বিশ্বকাপের পর চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলেই ইতিহাসে আর্জেন্টাইন মার্তিনেজ
ইতিহাস ডাকছে লাওতারো মার্তিনেজকে।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী ফরোয়ার্ডের গোলে কাল রাতে সান সিরোতে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল ফিরতি লেগে এসি মিলানকে ১-০ গোলে হারায় ইন্টার মিলান। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-০ গোলের জয়ে ফাইনালে ওঠা ইন্টারের ইতিহাসে থাকবেন মার্তিনেজ। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের সামনে আরও একটি দারুণ অর্জনের হাতছানি। এক মৌসুমে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ আর ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার সুযোগ তাঁর সামনে।
কাল রাতের গোলটি নাকি পরিষ্কার মনে করতে পারছেন না এই আর্জেন্টাইন। ম্যাচে শেষে গোলটির বর্ণনা দিতে গিয়ে মার্তিনেজ বলেছেন, ‘আমি কীভাবে গোলটা করেছি, সেটির পুরো বর্ণনা দিতে পারব না। লুকাকু পাসটা বাড়িয়েছিল। বলটা ধরেই দেখলাম এসি মিলানের প্রথম বার অরক্ষিত। মেরে দিলাম সেদিক দিয়েই। শটটা ঠিক জায়গা নিয়েছিলাম। সেটি গোলরক্ষকের জন্য যথেষ্ট কঠিনই ছিল। ভাগ্যবশত, সেটি গোল হয়েছে।’ গোলটিকে ইতিহাসের পাতাতেই দেখছেন মার্তিনেজ, ‘গোলটি অবশ্যই ইতিহাসে ঠাঁই পাবে। গোলটি আমার জন্য দারুণ আনন্দের উপলক্ষ। অনন্য এক মুহূর্ত।’
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে এটি মার্তিনেজের প্রথম গোল। যদিও ক্যারিয়ারজুড়েই চ্যাম্পিয়নস লিগে গোল আছে তাঁর। গ্রুপ পর্যায়ে তাঁর গোল সাতটি। শেষ ষোলোতে একটি। কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেও করেছেন এক গোল। সেমিফাইনালের গোলটির পর এখন নিশ্চয়ই তাঁর চোখ ফাইনালে গোল করার দিকে।
এবারের আসরে কঠিন গ্রুপ থেকে উঠে এসে প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে ইন্টার মিলান ফাইনালে জায়গা করে নিল। সেটি সম্ভব হয়েছে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের পরিশ্রম ও মাঠের পারফরম্যান্সে। ঠিক সময়ে ঠিক কাজটিই করতে পেরেছেন ইন্টার ফুটবলাররা। মার্তিনেজের গর্ব ওই জায়গাতেই। তিনি তাঁর অধিনায়কত্বকে সেই পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতির পুরস্কার হিসেবেই দেখতে চান, ‘গোটা চ্যাম্পিয়নস লিগে আমি আমার দলের সতীর্থদের সঙ্গে পরিশ্রম করেছি। আমরা সবাই মিলে সেই পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। আমার হাতে যে অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী, সেটিও সেই পরিশ্রমেরই পুরস্কার। আজকের মুহূর্তটা অবশ্যই আমাদের জন্য তৃপ্তি ও গৌরবের। আশা করি, আমরা শেষ পর্যন্ত শিরোপাটা জিততে পারব।’
এ নিয়ে তিনটি বড় প্রতিযোগিতার ফাইনালে খেলতে যাচ্ছেন মার্তিনেজ। ২০২১ সালে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জয়ের ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলার পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্সের বিপক্ষে সেই গৌরবের বিশ্বকাপ ফাইনাল। এবার প্রতিপক্ষ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না হলেও ইন্টারকে নিয়ে আরও একটি ফাইনালে পৌঁছেছেন এই আর্জেন্টাইন ফুটবলার।
এখন পর্যন্ত ১১ জন ফুটবলার একই মৌসুমে বিশ্বকাপ ও ইউরোপ-সেরা হওয়ার গৌরব গায়ে মেখেছেন। আর এক ম্যাচ জিতলেই ইন্টার মিলানের হয়ে লাওতারো মার্তিনেজ দশম ফুটবলার হিসেবে এমন কীর্তিতে নিজের নাম তুলবেন। এঁদের মধ্যে সাতজন ফুটবলার একসঙ্গে এই কীর্তি গড়েছিলেন। ১৯৭৪ বিশ্বকাপ জেতার পর এই সাত ফুটবলার বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে জিতেছিলেন ইউরোপিয়ান কাপ। তারা হলেন সেপ মেয়ার, পল ব্রাইটনার, হানস-গিয়োর্গ শোয়ারজেনবেক, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, জার্ড মুলার, উলি হোয়েনেস ও ইয়ুপ কাপেলমান। পরের চারজন হলেন ক্রিস্টিয়ান কারেম্বু (ফ্রান্স ও রিয়াল মাদ্রিদ, ১৯৯৮), রবার্তো কার্লোস (ব্রাজিল ও রিয়াল মাদ্রিদ, ২০০২), সামি খেদিরা (জার্মানি ও রিয়াল মাদ্রিদ, ২০১৪) ও রাফায়েল ভারান (ফ্রান্স ও রিয়াল মাদ্রিদ, ২০১৮)।