দি মারিয়া-দিবালাদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন মেসি

আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সঙ্গে গত মে মাসে চীন সফরে গিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। তখন আর্জেন্টিনার টিভি চ্যানেল টিভি পাবলিকা মেসির একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। এত দিনে তা প্রকাশ করেছে টিভি পাবলিকা। সেই সাক্ষাৎকারের একটা অংশ ছিল মেসিকে করা আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সতীর্থদের প্রশ্ন নিয়ে। ওই সাংবাদিক সেগুলোই জানতে চেয়েছেন মেসির কাছেে। আসুন জেনে নিই হুলিয়ান আলভারেজ–নাহুয়েল মলিনারা কী প্রশ্ন করেছিলেন, আর মেসিই–বা উত্তরে কী বলেছেন।

হুলিয়ান আলভারেজ

বিশ্বব্যাপী এই যে তুমুল খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা, এসব সামলানো নিয়ে

মেসি:

আমি নিজেকে সব সময় সাধারণ রেখেছি। পরিবার ও কাছের মানুষদের সঙ্গে সময়টা উপভোগ করি। সন্তানদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিই। ওদের স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসতে ভালো লাগে। পার্কে নিয়ে যাই। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আমি এসবে (মানুষের মনোযোগ পেয়ে) অভ্যস্ত। তবে কেউ আমাকে খেয়াল করবে না—কখনো কখনো এটাও ভালো লাগে। এগুলো খুব স্বাভাবিকভাবেই নিই। তাতে জীবন সহজ হয়।

হুলিয়ান আলভারেজের সঙ্গে মেসি
আলভারেজের ইনস্টাগ্রাম

লিসান্দ্রো মার্তিনেজ

আর্জেন্টিনা জাতীয় দলকে কতটা ভালোবাসো। জাতীয় দলের অর্থ কী

মেসি:

আমার কাছে জাতীয় দলই সর্বোচ্চ (ভালোবাসার জায়গা)। ক্যারিয়ারজুড়েই আমি এটা প্রমাণ করেছি। হ্যাঁ, খারাপ সময়ও এসেছে। বার্সেলোনায় নিজের সেরা সময় কাটিয়েছি। চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা এবং ব্যক্তিগত পুরস্কার জিতেছিলাম। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে সময়টা সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। একদমই উল্টো বাস্তবতা। আর্জেন্টাইনরা কষ্ট পাচ্ছিলেন। আমি সব সময় তাঁদের জন্য জিততে চেয়েছি, এই দায়িত্বই অর্পণ করা হয়েছিল আমার কাঁধে। সেই স্বপ্ন দেখা থেকে কখনো সরে আসিনি। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে শেষ পর্যন্ত তা পেরেছি। জাতীয় দল আমার কাছে এমন কিছু, যা তিক্ততার ঊর্ধ্বে, আমি সব সময়ই উপভোগ করেছি। এটা আমার কাছে খুবই স্পেশাল।

এজেকিয়েল প্যালাসিওস

জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার ভাবনা

মেসি:

সত্যি বলতে আমি জানি না কবে। আমার মনে হয়, এটা যখন হওয়ার তখনই হবে। মানে, সবকিছু জিতেছি বেশি দিন তো হয়নি। এখন সময়টা উপভোগের। অবসর নেওয়ার মুহূর্ত কখন, সেটা সৃষ্টিকর্তাই বুঝিয়ে দেবেন। তবে যুক্তিতে যেটা আসে, আমার বয়সে তাকিয়ে বলতে পারি শিগগিরই সেই সময়টা আসবে। তবে এ মুহূর্তে বলতে পারছি না সেটা কখন। আপাতত প্রতিটি দিনই উপভোগের কথা ভাবি। জাতীয় দলের হয়ে আমরা খুব কঠিন সময় পার করেছি। সৌভাগ্যবশত কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। সময়টা তাই এখন উপভোগের।

মেসি ও অন্য সতীর্থদের সঙ্গে তালিয়াফিগো
তালিয়াফিগোর ইনস্টাগ্রাম

নিকোলাস তালিয়াফিকো

ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে ভালো করে যাওয়ার রহস্য

মেসি:

আমি সারা জীবন যা কিছু অর্জন করেছি, সেসবের জন্য যা যা করেছি, এখানেও ঠিক তা–ই। ধারাবাহিকতা, মানসিক শক্তি, ত্যাগ এবং জয়ের ক্ষুধা। একদম ছোটবেলা থেকেই আমি এমন। দায়িত্ব এড়াই না এবং কী চাই তা জানি।

নাহুয়েল মলিনা

বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পাসটা কি তাঁকে দেখে দিয়েছিলেন কি না

মেসি:

আমি ওকে দেখেছি। ও দৌড়াচ্ছিল, তখন সবচেয়ে স্বাভাবিক কাজটাই করেছি—বলটা পাস দেওয়া। তখনই সঠিক সময় মনে হয়েছে। (ডাচদের) পুরো রক্ষণ তখন অন্য কিছুর অপেক্ষায় ছিল। তাঁর কথা শুনতে পাইনি, কিন্তু তাঁকে দেখেছিলাম।

দি মারিয়া ও মেসি
এএফপি

আনহেল দি মারিয়া

প্যারিসে তোমার বাসায় যেভাবে বারবিকিউ বানিয়েছিলে, সেই বন্দোবস্ত কী এখনো আছে

মেসি:

আমি বারবিকিউ বানানোর লোক নই। নিজের খাবার নিজেই করে নেওয়ার মানুষ আমি না। একা থাকতে দু–একবার বানিয়ে নিয়েছি। এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। সত্যি বলতে, ওগুলো বানানোর চেয়ে যে বানায়, তাকে সঙ্গ দিতেই বেশি ভালো লাগে।

মার্কোস আকুনিয়া ও হেরমান পেসেলা

ফ্রান্সের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ফাইনালের টাইব্রেকারে গঞ্জালো মন্তিয়েল জয়সূচক গোলটি করার পরের অনুভূতি

মেসি:

আমরা তখন একটু স্বস্তিতেই ছিলাম। কারণ, আমরা এগিয়ে ছিলাম, আরও একটি শট ছিল আমাদের। কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম তখনই সবকিছুর নিষ্পত্তি হোক, যেন আমরা উদ্‌যাপন শুরু করতে পারি। এসব মুহূর্ত আসলে ভাষায় প্রকাশ করা খুব কঠিন। টাইব্রেকারে স্নায়ুক্ষয়, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া...সবকিছুই সৃষ্টিকর্তা ঠিক করে দেন। মুহূর্তগুলো তিনি যেভাবে চান. সেভাবেই আমরা পাই। আমি সব সময় এটাই মনে করে এসেছি। কারণ ছাড়া কিছুই ঘটে না। খেলাধুলা এবং পারিবারিকভাবে সৃষ্টিকর্তা আমাকে যা যা দিয়েছেন, সে জন্য তাঁকে সব সময় ধন্যবাদ দিয়েছি।

মেসি ও অন্য সতীর্থদের সঙ্গে দিবালা
এএফপি

পাওলো দিবালা

নিজেকে কি রক্তমাংসের মানুষ বলে মনে হয়? বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা এবং মাঠের পারফরম্যান্স—এসব মিলিয়ে চারপাশে যে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে, সেটা নিজে টের পান কি না

মেসি:

যখন কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে থাকে, নিজের লক্ষ্যটা সামনে থাকে, তখন আসলে কী অর্জন করেছি, কী পেতে পারতাম—সেসব মাথায় থাকে না। আমি এখন ক্যারিয়ারের এমন সময়ে আছি, যখন সবকিছুই উপভোগ করছি, কোনো কিছুই আমার কাছে ফেলনা নয়। কারণ, আমি জানি শেষ সময়ে পৌঁছে গেছি। তবে এটাও ভাবি যখন অবসর নেব, খেলব না, তখন এগুলো আমার কাছে আরও বেশি মূল্য পাবে। এই যে বিশ্বকাপ জিতেছি, এমন একটি দেশের হয়ে যারা ফুটবল বলতে পাগল, এই স্মৃতি তো চিরকালই থাকবে। সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ।