নেইমারের আল হিলালের সঙ্গে মোহামেডানের সেই দুই ম্যাচ

নেইমারের আল হিলালের সঙ্গে ৩৩ বছর আগে দুটি ম্যাচ খেলেছিল মোহামেডানছবি: এএফপি

সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বিরের স্মৃতিতে এখনো টাটকা ৩৩ বছর আগের সেই ম্যাচ।

এশিয়ান কাপ উইনার্স কাপে ১৯৯১ সালে সৌদি আরবের আল হিলাল ক্লাবের সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলেছিল ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। সাব্বির ছিলেন সেই দুই ম্যাচে মোহামেডানের আক্রমণের প্রাণ। কোনো বিদেশি ফুটবলার ছাড়াই আল হিলালের বিপক্ষে সেই দুই ম্যাচে হেরেছিল সাদাকালোরা। দুই ম্যাচের অভিজ্ঞতা ছিল পুরো বিপরীত। প্রথম ম্যাচে ৭–০ গোলে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে মোহামেডান লড়াই করে হেরেছিল ২–১ গোলে। সাব্বিরের ভাষায়, ‘দ্বিতীয় ম্যাচটা মোহামেডান জিততেও পারত। আমাদের বিপক্ষে একটা পেনাল্টির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। পেনাল্টিটা না হলে ফলাফল অন্য রকম হলেও হতে পারত।’

হালে আল হিলাল ক্লাবের নামটি ফুটবলপ্রেমীদের কাছে বেশ পরিচিত। সৌদি প্রো লিগের এই ক্লাব লিওনেল মেসিকে মৌসুমপ্রতি ৪০ কোটি ইউরো পারিশ্রমিকের প্রস্তাব দিয়েছিল। ইউরোপের কিছু সংবাদমাধ্যম অবশ্য জানিয়েছিল, দুই বছর খেলার জন্য মেসিকে দেওয়া আল হিলালের প্রস্তাবটি ছিল ১২০ কোটি ইউরো। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকাকে অবশ্য এমন অবিশ্বাস্য অঙ্কের পারিশ্রমিকেও দলে নিতে পারেনি আল হিলাল। মেসি যোগ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগের দল ইন্টার মায়ামিতে। তবে হিলালের চমক থামছেই না। মেসিকে নিতে না পারলেও তারা নিয়েছে ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারকে।

আল হিলালের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটিতে মোহামেডান
সৌজন্য ছবি

নেইমার বছরে ১০ কোটি ইউরো পাবেন আল হিলালে। এর পাশাপাশি আরও কিছু সুযোগ–সুবিধা আল হিলাল দিচ্ছে নেইমারকে। এর মধ্যে আছে ২৫ কক্ষের বাড়ি, বেশ কয়েকটি দামি গাড়ি এমনকি নেইমারের ছুটি কাটানোর খরচও। নেইমার আল হিলালে বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম এ মুহূর্তে। তবে অন্যরাও যথেষ্ট নামকরাই। এবারের দলবদলেই আল হিলাল নিয়েছে মরক্কান গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু, সেনেগালের কালিদু কুলিবালি, পর্তুগালের রুবেন নেভেস, সারগেস মিলানকোভিচ–সাভিচদের মতো খেলোয়াড়দের।

এই আল হিলালের বিপক্ষেই ৩৩ বছর আগে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশের মোহামেডান, যা এ প্রজন্মের অনেক ফুটবলপ্রেমীর কাছেই অজানা। এশিয়ান কাপ উইনার্স কাপের (এখন এ টুর্নামেন্ট আর হয় না। আশি–নব্বইয়ের দশকে এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপের সঙ্গে এএফসি আয়োজন করত এই ক্লাব টুর্নামেন্ট) দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ ছিল সেটি। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে হওয়ার কথা থাকলেও আল হিলালের অনুরোধে দুটি ম্যাচই সৌদি আরবের রিয়াদে খেলেছিলেন সাব্বির–কায়সার হামিদরা। ম্যাচ দুটি সে সময়ের মোহামেডান ফুটবলারদের কাছে রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা হয়েই আছে।

আল হিলালের আগেই আল ইত্তিফাকের বিপক্ষে খেলেছেন সাব্বির
ছবি: সংগৃহীত

সাব্বির স্মৃতি হাতড়ে সেই ম্যাচের অনেক কিছুই মনে করতে পারলেন, ‘আমরা সৌদি আরবে পৌঁছাতে বেশ দেরি করে ফেলেছিলাম। খুব সম্ভবত ম্যাচের আগে রিয়াদে পৌঁছাই। মোহামেডানের সেই দলে কোনো বিদেশি ফুটবলার ছিল না। ব্রাদার্স থেকে নূরুল হক মানিক আর আবাহনী থেকে মামুন জোয়ার্দারকে নিয়েছিলাম। প্রথম ম্যাচের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। খুব ক্লান্ত ছিল পুরো দল। যে মাঠে খেলা হয়েছিল, সেটিতেও সমস্যা হচ্ছিল। আমার মনে আছে, ম্যাচের মধ্যেই খেলোয়াড়দের পেশিতে টান পড়ছিল। ৭ গোলে হেরেছিলাম। তবে দ্বিতীয় ম্যাচটা আমরা খুব ভালো খেলেছিলাম।’

দ্বিতীয় ম্যাচে মোহামেডান জিতেও যেতে পারত বলে জানান সাব্বির, ‘সে ম্যাচে মামুন জোয়ার্দারের গোলে এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। পরে আমাদের বিপক্ষে একটা বাজে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। আল হিলাল ১–১ গোলে সমতা ফেরানোর পর আরেকটি গোল করে। পেনাল্টির সিদ্ধান্তটিই আমাদের হতোদ্যম করে ফেলে।’

মোহামেডানের সেই দল
ছবি: সংগৃহীত

সেই দুই ম্যাচে খেলেছিলেন ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবও। তাঁর মনে আছে সেই আল হিলাল ছিল খুবই শক্তিশালী, ‘প্রথম ম্যাচে আমরা ৭–০ গোল হেরে গিয়েছিলাম। কঠিন সেই ম্যাচের স্মৃতি মনে করতে চাই না। খুব বেশি মনেও নেই। ফুটবল মাঠের মন্দ স্মৃতি আমি খুব একটা মনে রাখি না। দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা ভালো খেলেছিলাম। প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েছিলাম। মামুন জোয়ার্দারের গোলে এগিয়েও যাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২–১ গোলে হারি।’

বর্তমান সময়ে আল হিলালকে নিয়ে আলোচনার মধ্যে ৩৩ বছর আগের সেই ম্যাচ দুটির কথা খুব মনে হয় সাব্বিরের, সৌদি আরবের আর যা–ই হোক, টাকার অভাব নেই। সেই টাকাই তারা খরচ করছে। ফুটবল নিয়ে তাদের পরিকল্পনাও চমৎকার। ওরা ওদের ফুটবলকে শক্তিশালী করতে চায়। বড় বড় খেলোয়াড়কে কিনছে, সৌদি সরকারও সহযোগিতা করছে। সবই কিন্তু নিজেদের ফুটবলের উন্নতির জন্য।

নকীব এখন
ছবি : প্রথম আলো

সৌদি আরবের আরেক ক্লাব আল ইত্তিফাকে কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছেন লিভারপুল কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড। এই আল ইত্তিফাকের সঙ্গেও মোহামেডানের একটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৮৮ সালে এশিয়ান ক্লাব কাপের সেমিফাইনাল রাউন্ডে নিজেদের গ্রুপে আল ইত্তিফাককে পেয়েছিল মোহামেডান। মালয়েশিয়ার কুয়ানতনে সেই ম্যাচে মোহামেডান হেরেছিল ৩–১ গোলে। সেবার ইরানের পার্সেপোলিস ক্লাবকে (তখন নাম ছিল পিরুজি) ২–১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল রাউন্ডে খেলেছিল মোহামেডান। গ্রুপের অন্য তিন ম্যাচে উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভকে ১–০ গোলে হারানোর পর কাতার আল সাদের সঙ্গে ২–২ গোলে ড্র করেছিল তারা। আরেক ম্যাচে মালয়েশিয়ার পাহাং ক্লাবের কাছে ২–১ গোলে হেরেছিল সাদাকালোরা। আল সাদের সঙ্গে ড্র আর এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভকে হারানোর পর পাহাংয়ের বিপক্ষে হার সে সময় কিছুটা অবাক করেছিল সবাইকে।