অভিবাসীদের নিয়ে শঙ্কিত ক্রুস, নিজের মেয়ের জন্য জার্মানিকে নিরাপদও ভাবছেন না

ফুটবল ছেড়েছেন জার্মান তারকা টনি ক্রুসএএফপি

টনি ক্রুস এখন পূর্ণ অবসরে। ইউরোর আগে ক্লাব ফুটবল ছেড়েছেন। গত শুক্রবার ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনের কাছে জার্মানির হারের মধ্য দিয়ে ক্রুসের আন্তর্জাতিক ফুটবলেরও সমাপ্তি ঘটেছে। গতকাল ইনস্টাগ্রামে বার্তা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবলকে বিদায়ও জানিয়েছেন ক্রুস। তবে স্পেন-জার্মানি ম্যাচের আগে ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত একটি পডকাস্টের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ক্রুস। সেখানে অভিবাসননীতি নিয়ে জার্মানির সমালোচনার পাশাপাশি বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই মিডফিল্ডার বলেছেন, তাঁর মেয়ে স্পেনেই নিরাপদ।

আরও পড়ুন

ক্রুস অভিবাসীদের জার্মানিতে স্বাগত জানিয়েছেন ঠিকই, তবে বিশাল পরিমাণ অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি সফল হতে পারেনি বলে মনে করেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘টেলিগ্রাফ’ গতকাল এ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, স্পেনের সঙ্গে ম্যাচের আগে এই সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা হয়। তখন স্পেন ও জার্মানির মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে সাক্ষাৎকার যিনি নিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে ক্রস একটি ব্যাপারে একমত হন, সেটি হলো জার্মানিকে দেখে মনে হয়, দেশটি ‘নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে’।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন ক্রুস। জার্মানির হয়ে জিতেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপ। জার্মানির নিয়ন্ত্রণ হারানোর ব্যাপারে পডকাস্টে ৩৪ বছর বয়সী সাবেক মিডফিল্ডার বলেন, ‘কয়েক বছরের ব্যবধানে কিছু ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ হাত ফসকে গিয়েছে এবং এর কারণও আছে। আমার মতে, এর কারণটা হলো আমরা তাদের (অভিবাসী) ভিড়ে চাপা পড়ছি।’

স্পেন–জার্মানি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচই পেশাদার ফুটবলে ক্রুসের শেষ ম্যাচ
এএফপি

অভিবাসীদের জার্মানিকে বেছে নেওয়াকে ক্রুস ‘গ্রেট’ বললেও তারপর বলেছেন, ‘এটা একদমই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।’ ক্রুস এরপর বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমরা এটা (অভিবাসী) ঠিকঠাক দেখভাল করতে পারিনি। এমনিতে খুবই (অভিবাসীদের নেওয়া) ইতিবাচক ব্যাপার, এক হাজার শতাংশ সমর্থন দিই। কারণ, এটা দারুণ কিছু যে মানুষ বাইরে থেকে আমাদের কাছে এসে সুখে থাকছে।’

আরও পড়ুন

ক্রুস ভেবেছিলেন, অভিবাসনের প্রভাবকে ‘খাটো করে দেখা হচ্ছে’ এবং ‘শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে’। ক্রুস ব্যাখ্যা করেন, ‘যখন অনেক মানুষ আসে, তখন সেখানে একটি অংশ থাকে যারা আমাদের জন্য ভালো নয়, জার্মানদের মধ্যেও এমন অংশ আছে।’

অভিবাসন নিয়ে জার্মানদের দৃষ্টিভঙ্গি এখন বিভক্ত বলেও মন্তব্য করেন ক্রুস। ২০১৫ সালে জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল লাখো শরণার্থীদের জার্মানিতে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার পর থেকেই এ ব্যাপারে জার্মানদের চিন্তাভাবনা বিভক্ত হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে টেলিগ্রাফ। ফ্রান্সের তারকা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে এর আগে অভিবাসী নিয়ে ‘উগ্রবাদী’দের প্রত্যাখ্যান করার কথা বলার পর এ বিষয়ে কথা বললেন ক্রুস। অবশ্য ফরাসি তারকার সে কথার জবাবে ফ্রান্সের রাজনীতিবিদ মেরিন লো পেন বলেছিলেন, ফরাসি অভিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এমবাপ্পে ‘একটু বেশিই ধনী’।

ইনস্টাগ্রামে গতকালই ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন ক্রুস
এএফপি

অভিবাসন নিয়ে কথা বলার আগে ক্রুস এই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, রিয়াল থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি স্পেনেই থাকবেন। নিজের মেয়ের জন্য জার্মানিকে নিরাপদ দেশ হিসেবে মনে করেন না ক্রুস। রিয়ালে ১০ বছর (২০১৪-২০২৪) কাটানো সাবেক জার্মান কিংবদন্তি বলেছেন, তিনি চলে আসার পর থেকেই জার্মানি অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। জার্মানিতে তাঁর মেয়ে রাতে একা বের হয়ে ‘নিরাপদে’ বাসায় ফিরতে পারবে না—এমন শঙ্কার কথাও বলেছেন ক্রুস।

আরও পড়ুন

ল্যাঞ্জ অ্যান্ড প্রেখ্‌ট নামের এই পডকাস্টকে ক্রুস বলেছেন, ‘জার্মানি একটি গ্রেট দেশ এবং এখানে থাকতে পেরে আমি সুখী। তবে ১০ বছর আগে চলে যাওয়ার সময় এই দেশটা একই রকম ছিল না।’

ক্রুসের মেয়ের বয়স ৭ বছর। মেয়ে আরও বড় হলে রাত ১১টার দিকে জার্মানির কোনো শহরে বের না হয়ে স্পেনের শহরে বের হওয়া নিরাপদ বলে মনে করেন ক্রুস। তাঁর ভাষায়, জার্মানিতে ফিরলে তখন তাঁর মেয়ে রাতে বাইরে গেলে তার ফেরা নিয়ে শঙ্কায় থাকবেন, যে অনুভূতিটা তাঁর ‘১০ বছর আগেও ছিল না’।