ফিফার রায়কে ত্রুটিপূর্ণ ও অনুমাননির্ভর দাবি সোহাগের আইনজীবীর
আবু নাঈম সোহাগকে ফিফা দুই বছরের জন্য সব ধরনের ফুটবলীয় কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করার পর আজ এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সোহাগের আইনজীবী। এই বিবৃতিতে ফিফার রায়কে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ও ‘অনুমাননির্ভর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফিফার এই রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্টও বলা হয়। সোহাগের পক্ষ থেকে আইনি প্রতিষ্ঠান এ হোসেইন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘এই সিদ্ধান্ত শুধু ত্রুটিপূর্ণই নয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেওয়া হয়েছে।’
গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য সব ধরনের ফুটবল কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করে ফিফা। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ লাখ টাকা (১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ) জরিমানাও করা হয় তাঁকে। ফুটবলের বৈশ্বিক ফুটবল এই সংস্থা জানায়, বাফুফেকে দেওয়া ফিফার টাকার হিসাবে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর আজ সোহাগের পক্ষ থেকে তাঁর অবস্থান জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে (সিএএস) এ নিয়ে আপিল করার কথাও জানিয়েছেন সোহাগের আইনজীবী।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘শুনানিতে বাফুফে টাকাপয়সা লেনদেনের জন্য ফিফার দেওয়া অনুমোদনের নথিপত্র পেশ করেছে। কিন্তু অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার অবৈধভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আমলে নেয়নি এবং ১৪ এপ্রিল ২০২৩–এ রায়টি অনুমোদন করে। আর এতেই স্পষ্ট হয় সিদ্ধান্তটি শুধু ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ নয় বরং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এই রায় দেওয়া হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, এই রায়ে ফিফার অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার বুঝেছে যে ফিফার তহবিলের কোনো অপব্যবহার করা হয়নি। আবু নাঈম সোহাগের জমা দেওয়া কাগজপত্রেও কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি—অ্যাডজুডিকেটরি কমিটি এমন কথাই বলেছিল বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়। অ্যাডজুডিকেটরি কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়, তিনটি বিষয় নিয়ে অনিয়মের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ১. অর্ডার করা মালামাল পাওয়া যায়নি এমন অভিযোগ নেই। ২. বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ দেওয়া হয়েছে। ৩. ফিফার দেওয়া তহবিল থেকে তাদের অর্থ পরিশোধ করা হয়নি।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘ফিফার পাঠানো তহবিলের অপব্যবহার করা হয়েছে কিংবা বেঁধে দেওয়া নিয়মের মধ্যে ব্যবহার করা হয়নি, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই রায়ে। একইভাবে ফিফা ও বাফুফে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই প্রমাণও নেই। এর পাশাপাশি ফিফার অ্যাডজুডিকেটরি কমিটি বলেছে, ফাইলে এমন কিছুই নেই যাতে বোঝা যায় আবু নাঈম সোহাগ জালিয়াতি করেছেন কিংবা দরপত্র নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। বরং দরপত্রটাই ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তথ্যপ্রমাণ এড়িয়ে সম্পূর্ণ অনুমানের ওপর অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার জানিয়ে দেয়, বাফুফের প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করা হয়েছে। আর এতেই প্রমাণিত হয় সিদ্ধান্তটি শুধু ভুল ও অসংগতিপূর্ণ নয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।’
সোহাগের আইনজীবীর এই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘শুনানির সময় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বিবেচনা করা এড়াতে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অনুমাননির্ভর এই রায় অনুমোদন করেছে ফিফার অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার। এ ছাড়া সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছর নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানা করা হয়েছে।’
ফিফার সমালোচনা করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার যদি নথিপত্রগুলো স্বাধীন ও ন্যায্যভাবে যাচাই-বাছাই করত, বিশেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ফিফার অনুমোদন নিয়েই খরচের যেসব নথিপত্র দেওয়া হয়েছে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তটি অনুমোদন পেত না। দেখে মনে হয়েছে, অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বারের কাজই যেন ফিফা ইনভেস্টগটরি চেম্বারের সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দেওয়া, যেখানে স্বাধীন ও বিচারিকভাবে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়নি।’
বিবৃতির শেষে আপিল করার কথা জানানো হয়েছে, ‘নিয়ম অনুযায়ী জনাব সোহাগ এই পক্ষপাতদুষ্ট রায়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে (সিএএস) আপিল করবেন। এটি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।’