকেও। তবে জিওভান্নি তাঁদের প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলেন, একদিন চ্যাম্পিয়নস লিগ মঞ্চে গোল করার পর তিনি সেই উল্কিতে চুমু খাবেন।

দিনটি দেখার জন্য জিওভান্নি আর তাঁর মা–বাবা অপেক্ষা করতে হলো ১৪ বছর। গতকাল রাতে অবশেষে নিজের স্বপ্নপূরণের সঙ্গে প্রতিজ্ঞাও রক্ষা করলেন এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। ৪৪ মিনিটে লিভারপুর রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন জিওভান্নি। এরপর পুরোনো প্রতিজ্ঞা স্মরণ করে চুমু খান উল্কিতে এবং আবেগে ভেসে গিয়ে শুয়ে পড়েন মাঠে।

দলের বড় জয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণ, চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের প্রথম গোলের পর থেকেই আবেগে ভাসছেন জিওভান্নি। ম্যাচের পর উচ্ছ্বসিত এই নাপোলি তারকা বলেছেন, ‘আমি সব সময় স্বপ্ন দেখেছি, চ্যাম্পিয়নস লিগে অন্তত একটা মিনিট হলেও যেন খেলতে পারি। আজ (গতকাল) আমি সেই সুযোগ পেয়েছি এবং কাজে লাগিয়েছি। আমি এই উল্কি এঁকেছিলাম। কারণ, আমি এত দূর আসার স্বপ্ন দেখতাম। আমি স্বপ্ন দেখতাম গোল করার এবং বলে চুমু খাওয়ার। এটা রোমাঞ্চকর। এত দূর আসার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি। আমি এখন এখানে।’

জিওভান্নির শট চলে যাচ্ছে লিভারপুলের জালে
ছবি: এএফপি

লম্বা সময় দক্ষিণ আমেরিকায় কাটানোর পর ২০১৬ সালে জেনোয়ার হয়ে খেলতে ইতালিতে যান জিওভান্নি। এরপর ফিওরেন্তিনা ও ভেরোনাতেও কিছু সময় পার করেছেন তিনি। চলতি মৌসুমেই নাপোলির হয়ে ধারে খেলতে আসেন।

প্রথমার্ধের শুরু থেকে লিভারপুল রক্ষণকে চাপের মুখে রাখা ভিক্তর ওসিমেন চোটে পড়লে মাঠে নামার সুযোগ পান জিওভান্নি। আর মাঠে নেমে নিজের জাদু দেখাতে খুব বেশি সময় নেননি তিনি। মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যেই আনমার্ক জিওভান্নি লক্ষ্যভেদ করে ডিয়েগো আরামান্দো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামকে উল্লাসে মাতিয়ে তোলেন।

আরও পড়ুন

স্কাই স্পোর্টসের দেওয়া তথ্যমতে, জিওভান্নির গোলটি এসেছে তাঁর বাবা দিয়েগোর প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ গোলের ২৫ বছর ৩৬১ দিন পর। জিওভান্নির স্বপ্ন পূরণের রাতে শান্তির ঘুম হয়েছে তাঁর বাবারও। পোর্তোকে ২-১ গোলে হারিয়ে আতলেতিকো মাদ্রিদ যে নাটকীয় এক জয় পেয়েছে, যেখানে তিনটি গোলই এসেছে অতিরিক্ত সময়ে।