প্যারিসে তাহলে আর মন নেই মেসির
লঁরিয়ার বিপক্ষে কাল লিওনেল মেসি মাঠে ছিলেন ম্যাচের পুরো সময়। পিএসজির ৩–১ গোলে হারের এই ম্যাচে মেসি গোল পাননি, গোল করাতেও পারেননি। ১০ বার ড্রিবলিংয়ের চেষ্টা করে সফল হয়েছেন মাত্র ২ বার। মাত্র ৭১ শতাংশ সফল পাস দিয়েছেন (৩৭টি), যা মেসির মানের ফুটবলারের ক্ষেত্রে তাঁর গড়পড়তা পারফরম্যান্সেও সফল পাসের হার এর ওপরে থাকে।
বলও হারিয়েছেন ২২ বার। এমনকি প্রতিপক্ষের পোস্টেও কোনো শট রাখতে পারেননি মেসি। সব মিলিয়ে কাল ভুলে যাওয়ার মতোই এক ম্যাচ খেলেছেন লিওনেল মেসি। সংবাদমাধ্যম গোল ডট কমে এ ম্যাচের বিশ্লেষণে মেসিকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে—লিওনেল মেসি কি স্পেনের একটি নির্দিষ্ট শহর নিয়ে ভাবছেন? ইঙ্গিতটা পরিষ্কার। প্যারিসে তাহলে আর মন নেই মেসির!
আর্জেন্টাইন তারকার মন যেখানেই থাকুক, সে প্রসঙ্গ তোলার আগে কালকের ম্যাচটা নিয়ে আরেকটু কাটাছেঁড়া করা যাক। ম্যাচে খণ্ড খণ্ড কিছু ভালো মুহূর্ত উপহার দিয়েছিলেন মেসি। দর্শনীয় কিছু ‘নাটমেগ’ করেছেন এবং গতির বৈচিত্র্যও ছিল। কিন্তু ‘অফ দ্য বল মুভমেন্টে’ অর্থাৎ বল পিএসজির পায়ের না থাকা অবস্থায় মাঠে মেসিকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়েছে। সেভাবে ‘মুভ’ করেননি সাতবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার।
আক্রমণে উঠে প্রতিপক্ষের ওপর চাপও খুব কম তৈরি করতে পেরেছেন, যা মোটেও মেসিসুলভ নয়। সে কারণেই সম্ভবত দুয়ো শুনতে হয়েছে পিএসজি সমর্থকদের। হারের পর কিলিয়ান এমবাপ্পে ও মেসি মাঠ ছাড়ার সময় এই কটুকথা শুনতে হয়। তবে সেসব কথা সম্ভবত শুধুই মেসিকে তাক করে। পিএসজির হয়ে একমাত্র গোলটি যে এমবাপ্পের।
পিএসজিতে সমর্থকদের দুয়ো মেসির জন্য সাম্প্রতিক সময়ে চেনা দৃশ্য হয়ে উঠছে। বেশ কয়েকটি ম্যাচেই দুয়ো শুনেছেন। ফরাসি সংবাদমাধ্যমও মেসিকে ছেড়ে কথা বলেনি। লঁরিয়ার বিপক্ষে হারের পর পিএসজির খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণে মেসিকে দশে ৩ নম্বর দিয়েছে ‘লা পারিসিয়ান’ ও ‘লেকিপ’। আর পারিসিয়ান তো এক কাঠি সরেস।
মেসিকে নিয়ে ফরাসি সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, ‘এটা যেসব ম্যাচগুলোর একটি যেখানে আর্জেন্টাইন তারকাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং কিছু বাজে সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। লঁরিয়ার খেলোয়াড়দের বিপক্ষে মেসি শারীরিকভাবেও ভুগেছেন, তাকে ভালোভাবেই আটকেছে ওরা।’ এমবাপ্পেকে ৫.৫ নম্বর দিয়েছে ‘পারিসিয়ান’। তাঁর পারফরম্যান্স বিশ্লেষণে সংবাদমাধ্যমটি যা লিখেছে, তাতে মেসির বাজে খেলাটাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ‘আরেকবার ফরাসি এ খেলোয়াড় দলকে উজ্জীবিত করতে কিছু করার চেষ্টা করেছেন। তিনি নিশ্চয়ই খুব একাকিত্বে ভুগেছেন।’
মেসি ও এমবাপ্পে দুজনেই পিএসজির আক্রমণভাগের খেলোয়াড় এবং জুটি বেঁধে খেলেন। এখন আক্রমণভাগে এমবাপ্পে ‘একাকিত্বে’ ভোগার অর্থ হলো মেসি আশানুরূপ খেলতে পারেননি—ফরাসি সংবাদমাধ্যমের মতো স্পষ্ট করে বললে, পিএসজির আক্রমণভাগে মেসিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাই একাকিত্বে ভুগেছেন এমবাপ্পে।
পিএসজির কোচ ক্রিস্তোফ গালতিয়ের এই হারের পর সমালোচনা করেছেন খেলোয়াড়দের। মেসির মতো তারকাকে তাক করে কোচ সরাসরি কিছুই বলেননি। তবে ম্যাচ শেষে গালতিয়ের যেসব কথা বলেছেন, তাতে কেউ কেউ ইঙ্গিতটা মেসির প্রতি বলে ধরে নিতে পারেন, ‘মৌসুমের দ্বিতীয় ভাগে আমাদের বেশ কিছু খেলোয়াড় নিজের মানের নিচের পারফর্ম করছে। আমাদের খেলোয়াড়দের ঘুরে দাঁড়াতে হবে...এটা খুব হতাশার।’
গোল ডট কমের সেই প্রশ্নে ফেরা যাক। ইউরোপের ফুটবল বাজারে গুঞ্জন চলছে পিএসজিতে এটাই শেষ মৌসুম মেসির। গত বিশ্বকাপের পরপরই মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের কথা ছিল পিএসজির। কিন্তু নানা কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। সংবাদমাধ্যম এর আগে একাধিকবার জানিয়েছে, পিএসজির সঙ্গে মেসির সম্পর্কটা এ মৌসুম শেষেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তাঁর সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ গন্তব্য হিসেবে অনেকেই সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া ফুটবলের পাশাপাশি লা লিগাও দেখছেন।
কিছুদিন আগেই ১৫টি স্যুটকেস নিয়ে বার্সেলোনায় গিয়েছিলেন মেসি। গুঞ্জন আছে, বার্সেলোনায় ফিরতে চান আর্জেন্টাইন তারকা আর বার্সাও নাকি তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ইএসপিএনের সংবাদকর্মী মার্টিন আরেভালো এর আগে জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে বেতন কমিয়ে হলেও নাকি বার্সায় ফিরতে চান মেসি। মনটা কি তাহলে তাঁর স্পেনের এই শহরেই পড়ে আছে? আর সে জন্যই কি প্যারিসের মাঠে নেমে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন?
সময় হলেই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।