অর্পিতার বিশ্বাস ছিল ট্রফিটা তাদেরই হবে
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানেই ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দলের অধিনায়ক অর্পিতা বিশ্বাস। তখন থেকে তার ভাবনা ছিল একটাই—চ্যাম্পিয়ন হতে হবে, ফাইনালের পর ট্রফিটা যেন অন্য কোনো অধিনায়কের হাতে না যায়। অর্পিতার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। নেপালের কাঠমান্ডুতে আজ ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তার দল। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে ট্রফিটা হাতে তুলেছে অর্পিতাই।
দেশ ছাড়ার আগে বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে অর্পিতার মুখে ছিল ‘ধাপে ধাপে এগোনো’র কথা। সবার আগে নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা জিততে চেয়েছিল সে। তার কথা ছিল রাউন্ড রবিন লিগের টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ জিতলে ফাইনালের পথে এগিয়ে যাওয়া যাবে অনেকটা। প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রতিজ্ঞা পূরণ করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দল। তবে দলের শক্তিটা বোঝা যায় দ্বিতীয় ম্যাচেই ভারতকে ৩-১ গোলে হারানোর পর। এই জয়েই শিরোপা জয়ের স্বপ্নের আরও রং লাগে অর্পিতাদের। ফাইনালে আজ দারুণ খেলেই রঙিন সেই স্বপ্নকে সত্যি করেছে বাংলাদেশের কিশোরীরা। ৭১ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা দলটাই সেই গোল শোধ করে টাইব্রেকারে স্নায়ুটা ধরে রাখল দারুণভাবে। মরিয়মের গোলে সমতা ফেরানো দল টাইব্রেকারে গোলকিপার ইয়ারজান বেগমের কৃতিত্বে সাফের সেরা।
অধিনায়ক হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই অর্পিতার অনুভূতি অন্যরকম, ‘আমি সত্যিই খুশি। টুর্নামেন্টের আগে আমাদের সামনে ট্রফিটা উন্মোচিত হয়েছিল। ওই সময় আমি একবার সেটি ধরি। এরপরই আমার প্রতিজ্ঞা ছিল এটি যেন ফাইনালের পর আমাদেরই হয়, আমিই যেন ট্রফিটা হাতে নিতে পারি। আমি আমার দলের সবাইকে বলে রেখেছিলাম ট্রফিটা যেন ভারতের অধিনায়কের হাতে না যায়।’
কোচ সাইফুল বারীর মেয়েদের কোচ হিসেবে প্রথম একক শিরোপা। আগস্টে মেয়েদের জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন হাংজু এশিয়ান গেমস সামনে রেখে। মেয়েদের আগের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের জায়গাতেই জাতীয় দলের সাবেক এই ফুটবলারের দায়িত্ব নেওয়া সহজ ছিল না। বিশেষ করে দেশের নারী ফুটবলে কোচ গোলাম রব্বানীর ভূমিকা অনন্য। তাঁর অধীনে ২০২২ সালে কাঠমান্ডুতে সাফ জয়ের কৃতিত্ব তো ছিলই। বয়সভিত্তিক ফুটবলেও মেয়েদের সব সাফল্যই গোলাম রব্বানীর হাত ধরেই। সাইফুল বারী সেই কঠিন কাজটাই দারুণ ভাবে করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে ভারতের শিরোপা ভাগাভাগি করার পর এবার অনূর্ধ্ব-১৬ সাফের শিরোপা।
আমি সব কৃতিত্ব দেব আমার দলের খেলোয়াড়দের। এখানে আমার বিশেষ কোনো কৃতিত্ব নেই।সাইফুল বারী, কোচ, বাংলাদেশ নারী দল
সাইফুল বারী অবশ্য কোনো কৃতিত্বই নিজের মনে করেন না। তবে বিদেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ জেতার আনন্দ তাঁর কাছে অন্যরকম, ‘যেহেতু এটা আমরা বিদেশের মাটিতে জিতেছি তাই এই সাফ জেতার আনন্দ অন্যরকম। দলটা নিয়ে কাজ করার তেমন সময় পাইনি। সে হিসেবে ওরা যা খেলেছে তা দুর্দান্তই। আমি সব কৃতিত্ব দেব আমার দলের খেলোয়াড়দের। এখানে আমার বিশেষ কোনো কৃতিত্ব নেই। একই সঙ্গে বলব, আমার দলের অন্যান্য কোচিং স্টাফদের কথা, ওরা অনেক পরিশ্রম করেছে দলটা তৈরি করতে।’
সাইফুল বারীর কৃতিত্ব একেবারে আনকোরা খেলোয়াড়দের বড় কিছুর জন্য তৈরি করে দেওয়া। অনূর্ধ্ব-১৯ কিংবা অনূর্ধ্ব-১৬, এক মাসের ব্যবধানে দুটি সাফের সাফল্য দেশের নারী ফুটবলকে দারুণ কিছু খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে, এটা বলতেই হবে। আরও বড় সাফল্যের পথে হাঁটার শুরুটাও করে দিয়েছে এ দুটি দল।