লিলের মাঠে গ্যালারিতে তখন কেউ ধাতস্থ হয়ে বসেছেন কি না সন্দেহ। মাঠে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেই দু-একজন হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি, ঠিক কী ঘটল!
কিক অফ হলো। নেইমার, লিওনেল মেসি ও মার্কো ভেরাত্তি নিজেদের মধ্যে তিনটি পাস খেললেন। কিলিয়ান এমবাপ্পে ততক্ষণে লিলের রক্ষণচেরা দৌড় শুরু করেছেন। সুযোগটা বুঝতে পেরে বাতাসে ভাসানো পাস দিলেন আর্জেন্টাইন। পাস না বলে চামচে করে এমবাপ্পের পাতে গোল তুলে দেওয়াও বলা যায়।
বলটা একদম মাপা গতিতে পড়ল তাঁর পাশে। একদম আচমকা লিল গোলকিপার লিও জার্দিমকে একা পেয়ে তাঁর মাথার ওপর দিয়ে বল জালে চালান করে এমবাপ্পে কি শুধু গোলের আনুষ্ঠানিকতাই সারলেন? নাকি পিএসজি সমর্থকদের দুশ্চিন্তাও কিছুটা লাঘব করলেন!
ম্যাচের ৮ সেকেন্ডে এমবাপ্পের এই গোল লিগ আঁ-র ইতিহাসে (২০০২ সাল থেকে লিগ আঁ নামে যাত্রা শুরু হয়) দ্রুততম। কিন্তু ফ্রান্সের শীর্ষ লিগের ইতিহাসে এমবাপ্পে এই গোলে ছুয়েছেন ৩০ বছর আগের একটি রেকর্ড।
সংবাদ সংস্থা এএফপি ফুটবলের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ‘মিস্টারচিপ’ এর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কানের বিপক্ষে ৭.৯ সেকেন্ডে গোল করেন কায়েনের মিশেল রিও। এমবাপ্পের গোলটি ৮.৩ সেকেন্ডে।
দুর্দান্ত শুরুর পর পর পিএসজি সমর্থকেরা যেভাবে ম্যাচটা শেষ করতে চেয়েছেন, মোটামুটি সেভাবেই সব হলো। লিলকে ৭-১ গোলে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে পিএসজি। এর সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরে দানা বেঁধে ওঠা একটি সন্দেহও হয়তো দূর হলো।
মঁপেলিয়েরের বিপক্ষে আগের ম্যাচে পেনাল্টি নেওয়া নিয়ে এমবাপ্পের সঙ্গে মেসি ও নেইমারের বিরোধের গুঞ্জন উঠেছিল। মাঝে শোনা গেল, পিএসজির কর্তারা তিনজনকে একসঙ্গে বসিয়ে সব মিটিয়ে ফেলেছেন।
পরিস্থিতির যে উন্নতি ঘটেছে তা বোঝা গেল লিলের মাঠে। মেসির পাস থেকে গোলে শুরুর পর এমবাপ্পে হ্যাটট্রিক করেছেন নেইমারের দুটি পাস থেকে। গোল পেয়েছেন মেসি আর নেইমারও। জোড়া গোল করেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। এক ফ্রেমে মেসি, নেইমার, এমবাপ্পের হাসিখুশি মুখ এবং উপভোগ্য ফুটবল খেলা দেখে এখন স্বস্তি পেতেই পারেন পিএসজির সমর্থকেরা।
দাপট ছড়ানো খেলা বলতে যা বোঝায় তাই খেলেছে পিএসজি। মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে ছাড়াও আশরাফ হাকিমি ও নুনো মেন্দেসরা ত্রাস ছড়িয়েছেন লিলের রক্ষণে। ম্যাচের প্রথমার্ধেই গোল আদায় করে নেন মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে। পোস্টেও বল মেরেছেন এমবাপ্পে। প্রথমার্ধেই ৪-০ গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি।
২৭ মিনিটে বাঁ প্রান্তে মেন্দেসের পাস থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে গোল করেন মেসি। এরপর নেইমারের পাস থেকে গোল করেন হাকিমি। মরোক্কোর এই তারকার পাস থেকে ৫২ মিনিটে গোল করেন নেইমারও। ৬৬ ও ৮৭ মিনিটে নেইমারের দারুণ দুটি পাস থেকে মৌসুমের প্রথম হ্যাটট্রিক পেয়ে যান এমবাপ্পে। পিএসজির এই গোলউৎসবের মাঝে ৫৪ মিনিটে লিলের বাম্বার গোলটি একটু বেমানানই লাগতে পারে!
৩ ম্যাচের সবকটিতে জয় তুলে নেওয়ার পথে ১৬ গোল করল পিএসজি। লিলের বিপক্ষে এটাই সবচেয়ে বড় জয় ক্লাবটির। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ঘরের মাঠে এই প্রথম কোনো ম্যাচে ৭ গোল হজম করল লিল।
পিএসজি কতটা দুর্দান্ত ফর্মে আছে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে আরেকটি পরিসংখ্যান। লিগে এই নিয়ে শেষ ৪ ম্যাচে অন্তত পাঁচটি করে গোল করেছে পিএসজি। লিগ আঁ-র ইতিহাসে এর আগে শুধু রিম (১৯৫২-৫৩) এমন কিছু করে দেখাতে পেরেছে, সেটিও ৪ ম্যাচে। তবে পিএসজি সমর্থকেরা এ ম্যাচটা মনে রাখবেন আক্রমণভাগের ‘ত্রিরত্নে’র দুর্দান্ত খেলার জন্য। এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক, নেইমার নিজে করেছেন দুই গোল, বানিয়েছেন আরও তিনটি, মেসি একটি করেছেন, একটি বানিয়েছেন।
এমন খেলা প্রতিদিন দেখা যায় না।